বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

সাঁতারে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টিকারী কানাই লাল শর্মা
সাঁতারে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টিকারী কানাই লাল শর্মা

কানাই লাল শর্মা (জন্মঃ ৭ই নভেম্বর ১৯৩০ইং, মৃত্যুঃ ১৯শে আগস্ট ২০১৯ইং) কুষ্টিয়ার হাটস হরিপুর ইউনিয়নের শালদহ গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৃত অভিমুন্য শর্মা। প্রবীণ এ সাতারু পিছনে ফেলে আসা সাফল্য জড়িত দিনগুলির স্মৃতিচারন করতে যেয়ে বলেন, তার বয়স যখন ৫-৬ বছর। তখন একদিন তার বাবা নৌকায় করে গড়াই নদী পার হয়ে বাড়ী ফিরছিলেন। ঝড়ে মাঝ নদীতে নৌকাটি ডুবে যায়। এতে অনেকে মারা যায়। সৌভাগ্য বসত কানাই লাল শর্মার পিতা অভিমুন্য শর্মা প্রাণে বেঁচে যান।

নদীতে নৌকা ডুবেছে শুনে চারিদিকে বইতে থাকে কান্নার রোল। কানাই লালকে কোলে নিয়ে তার দিদিমা নদীর ঘাটে আসেন। চারিদিকে মৃত্যু কান্না। অনেকক্ষণ পরে আসেন অভিমুন্য শর্মা। নদীর ঘাটে তখনও অপেক্ষা করছে অভিমুন্যর মা। অভিমুন্য তার মায়ের কাছ থেকে কানাই লাল শর্মাকে কোলে নেন। অভিমুন্য তার মাকে বলেন, মা কানাই যেন ভালো করে সাঁতার শেখে। বাবার কাছেই তার সাঁতারের হাতে খড়ি। এর কিছুদিন পর কানাই লাল শর্মার মা শামিত্ম বেলা কলেরা রোগে মারা যান। ১৯৪৪ সালে পুরাতন কুষ্টিয়া এম ই স্কুলে কানাই ভর্তি হন। তার প্রথম শিক্ষক ঝুমুর পন্ডিত। পড়া লেখায় তার অভিভাবক ছিলেন একই এলাকার দিদার বক্স মন্ডল। পড়া-লেখার পাশাপাশি কানাই লাল সাঁতার শিখতে থাকেন। কানাই লাল হঠাৎ করে বেড়াতে যান ভারতে। এ সময় পশ্চিম বঙ্গের হুগলি ব্রিজ থেকে নৈয়হাটি ফেরি ঘাট পর্যন্ত ৩ মাইল সাঁতার প্রতিযোগীতা হবে বলে চারিদিকে প্রচারিত। সেখানে নাম লেখিয়ে অংশ গ্রহণ করেন কানাই লাল।

৭০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন কানাই লাল। অর্জন করেন সোনার মেডেল। শুরু হয় কানাই লাল শর্মার সাঁতারের কৃতিত্ব। এরপর ১৯৪৮ সালে কবি আজিজুর রহমানের পুকুরে ২৫ জন প্রতিযোগীর মধ্যে সাঁতার দিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন সাঁতারু কানাই লাল শর্মা। কবি নিজ হাতে কানাই লালকে পুরস্কার তুলে দেন এবং আর্শিবাদ করেন। এরপর ১৯৫৯ সালে নওরোজ ক্লাবের আয়োজনে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে গড়াই ব্রিজ পর্যন্ত ২০ মাইল সাঁতার প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে প্রথম হন তিনি। ১৯৬০ সালের ১৪ই আগষ্ট কেডিএস’র আয়োজনে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে গড়াই ব্রিজ পর্যন্ত সাঁতার দিয়ে প্রথম হন তিনি। সাঁতার দেখার জন্য এ সময় উপস্থিত ছিলেন দেবী প্রসাদ চক্রবর্তী (কানু বাবু) সহ সুধি মহল এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ওই সালেই কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের আয়োজনে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত সাঁতার দেন। আয়োজক কমিটির মধ্যে ছিলেন ডাঃ তোফাজ্জ্বেল হক, ডাঃ নিত্য বাবু, কলেজের অধ্যক্ষসহ কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রতিযোগীতার ৪ দিন পর হয় অনুষ্ঠান। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও তখন পুরস্কার দেয়া হয় না। পরে দেয়া হবে বলে জানান কলেজ কর্তৃপক্ষ। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত সাঁতার দেয়ার কারণে কুষ্টিয়া মোহিনী মোহন বিদ্যাপীঠ মাঠে পুরস্কার প্রদানের আয়োজন করা হয়।

সেখানে পূর্ব পাকিস্থানের গভর্ণর আজম খান আসেন। কানাই লাল সরকারী কলেজের ছাত্র হওয়ায় আজম খান সরকারী কলেজকে অনুদান দেন। তবে সরকারী কলেজ থেকে আজও তার পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়নি। এরপর তিনি ঢাকা ব্রজেন দাশের কাছে সাঁতার শিখতে যান। পরিবেশ না থাকায়, চলে যান ব্রজেন দাশের ওস্তাদের কাছে কলকাতায়। কলকাতায় শৈলেন্দ্র মেমোরিয়াল ক্লাবের কোচ প্রফুল্ল ঘোষ, ব্রোজো গোপাল পাইন ও পন্ডিত মশায়ের কাছে সাঁতার শিখতে থাকেন কানাই লাল শর্মা। সেখানে ৬ মাস সাঁতার শেখার পর ৩৬ ঘন্টা ৪ মিনিট সাঁতারে ভারতীয় রেকর্ড অতিক্রম করেন সাঁতারু কানাই লাল শর্মা। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতেও খবরটি ফলাও করে প্রকাশ করা হয়। এরপর সেখানে বিভিন্ন সময় সাঁতার দিয়ে ৮৪টি গেমসে প্রথম হন তিনি। চলে এলেন নিজ দেশে। দেশে এসে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত পদ্মা নদীতে এপার ওপার হয়ে সাঁতার দেন।

