বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

লালন দর্শনঃ অমূল্য নিধির বর্তমান ও নিহেতু প্রেম-সাধনা - শশী হক
লালন দর্শনঃ অমূল্য নিধির বর্তমান ও নিহেতু প্রেম-সাধনা - শশী হক

অমূল্য নিধি সেই মহাসুখ যা অন্তরে পেয়ে পূর্ণ হতে চায় মানুষ, এক পরম জ্ঞান বা আদ্যশক্তি যার উন্মেষে ভাঙ্গে অচলায়তন, ভবকারাগার। অমুল্য নিধি অকৈতবও বটে। কারণ মিথ্যা ছলনা বা কপটতা এর লক্ষণ নয়। এই নিধি অটল, প্রাপ্তির আনন্দের পরও ফুরায় না। এই ধন সাঁই নিরঞ্জন।

কেমনে পাবো তারে, এই অনুসন্ধানই মানুষের নিরন্তর প্রেষণা। তাই আদিম পৌরাণিক যুগেও সর্বপ্রাণবাদের (Animism) মতো ধারনার জন্ম সম্ভব হয়, যেখানে মানুষ সর্বশক্তিমত্তাকে আপনকার আধ্যাত্মিক শক্তি বলেই জেনেছে, এবং প্রাণময় জগত-রূপেই ক্রিয়াশীল দেখেছে তাকে, অন্যত্র নয়। অথচ পরবর্তী ধর্মযুগে এই শক্তিকেই দেবতা ও ঈশ্বরে অর্পণের পর, আজকের বিজ্ঞান যুগে এসে, এই মানুষই হয়ে পড়লো আধ্যাত্মিক ক্ষমতাশূন্য এক মূঢ় জীব, নির্গুন জ্ঞানী। বিজ্ঞানের জগতে কোন অমুল্য নিধি নাই। কার্যকারণের কাঁচে তার দৃষ্টি বাঁধা, ঘোলাটে ও অসম্পূর্ন। বিশ্বজয়ী বিজ্ঞান মানুষের মন জয়ে তাই বরাবরই ব্যর্থ, কেননা সেই অকৈতব নিধির অবিরাম অন্বেষণ ছাড়া মানুষ-মনের গভীরতম প্রদেশে আর কোন ধিয়ান থাকতে পারে না।

কোথায় এই অধরার বাস? তাঁর রূপ কি স্বভাব কি প্রকৃতি কি- এসব জিজ্ঞাসার উত্তর জগত-প্রবাহে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে মানুষের ঈশ্বর হয় অদৃশ্য, নিরাকার- জগত হয় মায়া, পরকাল নিত্য হয়, সত্য হয়। যাবতীয় কর্মস্পৃহা ও জ্ঞান যেন জগত-মুক্তির আকাঙ্খায় অস্থির, এক অজানা অন্ধকার ঈশ্বরের দিকে ক্রমাগত ধেয়ে চলা।

ঠিক এমনি এক ধোঁয়াশা অবস্থার প্রেক্ষিত থেকে ফকির লালন খোঁজে আদিতত্ত্বের বেনা। আর কোথাও নয়, যা খুঁজছে মানুষ সেই অমুল্য নিধি পাওয়া যাবে কেবল বর্তমানেই, আর সবচে বড় বর্তমান হচ্ছে মানুষ- এই সময়ের মানুষ, জীবিত সহজ মানুষ।

সহজ মানুষ ভজে দেখনা দিব্য জ্ঞানে।।
পাবিরে অমূল্য নিধি বর্তমানে।।
ভজ মানুষের চরন দুটিনিত্যবস্তু রবে খাঁটি।
মরিলে সকলি মাটিত্বরায় এ ভেদ লও জেনে।।

তবে কি লালন ফকির শেষ পর্যন্ত ঈশ্বর বিমুখ? না, কখনো তা নয়। সত্য এই যে তাঁর ঈশ্বর ভাবনা প্রাপ্তবস্তুর নিরিখে জিজ্ঞাসিত হয়ে ক্রমশ এক অবৈদিক পথকে নির্মান করে, যেখানে ঈশ্বর যতোটা না অলৌকিক তারচে অনেক বেশী লৌকিক। এই মর্মের গভীরে পৌঁছতে, যদি আমরা লালন ফকিরের সৃষ্টি-তত্ত্ব ও তার ঐতিহাসিক যোগসূত্রটি জানার চেষ্টা করি, তবে দেখব, সেখানে লালন সেমেটিক গুপ্ত আধ্যাত্মবাদ অন্বেষণ প্রয়াসী। জানামতে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনের গুপ্ত সাধকেরা সব যুগেই ধর্মগ্রন্থের একটা ভিন্ন ব্যাখ্যায় বিশ্বাসী ছিল, বিশেষত সৃষ্টি-তত্ত্বে এসে তারা ভীষণভাবে বেশরা। ইসলামের সুফিবাদেও এর ব্যাপক প্রভাব দেখা যায়।

