মনোহর শাহ্ এর বাড়ী কুষ্টিয়া জেলার লাহিনী পাড়ায়, তখন তাঁর বয়স সাত কি আট, নিজের পাড়ার এক পাঠশালায় পড়তে যেতেন। পাঠশালা বলতে খড়ের একখানা ঘর, বাঁশের বেঞ্চিতে ৭/৮ জনের ক্লাস।
তিন চার ক্লাস পযন্ত পড়ে আর পড়াশুনা হয়নি। মনোহর শাহের বাবা ধুয়া গান গাইতেন। এক ঝড়ের রাতে মনোহর তাঁর ভাইকে নিয়ে পাসের বাগানে আম কুড়াতে যায়, অনেকক্ষণ না পেয়ে তাঁর বাবা তাদের খুঁজতে গিয়ে গাছের চাপায় মারা যায়। আরো ৪/৫ বছর পর তাঁর মা মারা যান।
বড় ভাই মোতালেব খাঁ কোনমতে ছয় ভাইয়ের সংসার চালান। মনোহরের বয়স যখন ২২ বছর তখন পাবনার আনোয়ার শাহ্ এবং কুষ্টিয়ার দমদমার আরেক বাউল তোয়াক্কেল শাহ্ তাঁদের গ্রামে পালাগান করতে আসে। তোয়াক্কেল শাহের গানে মনোহর ভেসে গেলেন, খুঁজে পেলেন এক অচিন দেশ, সেই থেকে শুরু, এখন বয়স ৮০ বছর অধিক। তোয়াক্কেল শাহ্ গাইতেন আর তরুণ শিষ্য মনোহর বসে বসে জোয়াড়ি বাজাতেন।
কোন কোন আসরে মনোহর তোয়াক্কেল শাহের সাথে গান ধরতেন-
খাঁচার ভিতর অচিন পাখি,
কমনে আসে যায়।
এইভাবেই গানে গানে ৪৫ বছর কেটে গেলো তাঁর। এখনো সমান তালে গেয়ে চলেছেন “লালনের গান”। বয়সের কারণে চোখের জ্যোতি কমে গেছে, ধীর পায়ে হাঁটেন তবুও গৌর বর্ণের এই বৃদ্ধ বাউল গানের তালে নিজের অজান্তেই লাফাতে থাকেন। এক সময়ের জোতদার পরিবারের মনোহর শাহের পেশা বলতে শুধুই লালনের গান।