ফকির লালন শাঁই
ফকির লালন শাঁহ (Fakir Lalon Shah) সে দিন ভোর বেলা মওলানা মলম ফজরের নামাজ পড়ে কালীগঙ্গা নদীর দিকে হাওয়া খেতে আসলেন, হটাতই দেখতে পেলেন এক অচেনা সংজ্ঞাহীন যুবক অধঃজলমগ্ন অবস্তায় পড়ে আছে, ছেলেটির মুখে ও শরীরে বসন্ত রোগের দাগ বিদ্যমান। তিনি কাছে গিয়ে দেখলেন ছেলেটি বেঁচে আছে, খুব ধীরলয়ে চলছে শ্বাস-প্রশ্বাস। নিঃসন্তান হাফেজ মলমের বুকের ভেতর হু হু করে উঠল, এ কোন অচেনা যুবক নয়; খোদা যেন তাঁর সন্তানকে ভাসিয়ে এনেছেন তাঁর কাছে। মলম তৎক্ষণাৎ বাড়ি ফিরলেন এবং তাঁর অপর তিন ভাইকে সাথে নিয়ে আসলেন।
এবার চার ভাইয়ে ধরাধরি করে অচেতন যুবককে নিজের বাড়িতে আনলেন। মলম ও মতিজান দিন রাত পরম যত্নে সেবা করতে লাগলেন। দিনে দিনে অচেনা যুবকটির মুখে জিবনের আলো ফিরে এলো। মতিজান জিজ্ঞাসা করলো – বাবা তোমার নাম কি ?
---- ফকির লালন।
-
সাঁইর লীলা বুঝবি ক্ষ্যাপা কেমন করে
লীলার যার নাইরে সীমা কোন সময় কোন রুপ সে ধরে
লীলার যার নাইরে সীমা কোন সময় কোন রুপ সে ধরে।
সাঁইর লীলা বুঝবি ক্ষ্যাপা কেমন করে।। -
কোথায় হে দয়াল কান্ডারী
ভবতরঙ্গে এসে কিনারায় লাগাও তরী
কোথায় হে দয়াল কান্ডারী
ভবতরঙ্গে এসে কিনারায় লাগাও তরী।। -
বাউলের আঞ্চলিক বৃত্ত ও পদকর্তা
বাংলার বাউলদের আঞ্চলিক সীমারেখা হল বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বরিশাল, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম ইত্যাদি অব্জল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, বাকুড়া, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, চব্বিশপরগণা ইত্যাদি।
-
বাউল - সাইমন জাকারিয়া
বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ সৃজনশীল সাধকদের মধ্যে বাউল সম্প্রদায় অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। এই সম্প্রদায় মূলত দেহ-সাধনা করেন এবং গানের মাধ্যমেই সেই দেহ-সাধনার কথা প্রকাশ ও প্রচার করেন। বাউলদের রচিত গানের ভাবের গভীরতা, সুরের মাধুর্য, বাণীর সার্বজনীন মানবিক আবেদন বিশ্ববাসীকে মহামিলনের মন্ত্রে আহ্বান করে।
-
তারে কি আর ভুলতে পারি
মন দিয়েছি যে চরণে
তারে কি আর ভুলতে পারি
মন দিয়েছি যে চরণে। -
মনের বিয়োগ জানে তারা
আশেকে উন্মত্ত যারা
আশেকে উন্মত্ত যারা
তাদের মনের বিয়োগ
জানে তারা।। -
সোনার মানুষ ভাসছে রসে
যে জেনেছে রসপন্থি সে
সোনার মানুষ ভাসছে রসে
যে জেনেছে রসপন্থি
সে দেখিতে পায় অনায়াসে।। -
কেন ডুবলি না মন গুরুর চরণে
এসে কাল শমন বাঁধবে কোন দিনে
কেন ডুবলি না মন গুরুর চরণে
এসে কাল শমন বাঁধবে কোন দিনে।। -
বলো স্বরূপ কোথায় আমার সাধের প্যারি
যার জন্য হয়েছি রে দণ্ডধারী
বলো স্বরূপ কোথায় আমার সাধের প্যারি।
যার জন্য হয়েছি রে দণ্ডধারী।। -
এমন দিন কি হবে রে আর
খোদা সেই করে গেল রসুল রূপে অবতার
খোদা সেই করে গেল রসুল রূপে অবতার
এমন দিন কি হবে রে আর।। -
দয়াল নিতাই কারো ফেলে যাবে না
ধরো চরণ ছেড়ো না
দয়াল নিতাই কারো ফেলে যাবে না
ধরো চরণ ছেড়ো না।। -
আর কি বসবো এমন
সাধুর সাধবাজারে
আর কি বসবো এমন সাধুর সাধবাজারে।
না জানি কোন সময় কী দশা হয় আমারে ।। -
সমুদ্রের কিনারে থেকে
ওরে বিধি হায়রে বিধি
সমুদ্রের কিনারে থেকে
জল বিনে চাতকী ম’লো। -
মনের নেংটি এঁটে করো রে ফকিরী
আমানতের ঘরে মনা হয় না যেনো চুরি
মনের নেংটি এঁটে করো রে ফকিরী