কাব্বালাপন্থী ইহুদি গুপ্ত সাধকেরা বিশ্বাস করতো বা এখনও করে যে, পরম বা মূল ঈশ্বর এক অচেতন ‘না’ সত্তা। তিনি সৃজিত হন না, সৃজনও করেন না। তিনি নির্ভার নিষ্কাম। তাই এই ঈশ্বরের বাইরেও তারা সৃষ্টিসুখের আকাঙ্ক্ষায় ক্রিয়াশীল এক অভাবী ঈশ্বরের কল্পনা করেছিল যে মূল ঈশ্বর হতে ভিন্নও নয় অভিন্নও নয়। নাম তাঁর জেহভা- এ জগত তাঁরই সৃষ্টি। আদিতে অবশ্য ঈশ্বর ছিলেন এক এবং আর কিছুই ছিল না তখন সেই অনাদি ঈশ্বর ছাড়া। এইভাবে হয়ত অযূত লক্ষ কোটি বছর একাকী তিনি! তারপর একসময় কোন এক অকারণ কারণে যেন জেগে ওঠে দ্বিতীয়ের ইচ্ছা। তখন আপনকার অনুরূপ আরেকটি সত্তা-সৃষ্টি ব্যাতীত একাকী সেই ঈশ্বরের প্রকৃতপক্ষে আর কীবা উপায় থাকে। দ্বিতীয়ের আস্বাদ পেতে ঈশ্বর তাই নিজেকে সংকুচিত করতে করতে এমন এক স্তরে উপনীত হন যেখানে তাঁর মূল সত্তার স্বভাব স্থূলতায় লীন। এই জাগ্রত ঈশ্বরই জেহভা- মহান সৃষ্টিকর্তা।


কাব্বালা-মতে জেহভা দশ অবতারী। প্রথম অবতার জেহভা হতে আবির্ভূত অনুরূপ আরেক অক্ষয় জ্যোতি স্বরূপ। প্রথমটি হতে এরপর একেএকে একইভাবে পূর্ন হয় পরবর্তী নয়টি অবতার। প্রত্যেক অবতার আবার তেমনি ত্রিশাখায় বিভক্ত। অবশেষে এই দশ অবতারে গঠিত হয় আদি মানব আদম কেডমন, যে স্বর্গবাসী আর আমরা তারই প্রতিনিধী। দশাবতারজাত আদম কেডমন হতে পুনরায় যে চারটি জগতের উদ্ভব, পার্থিব জগত তারই একটি। এই হলো রহস্যবাদী কাব্বালা সাধকদের সৃষ্টির গুপ্ত-কথা।

জেহভার মত লালন দর্শনেও আমরা অবতারী এক আল্লাহকে পাই নুরতাজেল্লা রূপে। এই নুরতাজেল্লাই সৃষ্টিকর্তা। অনির্বচনীয় অনিঃশেষ অতুল এক নুরের মহীমায় আল্লাহর কুদরতি প্রকাশ। এ যেন অব্যক্ত সুক্ষ স্তর থেকে আনন্দময় স্থুলে অবতরণ। এরপর দ্বিতীয়ের আকাঙ্ক্ষায় নুরতাজেল্লা থেকে নুর চুইয়ে উৎপন্ন হয় নবির নুর, নবিসত্তা, জগতসার। নবির অঙ্গ হতেই পয়দা হয় বায়ু অগ্নি জল ও মাটি- সরলে গরলে মেশা এই বিস্ময়কর বিশ্বজগত। লালন ফকিরের বিভিন্ন পদে এই ধারনারই সমর্থন পাই বারবার।

জানা উচিত বটেদুটি নুরের ভেদ বিচার।।
নবিজি আর নিরূপ খোদারনুর সে কি প্রকার।।
নবি যেন আকার ছিলতাহাতে নুর চোয়ায় বলো।
নিরাকারে কি প্রকারেনুর চোয়ায় খোদার।।
শুনি নবির অঙ্গে জগত পয়দা হয়।।
সেই যে আকার কি হল তারকে করে নির্নয়।।
আসমান জমিন জলধী পবন
যে নবির নুরে হয় সৃজন
বল কোথায় সে নবির আসন
পুরুষ কি প্রকৃতি আকার তখনে।।

