ফকির লালন শাঁই
ফকির লালন শাঁহ (Fakir Lalon Shah) সে দিন ভোর বেলা মওলানা মলম ফজরের নামাজ পড়ে কালীগঙ্গা নদীর দিকে হাওয়া খেতে আসলেন, হটাতই দেখতে পেলেন এক অচেনা সংজ্ঞাহীন যুবক অধঃজলমগ্ন অবস্তায় পড়ে আছে, ছেলেটির মুখে ও শরীরে বসন্ত রোগের দাগ বিদ্যমান। তিনি কাছে গিয়ে দেখলেন ছেলেটি বেঁচে আছে, খুব ধীরলয়ে চলছে শ্বাস-প্রশ্বাস। নিঃসন্তান হাফেজ মলমের বুকের ভেতর হু হু করে উঠল, এ কোন অচেনা যুবক নয়; খোদা যেন তাঁর সন্তানকে ভাসিয়ে এনেছেন তাঁর কাছে। মলম তৎক্ষণাৎ বাড়ি ফিরলেন এবং তাঁর অপর তিন ভাইকে সাথে নিয়ে আসলেন।
এবার চার ভাইয়ে ধরাধরি করে অচেতন যুবককে নিজের বাড়িতে আনলেন। মলম ও মতিজান দিন রাত পরম যত্নে সেবা করতে লাগলেন। দিনে দিনে অচেনা যুবকটির মুখে জিবনের আলো ফিরে এলো। মতিজান জিজ্ঞাসা করলো – বাবা তোমার নাম কি ?
---- ফকির লালন।
-
অমাবস্যার দিনে চন্দ্র যেয়ে থাকে কোন শহরে
প্রতিপদে হয় সে উদয় দৃষ্টি হয় না কেন তারে
অমাবস্যার দিনে চন্দ্র যেয়ে থাকে কোন শহরে।
প্রতিপদে হয় সে উদয় দৃষ্টি হয় না কেন তারে।। -
অন্ধকারে রাগের পরে ছিল যখন সাঁই
কীসের পরে ভেসেছিল কে দিল আশ্রয়
অন্ধকারে রাগের পরে ছিল যখন সাঁই
কীসের পরে ভেসেছিল কে দিল আশ্রয়।। -
অন্তিমকালের কালে ও কি হয় না জানি
কী মায়াঘোরে কাটালি হারে দিনমণি
অন্তিমকালের কালে ও কি হয় না জানি
কী মায়াঘোরে কাটালি হারে দিনমণি।। -
অন্তরে যার সদাই সহজরূপ জাগে
সে নাম বলুক না বলুক মুখে
অন্তরে যার সদাই সহজরূপ জাগে।
সে নাম বলুক না বলুক মুখে।। -
অবোধ মন রে তোমার হলো না দিশে
এবার মানুষের করণ হবে কিসে
অবোধ মন রে তোমার হলো না দিশে।
এবার মানুষের করণ হবে কিসে।। -
অবোধ মন তোরে আর কি বলি
পেয়ে ধন সে ধন সব হারালি
অবোধ মন তোরে আর কি বলি।
পেয়ে ধন সে ধন সব হারালি।। -
অপারের কান্ডারি নবিজী আমার
ভজনসাধন বৃথা নবী না চিনে
অপারের কান্ডারি নবিজী আমার
ভজনসাধন বৃথা নবী না চিনে। -
অনেক ভাগ্যের ফলে সে চাঁদ কেউ দেখিতে পায়
অমাবস্যা নাই সে চাঁদে দ্বিদলে আর কিরণ উদয়
অনেক ভাগ্যের ফলে সে চাঁদ কেউ দেখিতে পায়।
অমাবস্যা নাই সে চাঁদে দ্বিদলে আর কিরণ উদয়।। -
অনুরাগের ঘরে মার গাঁ চাবি
যদি রূপনগরে যাবি
অনুরাগের ঘরে মার গাঁ চাবি
যদি রূপনগরে যাবি।। -
অনুরাগ নইলে কি সাধন হয়
সে তো শুধু মুখের কথা নয়
অনুরাগ নইলে কি সাধন হয়।
সে তো শুধু মুখের কথা নয়।। -
অধরাকে ধরতে পারি কই গো তাঁরে তার