আমানতের ঘরে মনা হয় না যেনো চুরি।। -
আমি কোন সাধনে তারে পাই
আমার জীবনের জীবন সাঁই
আমি কোন সাধনে তারে পাই।
আমার জীবনের জীবন সাঁই।। -
সাধু হুমায়ুন ফকির
হুমায়ন কবীর (জন্মঃ ৩রা মে ১৯৫৮ মৃত্যুঃ ২৬শে মার্চ ২০১৭ইং) নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার উত্তর মির্জানগর খানাবাড়ী গ্রামে জন্মেছিলেন হুমায়ন কবীর ওরফে ফকীর হুমায়ন সাধু। জন্মস্থানে নিজের নামে আখড়া বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে লালনভক্তদের নিয়ে হতো সাধুসঙ্গ। সিংগায় ফুঁ দেওয়ার শিরোমনি বলা হতো হুমায়ুন সাধুকে। একটানা ৮ মিনিট (মতান্তরে ২৫ মিনিট!) ফুঁ দিতেন তিনি।
-
লালন সাঁই সকল ধর্মের - লোকমান হোসেন মিয়া
লালন সাঁই সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানবতাবাদীর পথে ডাক দিয়ে ছিলেন।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া বলেছেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের সৃষ্টি গানে গভীর জ্ঞান আমাকে সত্যিকার অর্থে বিমোহীত করেছে। কারো কারো মতে নিরক্ষর হয়েও তিনি জ্ঞানভান্ডারে এক অনাবিস্কার পৃথিবী। তাঁকে চিনতে অনেক দেশ বহুভাবে উপস্থাপন করেছেন। আধ্যাত্মিক সিদ্ধ পুরুষ হিসেবে সত্য ও জাতহীন সমাজ গড়তে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। লালন সাঁই এক বিশ্ব মানব। লালন সাঁই ছিলেন বাঙালি জাতিসত্বা বোধের প্রবাদ পুরুষ।
-
প্রত্যেক মানুষকে গুরুর কাছে দীক্ষা নিতে হবে
প্রত্যেক মানুষকে গুরুর কাছে দীক্ষা নিতে হবে। আর গুরুর আশ্রয়ের সাহায্যে বায়েত গ্রহণ বা দিক্ষা নেওয়ার মাধ্যমেই কেবল মানুষ আত্মতত্ব বা আধ্যাত্মিক শিক্ষা পেতে পারেন। এর কারনে একজন ভক্ত নিজের মনকে সকল অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতে পারেন। ভক্তের মন নিয়ন্ত্রিত হলে সে একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে আত্মশুদ্ধি লাভ করেন, আর যারা কোন গুরুর কাছে দিক্ষা নেননি তারা আজও প্রকৃত মানুষের পর্যায়ে পরেনি, তাদেরকে দীক্ষা(গুরুপাঠ) নিতে হবে। এটাই আমাদের লালন দর্শন। লালন শাহ এঁর আদর্শ ধারণ করা প্রায় ১০০ বছর বয়সী নাম না প্রকাশ করতে ইচ্ছুক এক ভক্ত এ কথা জানালেন।
-
লালন সাঁইয়ের বাউল মতবাদ আজ বিশ্বে সার্বজনীন হয়ে উঠেছে
স্মরণোৎসবের ২য় দিনের আলোচনায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি বলেছেন, আমার প্রথম আসা এই বাউল আখড়াবাড়িতে। এসেই বুঝলাম এই মহাজ্ঞানী লালনের সৃষ্টির কৃর্তি আজ আর কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ীর মধ্যে আবদ্ধ নেই। লালন সাঁইয়ের সৃষ্টি বিশ্বে সর্বাজনীন হয়ে উঠেছে। মানব সেবার ব্রত নিয়ে অসংখ্য গান লিখে গেছেন। তাঁর এই অমর সৃষ্টি সঙ্গীত কোন ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
-
ফকির লালন সাঁইজির জীবন ও দর্শন
Life and philosophy of Fakir Lalon Saijir
লালন কে? এই প্রশ্নটি অতি পুরাতন কিন্তু আজও চলমান। ফকির লালন সাঁই বিশ্বের মানুষের কাছে রহস্য ঘেরা এক জ্ঞানের ভাণ্ডার। তিনি সবার কাছে অবিসংবাদিত কিংবদন্তি প্রাণপুরুষ। তাঁর বাণী আমাদের মানবতা এবং সংস্কৃতিকে করেছে শ্রীবৃদ্ধি ও বিত্তশালী। সাঁইজির জন্ম রহস্য, গোত্র পরিচয় বা জাত-পাতের ব্যাপারে নিজেকে সব সময় রহস্য ঘেরা আবর্তে আবদ্ধ করে রেখেছেন।
পাতা 6 এর 17