লালন দর্শনে সৃষ্টির লতা মানুষ হতে শেষে আল্লায় গিয়ে মেশে। অথবা অনন্ত ধারা একের ভেতরেই বয়ে চলে। দুটোই সত্য, কারণ অই ‘এক’ কোন কিছু থেকেই বিযুক্ত নয়। এই ভাবনা থেকেই তাই আহাদ আর আহাম্মদ নামের প্রকাশ দেখি, সুফি আধ্যাত্মবাদ থেকে যার উদ্ভব। সৃষ্টির পূর্বে আহাম্মদি নুর ছাড়া আর কিছুই ছিল না। কাব্বালারা যাকে বলছে জেহভা তাই লালনে নুরতাজেল্লা, অন্য অর্থে আহাম্মদি নুর। সৃষ্টির বাসনায় আহাম্মদি নুর হতে আহাদ বিযুক্ত হয়ে গঠিত হয় নবি-সত্তা বা পরম প্রকৃতি। তারপর অবশিষ্ট ‘মীম’ হরফটি গোপন করে ‘আলিফ’ রূপে সৃষ্টির মূলে জাগ্রত হন ‘আলেক সাঁই’। কিন্তু তারপরেও মানব লীলার আস্বাদ পেতে সৃষ্টিকর্তা আহাদে ‘মীমকে’ যুক্ত করে তাঁর ‘আহাম্মাদ’ নামকে জানায়। এ কারনেই সাঁই নিরঞ্জনকে আমরা দেখি রাসুল মুহাম্মদে প্রকাশিত হয়ে মানবের কাণ্ডারি হতে, জাহের বাতেন এই দুইভাব উপাসনার মুলসাধনা জানাতে যা আর কখনো কেউ করেনি। অন্য কিছুতে না ভুলে তাই রাসুলের এই দ্বীনকেই সত্য মানতে বলছে লালন।

আহাদে আহাম্মাদ হলো
মানুষে সাঁই জন্ম নিলো।
লালন মহাগোলে পড়লো
সাঁই-এর লীলার অন্ত নাহি পায়।।
আহাদে আহাম্মাদ এসে
নবি নামটি জানাইলে।
যে তনে করিলে সৃষ্টি
সেই তন কোথায় রাখিলে।।

…..আহাদ নামে কেন রে ভাই
মানব লীলা করলেন গো সাঁই।
লালন বলে তবে কেন যাই
অদেখা ভাবুক দলে।।

সৃষ্টির গভীরে যেতে জানা উচিৎ বটে বীজ-বৃক্ষ তত্ত্ব। সৃষ্টির পূর্বে নুরতাজেল্লা বা আহাম্মদি নুর যে আদ্য-শক্তিতে ভাস্বর তা এক পরম বীজশক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়, নিগুম্ব ধ্বনি থেকে যার উদ্ভব। প্রকাশে আকারে এই বীজ-শক্তিই বৃক্ষ আর সেই বৃক্ষই নবি- বীজ থেকে ভিন্নও নয় অভিন্নও নয়। এই বৃক্ষসত্তাময় নবি-অঙ্গ হতেই জগতের উৎপত্তি আর বীজবৃক্ষের মিলনের মধ্য দিয়েই নিরন্তর এগিয়ে চলছে ব্রহ্মাণ্ড। লালনমতে বীজকে জানতে হলে বৃক্ষকেই জানতে হয় আগে, জানতে হয় তার মূল কাণ্ড পত্র ও পুস্পকে। তেমনি প্রকৃতি-রূপ নবিকে জানলেই পুরুষ-রূপ সাঁইকে জানা সম্ভব হয়।

মন কি ইহাই ভাবো আল্লাহ পাবো
নবি না চিনে।।

কারে বলিশ নবি নবি
দিশে পালিনে।।

বীজ মালেক-সাঁই বৃক্ষ নবি
দিল ঢুঁড়িলে জানতে পাবি।
কি কবো সেই বৃক্ষের খুবি
তার এক ডালে দ্বীন
আরেক ডালে দুনে।।
বোঝা কঠিন কুদরতি খেয়াল
নবিজি গাছ সাঁইজী তার ফল।
যদি সেই ফল পাড়ো অই গাছে চড়ো
লালন কয় কাতর ভাবে।।

সর্বগুনধাম আল্লার নিরানব্বইটি নামের মধ্যে দুটি নাম হচ্ছে ‘আল যাহির’ (প্রকাশিত) এবং ‘আলবাতেন’ (অপ্রকাশ্য)। অদৃশ্য নৈরাকার আল্লার কথা যদিও লালন কখনো অস্বীকার করেনা কিন্তু তাঁর সকল ধিয়ান, অনুসন্ধান শুধুমাত্র ওই প্রকাশ্য আল্লাকেই পাবার জন্য। অদৃশ্যের সাধনা তাঁর কাছে আঁধার ঘরে সর্প ধরার সমান। ওই পথ ফকিরের নয়, সে দৃশ্যমান বর্তমানের ভেতরেই শুধু নিরঞ্জনকে খোঁজে।


