বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

একটি সংগ্রামী জীবনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস - আব্দুর রউফ চৌধুরী
একটি সংগ্রামী জীবনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস - আব্দুর রউফ চৌধুরী

The glorious history of the life of a struggling - Abdur Rouf Chowdhury

জনাব আব্দুর রউফ চৌধুরী ১৯৩৫ সালের ১৮ই আগস্ট তারিখে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলাধীন ছত্রগাছা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ধনাঢ্য মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম আব্দুল জব্বার চৌধুরী। জনাব আব্দুর রউফ চৌধুরী ১৯৫০ সালে কুষ্টিয়াস্থ মুসলিম হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৬২ সালে কুষ্টিয়া কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর সে বছরই তিনি ঢাকা বিশবিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং যথাসময়ে কোর্স সমাপ্ত করেন। কিন্তু পরীক্ষার প্রাক্কালে সেফটি এক্টে কারাবরন করার কারনে পরীক্ষা দেওয়া আর সম্ভব হয়নি।

জনাব আব্দুর রউফ চৌধুরী ১৯৪৫ সালে ঐতিহাসিক রশীদ আলী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহনের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। তখন তিনি ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র। বৃটিশ বিরোধী সাধীনতা সংগ্রামে তথা পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন।

মুসলিম ছাত্রলীগের সেচ্ছাসেবক বাহিনীর অন্যতম সক্রিয় সদস্য ও কুষ্টিয়া জেলা শাখা ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা হিসেবে তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহন করেন। ১৯৫৭ - ৫৮ সালে কুষ্টিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের ভি,পি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা বিশবিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হন এবং গনবিরোধী শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে সক্রিয় ও দেশব্যাপী উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেন।

১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির "গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচী প্রনয়ন " সাব-কমটির আহবায়ক নির্বাচিত হন এবং কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে তার পেশকৃত "গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচি " সম্মেলনে সারারাত ধরে প্রানবন্ত আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। আইয়ুবি সৈরশাসনের বিরুদ্ধে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্ব ৯ নেতার সমন্বয় গঠিত এনডি এফ এর গনতান্ত্রিক আন্দোলন সংগঠিত করার ব্যাপারে জনাব চৌধুরী কুষ্টিয়া জেলার উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেন।

১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশবিদ্যালয় সমাবর্তন উৎসবে কুখ্যাত গভর্নর ও চ্যান্সেলর মোনায়েম খানের উপস্থিতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন এবং গ্রেফতার হন। ছাত্রদের প্রবল চাপে এবং কৌশলের দারা তিনি পুলিশের কবল থেকে উদ্ধার পান। কিন্তু তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন হুলিয়া জারি থাকে।

১৯৬৬ সালে তিনি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেবছর সর্ব দলীয় ঐতিহাসিক উদ্দোগে মে'দিবস পালন উপলক্ষ্যে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের দায়ে প্রধান আসামী হওয়া সত্তেও শ্রমিক -জনতার চাপের মুখে পুলিশ তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে বেতাই ক্যাম্পে চিন্তামগ্ন বা থেকে সর্ব জনাব আব্দুর রউফ চৌধুরী এমপিএ জনাব আজিজুর রহমান আক্কাস এমএনএ জনাব ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল-ইসলাম এমএনএ এবং জনাব গোলাম কিবরিয়া এমপিএ

১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে বেতাই ক্যাম্পে চিন্তামগ্ন বা থেকে সর্ব জনাব আব্দুর রউফ চৌধুরী এমপিএ জনাব আজিজুর রহমান আক্কাস এমএনএ জনাব ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল-ইসলাম এমএনএ এবং জনাব গোলাম কিবরিয়া এমপিএ

১৯৭১ সালে ভারতের করিমপুরে মুক্তিযোদ্ধাগনের সম্মুখে বক্তৃতারত জনাব আব্দুর রউফ চৌধুরী এপিএ

১৯৭১ সালে ভারতের করিমপুরে মুক্তিযোদ্ধাগনের সম্মুখে বক্তৃতারত জনাব আব্দুর রউফ চৌধুরী এপিএ

১৯৬৫ সালে আইয়ুবের বিরুদ্ধে D.A.C এর মনোনীত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মিস ফাতেমা জিন্নাহর সফরসঙ্গী ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি খুলনা ও রাজশাহী বিভাগ সফর করেন। পাকিস্তানের তদানীন্তন সৈরাচারী সরকার বিরোধী ঐক্যজোট P.D.M এর সংগঠনেও তিনি উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেন। তদানীন্তন পুর্ব পাকিস্তান P.D.M নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জাতীয় নেতৃবৃন্দের ঘনিষ্ঠ সহচার্য্য লাভের সুযোগের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেন। ১৯৬৭ সালে রাজবন্দী মুক্তি দিবস পালনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের দায়ে সেফটি এক্টে এবং তথাকথিত দেশদ্রোহিতার অভিযোগে তিনি কারাবরন করেন এবং পরবর্তিতে হাই কোর্ট থেকে মুক্তি পান।

