বাউল
বাউল (Baul) একটি বিশেষ লোকাচার ও ধর্মমত। এই মতের সৃষ্টি হয়েছে বাংলার মাটিতে। বাউলকূল শিরোমণি লালন সাঁইয়ের গানের মধ্য দিয়ে বাউল মত পরিচতি লাভ করে। বাউল গান যেমন জীবন দর্শনে সম্পৃক্ত তেমনি সুর সমৃদ্ধ। বাউলদের সাদামাটা কৃচ্ছসাধনার জীবন আর একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানোই তাদের অভ্যাস। ২০০৫ সালে ইউনেস্কো বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে বাউল গানকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষনা করে।
বাউল (Baul) শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে মতান্তর রয়েছে। কেউ বলেন 'বাতুল' থেকে 'বাউল' হয়েছে, কারো মতে 'বজ্রী' থেকে কিংবা 'বজ্রকুল' থেকে বাউল শব্দটি এসেছে। কেউ কেউ বলেন 'আউল' শব্দ থেকে 'বাউল হয়েছে। ইতিহাসবিদদের মতে, সতেরো শতকে বাংলাদেশে বাউল মতের উদ্ভব হয়। এ মতের প্রবর্তক হলেন আউল চাঁদ ও মাধববিবি। বীরভদ্র নামে এক বৈষ্ণব মহাজন সেই সময়ে একে জনপ্রিয় করে তোলেন।
বাংলাদেশের কুষ্টিয়া-পাবনা এলাকা থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম-বোলপুর-জয়দেবকেন্দুলি পর্যন্ত বাউলদের বিস্তৃতি। বাউলদের মধ্যে গৃহী ও সন্ন্যাসী দুই প্রকারই রয়েছে। বাউলরা তাদের গুরুর আখড়ায় সাধনা করে। প্রতি বৎসর পৌষ সংক্রান্তির দিন বীরভূমের জয়দেব-কেন্দুলিতে বাউলদের একটি মেলা শুরু হয়, যা "জয়দেব বাউলমেলা" নামে বিখ্যাত।
-
আমার ঘরের চাবি পরের হাতে
কেমনে খুলিয়া সে ধন দেখবো চক্ষেতে
আমার ঘরের চাবি পরেরই হাতে।
কেমনে খুলিয়া সে ধন দেখবো চক্ষেতে।। -
লালন সাঁইজীর তীর্থ যাত্রা
বাংলা ১২৮৭ সন মোতাবেক ইংরেজি ১৮৮০ সালে ফাল্গুনের দোল পূর্ণিমায় ছেউড়িয়ায় ফকির লালন সাঁইয়ের আঁখরা বাড়ীতে বাৎসরিক সাধুসেবা ও স্মরণ উৎসবে তাঁর সকল শিষ্য, ভক্ত ও সাধুগুরু ফকির দরবেশ যোগদান করেন। অনুষ্ঠান শেষে কিছু শিষ্য ভক্ত রয়ে গেলেন। তাঁরা পরের দিন ফকির লালন সাঁইয়ের সাথে দেখা করে তাঁকে তাঁদের মনের বাসনা জানালেন- “সাঁইজী, আমরা আপনার সাথে তীর্থ ভ্রমণে যেতে চাই।” এই প্রস্তাব শুনে শিষ্য ভক্তদের বললেন- “তোমাদের মনের বাসনা পূরণের চেষ্টা করবো।”
-
ফকিরি কি গাছের গোটা
ঢেঁকি যদি স্বর্গে যাইত বারা বানত তবে কেটা
ফকিরি কি গাছের গোটা
ঢেঁকি যদি স্বর্গে যাইত
বারা বানত তবে কেটা।। -
পাগল পাগল সবাই পাগল
তবে কেন পাগল খোটা
পাগল পাগল সবাই পাগল
তবে কেন পাগল খোটা।। -
শিখিয়ে দে তুই আমারে কেমন করে তরে ডাকি