নয়নে না দেখিলাম যারে
কি মতে ভজিব তারে।
নিচের বালু না গুনিয়ে
আকাশ ধরছ অন্ধকারে।।
আঁধার ঘরে সর্প ধরা
সাপ নাই প্রত্যয় করা।
লালন তেমনি বুদ্ধিহারা
পাগলের প্রায়।।

লালন দর্শনে আল্লাহকে পেতে হয় নবিকে চিনে, নবি ভিন্ন খোদার ভেদ অসম্ভব। কিন্তু নবি কারে বলি সেই মর্মার্থ সৃষ্টির মূল থেকে জানা দরকার। তাই দৃশ্যমান আকারে, বর্তমানে, আহাদে লালন দেখতে চায় সেই মৃত্যুহীন চিরঞ্জীব নবিকে, চারযুগে বিরাজমান এক জগত ত্রাতাকে। এবং লক্ষণীয় এই সত্য লালনের কুরআন থেকে পাওয়া।

হায়াতুল মুরসালিন বলে
কুরআনেতে লিখা দেখি।
সিরাজ সাঁই কয় অবোধ লালন
রাসুল চিনলে আখের পাবি।।
যে নবি পারের কাণ্ডার
জিন্দা সে চার যুগের পর।
হায়াতুল মুরসালিন নাম তাঁর
সেই জন্য কয়।

বর্তমানে কোন রূপে পাওয়া যাবে নবিকে সেই অনুসন্ধানই লালনমতে সাধকের কার্য। অদৃশ্য নিরাকার নয়, অন্য যুগের কোন অবতার নয়, কোন ঐতিহাসিক চরিত্র নয়- লালন কেবল বর্তমানের মানুষকে ভজেই এই নুর-সাধনা সিদ্ধ করতে চায়।

আইন সত্য মানুষ বর্ত্ম
করো এই বেলা।।
ক্রমে ক্রমে হৃৎকমলে
খেলবে নুরের খেলা।।

লালন ফকিরের দর্শন মূলত এক গুরুমুখী করণ-সাধনা। এই পথে গুরুই পতিত পাবন, পরম ঈশ্বর, দয়াল চাঁদ- যদিও রক্তমাংসের মানুষ ভিন্ন অন্য কিছু সে নয় । এই জ্যান্ত গুরু-রূপ বর্জখ করেই সাধক স্বরূপ খোঁজে। শিক্ষাগুরু, দীক্ষাগুরু, সাধনগুরু, চেতনগুরু এই চার প্রকার চরনে সিদ্ধ হয় সাধন। ভক্তিই এই সাধনার বল কেননা গুরু ভক্তির অধীন। গুরুর পরশে লোহা সোনা হয়, অন্ধ দেখে কালায় শোনে, ল্যাংরা সেও নাচে- এমনি তাঁর মহিমা। সাধনতত্ত্বের কোন শাস্ত্র নাই। গভীর নিগুম আপ্ততত্ত্ব জানতে হয় সম্যক গুরুর নির্দেশ মেনে জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে উপলব্ধির বিকাশ ঘটিয়ে, কেননা এটি একটি জীবন সাধনা। ক্রমে ক্রমে হৃৎকমল উজালা করে আমার আমিকে জানা। আর নিজেকে জানতে পারলেই সকল জানা যায়।

গুরু পদে নিষ্ঠা মন যার হবে।।
যাবে তার সব অসুসার
অমূল্য ধন হাতে সেহি পাবে।।
যথা-আলেক মোকাম বাড়ি
সফিউল্লা তাহার সিঁড়ি।
লালন বলে মন-বেড়ি
লাগা গুরুর পা’য়।।

লালন দর্শনে দেহ এক মহা বিষয়। যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে তাই দেহ ভাণ্ডে। দেহের ভেতরেই সাঁই নিরঞ্জনের খেলা, নবির নুরের জ্যোতি, আরস বারি। দেহ ভিন্ন লালন সাধকের তাই আর কোন তীর্থ নাই। তবে এও সত্য যে লালনের এই সাধনা শেষমেশ এক মিথুনাত্মক যুগল সাধনাতেই পরিসমাপ্তি যাচে। দেহ-যুগলের মিলনেই শুধু সাঁই-দর্শন সম্ভব, আর কিছুতে নয়, এটাই বীজমন্ত্র। যুগলে ভজে অধরাকে ধরার এই গুপ্ত চর্চায় দেহই মন্দির, আর মিলন উপাসনা। এখানে আরেকটি বিষয় জানা জরুরি যে এই সাধনায় সাধক নয় বরং সাধন-সঙ্গিনীই মূল কাণ্ডারি, যার প্রসাদ ছাড়া পার অসম্ভব। সেই হয় চেতনগুরু, অন্য নামে শ্রীগুরু। যুগল-সাধনায় মিলনের চরম মুহুর্তে পুরুষ(সাঁই) হয় প্রকৃতি আর প্রকৃতি( দেহ, নবি) হয় পুরুষ। কিন্তু দেহতত্ত্বের এই অজান খবর জানা সামান্যের কাজ নয়, কারন এই দেহ এই পঞ্চভুতের জগত এক অবিচ্ছেদ্য হেতুকরনে অহর্নিশী দ্বন্দ্বমুখর, প্রপঞ্চনাই যার স্বভাব। দেহকাম থামে না, তৃপ্ত হয়না। সমস্ত সাগর চুষে নিতে চায় যে পাখি তার আহার জোগানো সত্যি এক অসম্ভব করণী। ক্ষুধার্ত জংলা পাখিটাকে তাই প্রথমে পোষ মানায়ে তারপর করতে হয় প্রেম- চতুর সাধক সে পথেই যায়।