তারপর ১৯৬২ সালে সরকারী কলেজের পক্ষ থেকে ৫২ মাইল সাঁতার দেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত সাঁতার দিয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। এর পর দাউদকান্দি থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ৪০ কিঃমিঃ সাঁতার কেটে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। এরপর কুষ্টিয়ায় ৫০ ঘন্টা, দৌলতপুরে ৬০ ঘন্টা ও খোকসায় ৬০ ঘন্টা সাঁতার দেন তিনি। কানাই লাল শর্মা বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি প্রসঙ্গে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই ভারতে যান। আমেরিকান সাঁতারু মিঃ জন ভিসিকমেন্টের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব রেকড ৮৯ ঘন্টা ৩২ মিনিটকে অতিক্রম করেন কানাই লাল। তিনি ঐতিহাসিক লাল দিঘিতে মুক্তি ফৌজের সাহায্যার্থে ৭১ সালের ২৩ আগষ্ট থেকে ২৭ আগষ্ট পর্যন্ত ৯০ ঘন্টা ১৭ মিনিট সাঁতার কেটে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এটাই হয় তার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন।

বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টিকারী সাঁতারুতে পরিণত হন ডাঃ কানাই লাল শর্মা। এ সময় ভারতের লেঃ জেনারেল অরোরা উপস্থিত ছিলেন। ব্যারিষ্টার এম আমির উল ইসলামসহ দেশী বিদেশী অতিথীগণ উপস্থিত ছিলেন সেখানে। ১৯৮০ সালে কানাই লাল শর্মা ৩৫০ কিঃমিঃ সাঁতার দেন। চাঁপাই নবাবগঞ্জের চৌডালা থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত ৩৫০ কিঃমিঃ সাঁতার দেন। এরপর ১৯৯৭ সালে তিনি বয়স্কদের সাঁতার প্রতিযোগীতায় বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেন। যমুনা সেতুর পাশে ভুয়াপুর ঘাট থেকে আরিচা ঘাট পর্যন্ত ৯০ কিঃ মিঃ সাঁতার দেন। এভাবে জীবনের বিভিন্ন সময় সাঁতার দিয়েছেন ডাঃ কানাই লাল শর্মা। সেই ছোট্ট বেলা থেকে শুরু করে আজও সাঁতারের সাধ মেনেটি তার।

জীবনের শেষ বয়সেও বর্ষা মৌসুমে প্রমত্তা গড়াই নদীতে সাতার কেটে আর একবার বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করাই তার শেষ স্বপ্ন। পেশায় কানাইলাল শর্মা একজন হোমিও চিকিৎসক। কুষ্টিয়া শহরতলী মঙ্গলবাড়ীয়ায় নিবাস কানাই লাল শর্মার। সংসার জীবনে তিনি ৩ কণ্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক তিনি। জীবনের শেষ বয়সে এসে তিনি তার অধিকার-মর্যাদা ফিরে পেতে চান।

তার ইচ্ছে ছিলো বাংলাদেশকে বিশ্ব সেরা প্রবীণ সাঁতারুর দেশ ও ১৯৭১ সালের ২৭ আগষ্ট’র স্মরণে ২৭ আগষ্টকে বিশ্ব ক্রিয়া দিবস হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে বাঙালির মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা।

১৯শে আগষ্ট ২০১৯ সালে আনুমানিক রাত ১২ টার সময় বার্ধক্য জনিত কারনে সে মৃত্যু বরন করে। বেলা ১২টার দিকে মঙ্গলবাড়ীয়া এলাকায় নিজ বাসভবনে কানাই লাল শর্মাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানানো হয়। পরে বিকালে মঙ্গলবাড়ীয়া মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

কানাই লাল শর্মা চান সরকারী ভাবে “২৭ আগষ্টকে বিশ্ব ক্রিয়া দিবস” এর স্বীকৃতি এবং গিনেস বুকে নাম লেখানো। শেষ জীবনে এমনটি প্রত্যাশা করেছিলেন ডাঃ কানাই লাল শর্মা।

কানাই লাল শর্মার জীবনী
কানাই লাল শর্মার রাষ্টীয় সন্মান
কানাই লাল শর্মার প্রতি সাধারণ মানুষের সন্মান
Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
আমরা কুকিজ ব্যবহার করি
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে কুকিজ ব্যবহার করি। তাদের মধ্যে কিছু সাইট পরিচালনার জন্য অপরিহার্য, অন্যরা আমাদের এই সাইট এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করে (কুকিজ ট্র্যাক করা)। আপনি কুকিজকে অনুমতি দিতে চান কিনা তা আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দয়া করে মনে রাখবেন যে আপনি যদি সেগুলি প্রত্যাখ্যান করেন তবে আপনি সাইটের সমস্ত কার্যকারিতা ব্যবহার করতে পারবেন না।