১৯৬৯ এর ঐতিহাসিক গনঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় এবং উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তদানীন্তন পুর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ( এম পি এ।) নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের ৩১শে মার্চ হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধে বি ডি আর ( তদানীন্তন ই পি আর) পুলিশ, আনসার এবং মুক্তিপাগল জনতাকে সংগঠিত করে তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরকল্পনা প্রনয়ন, ভারতীয় বর্ডার হতে ইপি আর দের অস্ত্রসহ কুষ্টিয়া নিয়ে এসে সমন্বয় করেন। হানাদার বাহিনীর বড় ঘাটি পুলিশ লাইন ও জিলা স্কুল আক্রমণ এবং থানা ও টি এন্ড টি ভবনে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। কুষ্টিয়ায় তার বাসভবনকে মুক্তিযুদ্ধের দুর্গ হিসেবে ব্যবহার করে হানাদার বাহিনীর অন্যতম অবস্থান কুষ্টিয়া থানা ও টি এন্ড টি ভবনে হামলা পরিচালনা করেন। এ কারনে পরবর্তিকালে হানাদার বাহিনী তার বসতবাড়ি আক্রমন করে ধংস করে দেয়।

পরবর্তিতে জনাব আব্দুর রউফ মুজিবনগর সরকারের দক্ষিন - পশ্চিম জোনাল কাউন্সিলের ( বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও পাবনা জেলার সমন্বয় এ গঠিত) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ঐ সময় এম এন এ ও এম পি দের সমনয়ে এম সি এ ( Member of constitutional assembly) তে পরিগনিত হয়।

বাংলাদেশের সাধীনতা লাভের পর এম,সি,এ হিসাবে দেশের সংবিধান রচনায় সক্রিয় ভুমিকা পালন করেন। তাকে সে সময় কুষ্টিয়ার ত্রান ও পুনর্বাসন কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। এবং তিনি কৃতিত্তের সাথে তার উপর অর্পিত দায়িত্তে পালিন করেন।

এরপর তিনি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে পুনরায় জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে এপ্রিল মাসে পার্লামেন্টারি ডেলিগেশনে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ সফর করেন। পরবর্তিতে সিঙাপুর, কুয়ালালামপুর, এবং ব্যাংকক সফর করেন।

১৯৭৬ সালে ডেমোক্রেটিক লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং পরবর্তিকালে কাউন্সিল অধিবেশনে জাতীয় কমিটির সহ- সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৮২ সালের পর থেকে ডেমোক্রেটিক লীগের একাংশের সভাপতি হিসেবে সৈরাচার বিরোধী ঐতিহাসিক ৫ দফা আন্দোলনে ৭ দলীয় ঐক্যজোটের অন্যতম নেতা হিসেবে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেন। ২২ দলের লিয়োজো কমিটির সদস্য হিসেবেও তিনি উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেন।

সৈরাচার পতনের পর সংসদীয় গনতান্ত্রিক পদ্ধতি গ্রহন, গনতান্ত্রিকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপদান এবং জাতীয়তাবাদী গনতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তিনি তার নেতৃত্তাধীন ডেমোক্রেটিক লীগ বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাথে একীভূত হন। ১৯৯১ এর ২৭ শে ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে বি এন পি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদন্দিতা কিরে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব স্ট্যাডিং কমিটির চেয়ারম্যান এবং সরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্ট্যাডিং কমিটির ও বিভিন বাছাই কমিটির সদস্য হন। বর্নাঢ্য জীবনের অধিকারি জনাব আব্দুর রউফ চৌধুরী রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ডেও সমান পদচারণা অব্যাহত রেখেছেন। নিজ এলাকায় ছত্রগাছা প্রাইমারী স্কুল, হাই স্কুল এবং হালসা হাই স্কুল ও আমলা কলেজ সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেন এবং জড়িত আছেন। অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন এবং করছেন

জেলার ক্রীড়া সংস্থা, পাবলিক লাইব্রেরী, শিল্পকলা একাডেমী, এবং অন্যান্য সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও কর্মকান্ডের সাথে তিনি সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছেন। কুষ্টিয়া জেলা রেডক্রস এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবনে :-
স্ত্রী এডভোকেট : নার্গিস চৌধুরী আইনজীবী ও সমাজ সেবিকা।
পুত্র ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, সুপ্রিমকোর্ট এ আইন পেশায় রত।
কন্যা আলমা চৌধুরী, ইংরেজি (সম্মান) কৃতিত্তের সাথে পাশ করে মেলবর্নের মানাশ বিশবিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
কনিষ্ঠ পুত্র সারেক রউফ চৌধুরী, স্থপতি বিষয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
আমরা কুকিজ ব্যবহার করি
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে কুকিজ ব্যবহার করি। তাদের মধ্যে কিছু সাইট পরিচালনার জন্য অপরিহার্য, অন্যরা আমাদের এই সাইট এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করে (কুকিজ ট্র্যাক করা)। আপনি কুকিজকে অনুমতি দিতে চান কিনা তা আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দয়া করে মনে রাখবেন যে আপনি যদি সেগুলি প্রত্যাখ্যান করেন তবে আপনি সাইটের সমস্ত কার্যকারিতা ব্যবহার করতে পারবেন না।