প্রেমই লালন দর্শনের প্রাণ। প্রেমের শুদ্ধতায় নিষ্ঠা না এলে এই দর্শন শুধুই অসার শুষ্ক কথা। লালন মতে প্রেমেতেই সাধকের সিদ্ধি, প্রেমেতেই কারামুক্তি। সকল সাধনভজন, বাঁধনছাদন, ফকিরফিকিরি অবশেষে মিথ্যা হয়ে যায় যদি চিত্তে প্রেম না থাকে। প্রেমরতিতেই আচ্ছন্ন সেই অমূল্য নিধি, অধরা মাধুরীকে ধরার উপায়। লালনের বিভিন্ন পদে সেই আকুতিই বারবার ফিরে আসে।

শুদ্ধ প্রেম রাগে ডুবেথাকরে আমার মন।।
স্রোতে গা ডেলান দিওনারাগে বেয়ে যাও উজোন।।
নিভায়ে মদন জ্বালাঅহিমুণ্ডে করগে খেলা।
উভয় নিহার উর্ধব তালাপ্রেমেরি লক্ষণ।।
মুলাধারের মূল সেহি নূর
নুরের ভেদ অকুল সমুদ্দুর।
যার হয়েছে প্রেমের অঙ্কুর
ঝলক দিচ্ছে তারি।।
বাণে বাণ ক্ষেপনা বিষের উপার্জনা
অধঃপাতে গতি উভয় শেষখানা।
পঞ্চবাণের ছিলে প্রেমাস্ত্রে কাটিলে
হবে মানুষের করণ সারা।।

এক শুদ্ধ প্রেমকর্মই লালন দর্শন-সার, তারপরও কামহীন কোন অদ্ভুত প্রেমের কথা লালন বলেনা। কামছাড়া প্রেম তার মতে যথাতথা। কিন্তু সাধক কামে নাচে না, কামকে নাচায়। কাম তার কাছে তরঙ্গ–বিক্ষুব্ধ এক নদী (পথ), প্রেম লক্ষ্য (পার), আর এই দেহ সেই পারের তরী, গুরু কাণ্ডারি। কিন্তু পারের দেখা পাওয়া বা সিদ্ধিলাভ, যার জন্য জানতে হয় হেতুশূন্য করণ বা নিহেতু প্রেমসাধনা, সেই ভাব সামান্য জ্ঞানের কাজ নয়। রসিক শিখরে বাস করে যে সাধক সেই শুধু তারে পায়, বাকিরা ডুবে মরে তুফানে।