আত্নারুপে চলে ফেরে মানুষ মারা কলের পর
অধরাকে ধরতে পারি কই গো তাঁরে তার
আত্নারুপে চলে ফেরে মানুষ মারা কলের পর।। -
অজান খবর না জানিলে কিসের ফকিরি
যে নূরে নূর নবি আমার তাহে আরশ বাড়ি
যে নূরে নূর নবি আমার
তাহে আরশ বাড়ি৷৷ -
লালন ফকিরের সাধনা - মুচকুন্দ দুবে
এক শতাব্দীরও বেশি সময় জূড়ে বিস্তৃত লালন ফকীরের জীবন। এ সময়সীমার মধ্যে তিনি রচনা করেছেন, গেয়ে বেড়িয়েছেন হাজার দশেক গান। গানগুলোর সাহিত্যের এমন এক সম্ভারে পরিণত হয়েছে, সারা বিশ্বের লোকোজ এবং মরমী সাহিত্যর ইতিহাসে যার কোনো নজির নেই।
-
আক্রান্ত একতারার কান্না লালন বিরোধী আন্দোলন
সমকাল ও উত্তরকালে লালন সম্পর্কে ইতি ও নেতিবাচক দুই ধরনের সামাজিক প্রতিক্রিয়াই প্রবল হয়েছিল। যুগপৎ নন্দিত ও নিন্দিত হয়েছিলেন তিনি। লৌকিক বাংলার এই অসাধারন মনীষী-ব্যক্তিত্ব তাঁর সমকালেই সুধীসমাজের মনোযোগ ও শ্রদ্ধা আকর্ষণে সক্ষম হন। তাঁর প্রতি ঠাকুরবাড়ির একাধিক সদস্যের সানুরাগ কৌতূহল তাঁর পরিচয়ের ভূগোলকে আরো প্রসারিত করে। লালনের মৃত্যুর পর তাঁর সম্পর্কে আগ্রহ অনুরাগী ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
-
লালনসাঁই
হরিনাথ মজুমদারের বাড়িতে তখনও আগুন লাগানো হয়নি। তাঁর বাড়ি ঘিরে বসে আছে ছয় লাঠিয়াল। তাদের একজনের হাতে দাউ দাউ করে জ্বলছে মশাল। এক্ষুনি বুঝি ছারখার হবে সব!
-
মানবধর্মের গানই বেঁধেছিলেন লালন
তিনি সম্রাট। ফকির সম্রাট। জীবদ্দশায় তাঁকে ঘিরে বিতর্ক ছিল, টানা-হ্যাঁচড়া ছিল দুই ধর্মের সর্দারদের মধ্যে। তিনি কোনও দিকে না ঝুঁকে মানব ধর্মের গান গেয়ে গিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর পরেও তাঁকে নিয়ে টানাটানি চলছে। এখন আর শুধু ধর্মীয় মৌলবাদীরা নয়, তাঁকে নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে রাজনীতির কারবারীরাও। তাঁকে পণ্য করে বিশ্ববাজারে নেমে পড়েছে সাংস্কৃতিক মাফিয়ারা।
-
দ্বিতলে চাঁদ
অনেক ভাগ্যের ফলে সে চাঁদ কেউ দেখিতে পায়
অনেক ভাগ্যের ফলে
সে চাঁদ কেউ দেখিতে পায়। -
মওলা বলে ডাক রসনা
গেল দিন ছাড় বিষয় বাসনা
মওলা বলে ডাক রসনা
গেল দিন ছাড় বিষয় বাসনা।।
-
মন তুই করলি একি ইতরপনা
দুগ্ধেতে যেমন রে তোর মিশিলো চোনা
মন তুই করলি একি ইতরপনা
দুগ্ধেতে যেমন রে তোর মিশিলো চোনা।।
শুদ্ধরাগে থাকতে যদি
হাতে পেতে অটলনিধি।
-
কই হল মোর মাছ ধরা
চিরদিন ধাপ ঠেলিয়ে হলাম আমি বলসারা
চিরদিন ধাপ ঠেলিয়ে
হলাম আমি বলসারা।।
পাতা 10 এর 17