এক ডাকে ফুরাইয়া দেরে জনম ভরের ডাকাডাকি
শিখাইয়া দে তুই আমারে
কেমন করে তোরে ডাকি।। -
দেখ না মন ঝকমারি এই দুনিয়াদারি
পরিয়ে কোপনি ধব্জা মজা উড়ালো ফকিরি
দেখ না মন ঝাকমারি এই দুনিয়াদারি।
পরিয়ে কোপনি ধব্জা মজা উড়ালো ফকিরি।। -
পাখি কখন জানি উড়ে যায়
একটা বদ হাওয়া লেগে খাঁচায়
পাখি কখন জানি উড়ে যায়
একটা বদ হাওয়া লেগে খাঁচায়।। -
মন বিবাগী বাগ মানে না রে
যাতে অপমৃত্যু হবে তাই সদায় করে
মন বিবাগী বাগ মানে না রে।
যাতে অপমৃত্যু হবে তাই সদায় করে।। -
রাখিলেন সাই কূপজল করে আন্ধেলা পুকুরে
কবে হবে সজল বর্ষা চেয়ে আছি সেই ভরসা
রাখিলেন সাঁই কূপজল করে
আন্ধেলা পুকুরে।। -
না জানি ভাব কেমন ধারা
না জানিয়ে পাড়ি ধরে মাঝ-দরিয়ায় ডুবল ভারা
না জানি ভাব কেমন ধারা।
না জানিয়ে পাড়ি ধরে মাঝ-দরিয়ায় ডুবল ভারা।। -
শুভ সাধু সঙ্গ লয়ে সঙ্গ পঙ্গ
বনবিহঙ্গ প্রসন্ন করিলে
শুভ সাধু সঙ্গ লয়ে সঙ্গ পঙ্গ
বনবিহঙ্গ প্রসন্ন করিলে।
জলে ফুটেছে কমল হলো সরোবর উজ্জ্বল
নবপল্লব তরুলতা ছায়া সুশীতলে।। -
কি ভাব নিমাই তোর অন্তরে
মা বলিয়ে চোখের দেখা
কি ভাব নিমাই তোর অন্তরে
মা বলিয়ে চোখের দেখা -
আয় গো যাই নবীর দ্বীনে
দ্বীনের ডঙ্কা বাজে শহর মক্কা মদীনে
আয় গো যাই নবীর দ্বীনে
দ্বীনের ডঙ্কা বাজে
শহর মক্কা মদীনে॥ -
কী নামে ডাকিলে তারে - বাগেন্দ্রিয় না সম্ভবে
আপনার আপনি ফানা হলে
আপনার আপনি ফানা হলে
সে ভেদ জানা যাবে।
কোন/কী নামে ডাকিলে তারে
হৃদাকাশে উদয় হবে।। -
ধন্য মায়ের নিমাই ছেলে
এমন বয়সে নিমাই
ধন্য মায়ের নিমাই ছেলে
এমন বয়সে নিমাই
ঘর ছেড়ে ফকিরী নিলে॥ -
আয় দেখে যা নতুন ভাব এনে গোরা
মুড়িয়ে মাথা গলে কাঁথা কটিতে কৌপিন পরা
আয় দেখে যা নতুন ভাব এনেছে গোরা
মুড়িয়ে মাথা গলে কাঁথা কটিতে কৌপিন পরা॥ -
বলরে নিমাই বল আমারে
রাধা বলে আজভাবি আজ
বলরে নিমাই বল আমারে
রাধা বলে আজভাবি আজ
কাঁদলি কেন ঘুমের ঘোরে॥ -
হীরা মানিক জহুরা কোটিময়
সে চাঁদ লক্ষ যোজন ফাঁকে রয়
হীরা মানিক জহুরা কোটিময়
সে চাঁদ লক্ষ যোজন ফাঁকে রয় -
সাঁই আমার কখন খেলে কোন খেলা
জীবের কি সাধ্য আছে গুণে পড়ে তাই বলা
সাঁই আমার কখন খেলে কোন খেলা।
জীবের কি সাধ্য আছে
গুণে পড়ে তাই বলা।। -
সূর্যের সুসঙ্গে কমল
জানিসনে মন হলি কেবল কামাবেশে মাতোয়ারা
সূর্যের সুসঙ্গে কমল কেমনে হয় প্রেমযুগল
জানিসনে মন হলি কেবল কামাবেশে মাতোয়ারা
নীচে পদ্মে চরকবানে
যুগল মিলন চাঁদ চকোরা॥
পাতা 4 এর 22