নিহেতু ভাব কি আদৌ সম্ভব? যুক্তিটি বোঝার জন্য দার্শনিক ইম্যানুয়েল কান্টের ‘শুদ্ধপ্রজ্ঞা’ সম্পর্কীয় বিখ্যাত ধারনাটি তবে জানা যাক। যে জ্ঞানশক্তি মানুষের লৌকিক ও ইন্দ্রিয়জ প্রেষণা বা কার্যকারণ সূত্রের আবশ্যিকতা ছাড়া আপন স্বাতন্ত্রের মুক্ততায় প্রকাশ পেতে পারে, তাই কান্টের বিচারে ‘শুদ্ধ প্রজ্ঞা’- মানব মনের একমাত্র পারমার্থিক অস্তিত্ব। প্রত্যাশাবিহীন নৈতিকতা আর নিষ্কাম রস-ভাবনা (নান্দনিক অনুভূতি ও প্রেম) তারই প্রমান দিচ্ছে বারবার জীবনের কিছু বিশেষ মুহুর্তগুলিতে। মনের এই বিস্ময়কর দুই স্বভাব থেকে মানুষের শুদ্ধ-প্রজ্ঞায় ঈশ্বর বা পরম-সত্তার অস্তিত্ব বস্তুবাদি কান্ট একসময় তাই স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন, যদিও তার ভাষায় এই ঈশ্বর অধরা, অপ্রমাণ। কান্ট বিশ্বাস করে যে মানুষ আসলে দুই জগতের বাসিন্দা। সংবেদনশীল দেহান্দ্রিয় নিয়ে কার্যকারণে আবদ্ধ এক অবভাসিক জগতে যেমন তার অবাধ বাস তেমনি শুদ্ধ প্রজ্ঞার প্রেরণায় এক পরমার্থিক জগতেও হতে পারে বিচরণশীল, যেখানে স্বাতন্ত্র্যই নিয়ম। একই আত্মার যেন দুই রূপ। জাগতিক মোহ আর মূঢ় বন্ধন অতিক্রম করে অন্তরের পারমার্থিক স্বাতন্ত্র্যকে উদ্ভাসিত করাই তাই মানবজীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ, কান্টের মতে যা আত্মসাধনা। কোন বাহ্য পদার্থে, ঐতিহাসিক ব্যক্তিতে বা মহাগ্রন্থে ঈশ্বরের অভিপ্রায়কে দেখতে পাওয়া কান্টের মতে স্রেফ পৌত্তলিকতা। বরং ধর্মবানী বা নির্দেশ মানুষের অন্তরাত্মা থেকেই কেবল উঠে আসতে পারে, শুদ্ধ প্রজ্ঞার জাগরনের মধ্য দিয়ে মনোজগৎ আলোকিত করে। ধর্ম বলতে বস্তুবাদী কান্ট শুধু এইটুকুই বোঝে।

লালন ফকিরের দর্শনেও আমরা অনেকটা একই অভিমত পাই। ‘সর্বভূতে ঈশ্বর’- ব্রহ্মধর্মের এই উপনিষদীয় বানী হয়ত লালন অস্বীকার করে না, কিন্তু সর্বভূতে নয় ফকির লালন ঈশ্বরকে খোঁজে শুধু মানুষে, মানুষের অন্তঃস্থলের হৃদ-কমলে, মনোদেহে, আকারে ও বর্তমানে। লালনের কাছে মানুষেই মূল সাধনা।

সর্বসাধন সিদ্ধ হয় তার।।
ভবে মানুষ-গুরু নিষ্ঠা যার।।
নিরাকারে জ্যোতির্ময় যে
আকার সাকার রূপ ধরে সে।
দিব্যজ্ঞানী হয় সেই জানতে পায়
কলির যুগে মানুষ অবতার।।
আছে আদমক্কা এই মানব দেহে
দেখনা রে মন ভেয়ে।।
দেশদেশান্তর দৌড়ে এবার
মরিস কেন হাঁপিয়ে।।

আগেই বলেছি, লালন দর্শনে মানব-দেহ একটি আধ্যাত্মিক বিষয়- নুরের আধার, পবিত্র পেয়ালা। কান্টের দর্শন থেকে এ পর্যায়েই লালনের ভিন্নতা স্পষ্ট। কান্টের ‘শুদ্ধ-প্রজ্ঞা’ কোন বস্তু নয়, জ্ঞানশক্তি আর লালনে তা বস্তু-শক্তিও বটে, সাধনযোগে যারে জানতে হয়। বৈরাগ্য বৃথা, বনে মুক্তি নাই- আপন দেহেই লালন খোঁজে তীর্থ, সাধনার বল, কান্টের মতো মানুষ যে দুই জগতে বাসিন্দা এ বিশ্বাসে ভর করে।

আমি একদিন না দেখিলাম তারে।।
বাড়ির পাশে আরশিনগর
সেথা পড়শি বসত করে।।
সাধ্য কিরে আমারসে রূপ চিনিতে।।
অহর্নিশী মায়ার ঠুসিজ্ঞান চক্ষুতে।।
আমি আর অচিন একজন
এক জায়গাতে থাকি দুইজন।
মাঝে ফেরে লক্ষ যোজন
না পাই ধরিতে।।

দেহের ক্ষুধা তৃষ্ণা কামনা বাসনা অস্বীকার করে না লালন, আবার দেহান্দ্রিয়ের দাস তাও হতে চায় না। অন্যদিকে মন তাঁর কাছে বশে না আসা তৃপ্তিহীন এক দুরন্ত সত্তা, চেনা যায় না বোঝা যায় না যারে। সারাক্ষন সেখানে চলে ছয় মন্ত্রীর কুকান্ডের শাসন। মন তাই পাতালগামী, বিষয় বিষে চঞ্চল। সকলেই অমৃত খোঁজে, কিন্তু তা কোথায়? বারবার শুধু বিষে জড়িয়ে পড়া। সাধক তাই বিষ ধরেই সাধন করে, তাকে অমৃতে পরিনত করার বাসনায়। দেহের সাধন ছাড়া মন কখনো শুদ্ধ হয়না, শান্ত হয়না, কেননা বিবাগি মন সে শুধু দেহেরই অধীন। তাই দেহকে নিহাজ করে জানতে হয়, তার মোকাম আর কুঠরিগুলি খবর নিতে হয়, বুঝতে হয় দেহ-নদীর ধারার রহস্য। দেহ-তত্ত্বের এইসব নিগুঢ় সাধনভজন সম্যক গুরুর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে লালন সাধক পারি দিতে চায় উত্তাল কামনদী। এক দূরহ যাত্রা।

