লালনোত্তর যে সব মরমি সাধক শিল্পী বাউলসম্রাট লালনের গান জনপ্রিয় করেন তাদের অন্যতম আলমডাঙ্গার ফরিদপুরের মরমি বাউল সাধক ও গীতিকার বেহাল শাহ।
লালনবেত্তাদের কেউ কেউ বলেন, লালনের গান এখন যেভাবে সাধকদের মাঝে গাওয়ার ঢং বা ঠাট , সুরের যে বৈশিষ্ট চালু আছে; এটা লালনোত্তর কয়েকজন মরমি সুর সাধকের অবদান । এঁরা হলেন – অমূল্য শাহ, শাহ কলিমউদ্দিন ওরফে কালু শাহ, বেহাল শাহ, মহিন শাহ, খোদা বক্স শাহ (জাঁহাপুর) ও মকছেদ আলী সাঁই। এদের মধ্যে বেহাল শাহর প্রভাব ব্যাপক বলে স্বীকার করেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার নাগদাহ বলেশ্বরপুর গ্রামে ১৩০৭ সনের ২৫ চৈত্রে জন্ম বেহাল শাহ’র। বাবা-মায়ের নাম যথাক্রমে বাহাদুর শাহ ও ময়না নেছা বিবি। প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া। পৈতৃক নিবাস পোড়াদহ রেলওয়ে স্টেশনের নিকটবর্তী খর্দ আইলচারা গ্রামে। প্রথম জীবনে লেটো দলে ছিলেন বলে জানা যায়। পরে দেলবার শাহ ঘরানার ছমির চাঁদের কাছে দীক্ষা নেন।
অমূল্য শাহ, শুকচাঁদ, খোদা বক্স প্রমুখের কাছে লালনগীতি শিখে এ গানের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। এমনকি লালনগীতির বর্তমান গায়কী ধারার অন্যতম প্রবর্তক তিনি। বেহাল শাহের দ্বিতীয় স্ত্রী দৌলতুন্নেছা। তাদের রয়েছে এক কন্যাসন্তান। নাম আয়েশা খাতুন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ৭শ ফকিরের গ্রামখ্যাত ফরিদপুরে অতিবাহিত করেন। তিনি মঞ্চে আপেক্ষিক ও উদ্ভব প্রসঙ্গ নিয়ে গান বাঁধতে পারতেন বলে জানা যায়। তাঁর লেখা গানের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। তবে অনেক বাউল দাবি করেন তার রচিত গানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৯ শ। এখনও বেহাল শাহ’র দরাজ কন্ঠের মরমি গীতির অকুন্ঠ প্রশংসা করেন।
সমঝদারদের অনেকে দাবি করেন – সমসাময়িক কিংবা আজোবধি বেহাল শাহ’র মত দরাজ ও পরিশীলিত কন্ঠ আর শোনা যায়নি। ১৩৮৮ সনের ১৮ ভাদ্র (৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৮১) এই মরমি সাধক শিল্পী ও গীতিকার-সুর সাধকের তিরোধান ঘটে। কোরান ও হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ, বেদ-বেদান্ত-উপনিষদ এবং মিথের উপর তার অসাধারণ দখল ছিল। তাকে সর্ব শাস্ত্রভূত জ্ঞানী বলা হত।
বেহাল শাহ’র গুণগ্রাহী অনেক শিষ্যদের অন্যতম ছিলেন প্রয়াত মাওলাবক্স পাগল। যিনি গানে এবং প্রজ্ঞায় অসাধরণ ছিলেন । ২০১২ সালের ১৬ আগস্ট মাওলা বক্স প্রয়াত হন। এছাড়াও ঝড়ু ক্ষ্যাপা, প্রয়াত দীদার শাহ, ফরিদপুরের রইচ উদ্দীন শাহ বেহাল শাহ’র অন্যতম শিষ্য। আলমডাঙ্গার ফরিদপুর গ্রামে অবস্থিত এই গুণী ব্যক্তির মাজার দীর্ঘদিন অরক্ষিত রয়েছে।
তথ্যঃ অ্যান্টনি আতিক, সাম্প্রতিকী.কম