রস-সাধনায় রেচক কুম্ভকের রহস্যই সব নয়, বস্তু রক্ষার অটলতাতেই কেবল সিদ্ধ হয়না ফকিরি। ঘোর তুফানে পড়লে এইসব বাঁধন-ছাঁদন গীরে-ফীরে সব ছুটে যায় ঢেউয়ের প্রবল ধাক্কায়। তখন শুধু কথার ব্যাবসা করা ছাড়া পথ থাকে না। তাই লালন, এই মহাসঙ্কট কালে, প্রেমকেই বলছে একমাত্র ভরসা, পারের রক্ষাকবচ। কিন্তু যে প্রেমের শক্তিতে নির্ভয়ে বিক্ষুব্ধ নদী অনায়াসে উজায় রসিক মহাজন তা যেসে নয়। এই প্রেম শুদ্ধ রাগে ডোবা। এই প্রেমের প্রেমী কামে থেকে নিস্কাম, নিহেতু ভাবরসে পাগল পারা। তারই এক দারুন উদাহরন দেখাতে লালন বারবার কৃষ্ণভাবনায় আত্মলীন গোপী-নারীগনের প্রেমের কথা বলেছে। তাঁর মতে গোপীগনই সেই অমুল্য নিধির অধিকারী, যেহেতু ভগবান কৃষ্ণ শুধু তাদের এই প্রেমের কাছেই বাঁধা, দায়ে কেনা।

বৈরাগ্যভাব বেদের বিধি
গুপিভাব অকৈতব নিধি।
ডুবল তাহে নিরবধী
রসিক জনা।।

যগীন্দ্র মনীন্দ্র যারে
পায়না যোগ ধিয়ান করে।
সেই কৃষ্ণ গোপীর দ্বারে
হয়েছে কেনা।।

পুর্বজন্মের পুণ্যের বিনিময়ে গোপী নারীগণ শুধুমাত্র কৃষ্ণদর্শনের আশায় দ্বাপর যুগে জন্ম নেয়। কৃষ্ণসুখই তাদের সুখ, এরজন্য কুলমান খুইয়ে আত্মসুখ বিসর্জন দিতে হলে তাও দেবে- এমনি মনোভাব। এই প্রেম নিহেতুকাম। একেই বারবার ভজতে বলেছে লালন। যার-মাঝে এই প্রেম অঙ্কুরিত, জীবসত্ত্বা থেকে উত্তরিত হয়ে সে এক অচিন আমার আমির খোঁজ পায়, হেতুশূন্য নিস্কাম এই অচিন আমিই সাঁই-রতন।

প্রেম মানুষের এক রহস্যময় অনুভূতি এবং ঐশ্বরিক দুটি গুন ‘মুক্ততা’ এবং ‘স্বাতন্ত্র’ এর প্রধান লক্ষন। তাই কান্টের ‘শুদ্ধ-প্রজ্ঞা’র সেই নৈতিক ও নান্দনিক নিষ্কামতা আনন্দময় হয়ে ওঠে শুধুমাত্র প্রেমেরি কারণে। অটলবিহারী কৃষ্ণ মানবলীলার স্বাদ পূর্ন করতে কলির যুগে জন্ম নেয় নদিয়ার গৌড় রূপে, শুধুমাত্র প্রেমের বাঞ্ছা মেটাতে- রাধার প্রেমের ঋণ শুধিতে। কেউ তারে বলে চৈতন্য কেউ গোরা বা গৌরাঙ্গ আবার কেউ বলে নিমাই। গোরার ভাবের অন্ত নাই।

ভাবে গৌড় হয়ে মত্ত
বাহু তুলে করে নৃত্য।
কোথায় হস্ত কোথায় পদ
ঠাওর নাই তাঁর অন্তরে।।

তাই লালন বলছে- গোরা এক নতুন আইন আনলো নদিয়ায়, বেদ-পুরান সব বাতিল করে শুধু শুদ্ধপ্রেমের মহিমা করলো প্রচার। এই প্রেম মানেনা কোন জাতপাত,ধর্মাধর্ম, রাখেনা কোন বিধিবিধান পাপপুণ্য জ্ঞান। সকল যুগের মাঝে গোরা এক দিব্যযুগ দেখায়।

বেদে যা নাই তাই যদি হয়
পুঁথি পড়ে কেন মরতে যাই।
লালন বলে ভজব সদাই
ওই গৌড় হরি।।

 

আয় কে যাবি গৌড়চাঁদের হাটে।।
তোরা আয় না মনে হয়ে খাঁটি
ধাক্কায় যেন যাসনে চটে ফেটে।।
সে কি আমার ক’বার কথা
আপন বেগে আপনি মরি।।

গৌড় এসে হৃদয়ে বসে
করলো আমার মন চুরি।।

কিবা গৌড় রূপ-লম্পটে
ধৈর্য-ডুরি দেয় গো কেটে
লজ্জা ভয় সব যায় ছুটে
যখন ওই রূপ মনে করি।।

নদিয়াবাসির প্রাণ কেঁপে ওঠে গৌড়-প্রেমের এই নব-তরঙ্গে। এ যেন সব ভেঙ্গেচুরে এক করে দিতে চায়। হিন্দু যবন মোল্লা পুরোহিত ভুলে মূঢ় ভেদাভেদ, গৌড়-প্রেমের হাটে মজে হলো আত্মহারা। কুলীন ব্রাহ্মণ অচ্ছুত চণ্ডালকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদছে- এমন দৃশ্য কেউ কখনো দেখেনি, মহাপ্রভু গৌরাঙ্গ সবাইকে তাই দেখালো। লালন তাই শেষপর্যন্ত এই গৌড়-প্রেমকেই মানছে কলির মানুষের মুক্তির শেষ উপায়, আর সব গৌণ করে দিয়ে। কারণ এই প্রেম বিপ্লবী, কুলনাশা সাম্যবাদী, এই প্রেম অসাধ্যের সাধ্যবিধান।

আজকের এই সভ্যতা, তার মানুষ, স্রষ্টার অপার কৃপার মধ্যে বাস করেও তাপিত-প্রাণ, ক্লিষ্ট, সুধাভাগ্যহারা। লালন বলছে যে মলয় পর্বতে যত বৃক্ষ জন্মে, সকলই পর্বতের সার(গুন) গ্রহন করে চন্দন-ঘ্রাণ প্রাপ্ত হলেও বাঁশ এর ব্যতিক্রম। প্রেমশূন্য চিত্তের দোষে চন্দনের গন্ধ বাঁশে আসে না। আজকের মানুষেরও তেমনি বাঁশের দশা। কেননা বর্তমান সভ্যতা কোন প্রেমের ভিত্তিতে গড়ে ওঠেনি। জ্ঞান কখনো পরিনত হয়নি ভাবে আর ভাব প্রেমে। তাই ক্রমাগত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মানুষে মানুষে অনর্থক বিভেদ, লোভ, হিংসা আর হানাহানির দর্পিত ইতিহাস। জগত-মূলে বাহিত সাঁই নিরঞ্জনের নুর-শক্তিকে ভোগের পথে বেশুমার খরচ করে ক্ষুদ্র জ্ঞান আর অহঙ্কার নিয়ে অন্ধ যেন আজ মানুষ। কারণ প্রেম পায়না যে চোখ তার মনি ঘোলা, ঠুসি পড়া। তাইত আজো এতো জ্ঞানের পরেও, কুরআনে বারবার বিধৃত হওয়া সেই নিগুঢ় নিদর্শন, স্রষ্টার স্বরূপ, জগত-লীলার মাঝে মানুষ দেখতে পায়না। তা নাহলে জগত-প্রেমের মহীমায় আপনাকে পূর্ন করে হাতে পেত অমূল্য নিধি। পৃথিবীতে আসতো প্রেমরস-সিক্ত এক চির-দিব্য-যুগ। মানবজাতি কোন একদিন হয়তো তার দেখা পাবে, দুগ্ধ হতে পৃথক হবে ননি, আর তখন পড়ে থাকবে শুধু অসার ঘোল- ভ্রান্ত বাসনার হাড়গোড়, করোটি ও ছাই।

সংগৃহীতঃ- লাল জীপের ডায়েরী

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
আমরা কুকিজ ব্যবহার করি
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে কুকিজ ব্যবহার করি। তাদের মধ্যে কিছু সাইট পরিচালনার জন্য অপরিহার্য, অন্যরা আমাদের এই সাইট এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করে (কুকিজ ট্র্যাক করা)। আপনি কুকিজকে অনুমতি দিতে চান কিনা তা আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দয়া করে মনে রাখবেন যে আপনি যদি সেগুলি প্রত্যাখ্যান করেন তবে আপনি সাইটের সমস্ত কার্যকারিতা ব্যবহার করতে পারবেন না।