বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

যেমন করে রাজাকার নামটি ঘৃণিত হলো
যেমন করে রাজাকার নামটি ঘৃণিত হলো

শব্দটি যেভাবে এলো

রাজাকার ফারসি শব্দ৷ যার অর্থ স্বেচ্ছাসেবী৷ ১৯৪০ এর দশকে ভারতের হায়দ্রাবাদের নিজাম ওসমান আলী খানের শাসনামলে একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন কাসেম রিজভী৷ এই বাহিনীর নাম দেয়া হয়েছিল রাজাকার৷

পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনী

হায়দ্রাবাদের সেই সশস্ত্র বাহিনীর অনুকরণেই ১৯৭১ সালে রাজাকার বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানের সামরিক সরকার৷ মে মাসে খুলনায় খান জাহান আলী রোডের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন কর্মী নিয়ে এই বাহিনী গড়ে তোলা হয়৷ ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রধান মো. ইউসুফকে রাজাকার বাহিনীর সর্বাধিনায়ক করা হয়৷ শুরুতে ১০টি জেলায় ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতাদের রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্বে দেওয়া হয়৷

শান্তি কমিটি থেকে সেনাবাহিনী

‘‘প্রথম পর্যায়ে রাজাকার বাহিনী ছিল এলাকার শান্তি কমিটির নেতৃত্বাধীন৷ ১৯৭১ সালের ১ জুন জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারি করে আনসার বাহিনীকে রাজাকার বাহিনীতে রূপান্তরিত করেন৷ এর নেতৃত্ব ছিল পাকিস্তানপন্থী স্থানীয় নেতাদের হাতে৷ পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৭ সেপ্টেম্বর জারিকৃত অধ্যাদেশে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনী সদস্যরূপে স্বীকৃতি দেয়৷’’

প্রশিক্ষণ

প্রাথমিক পর্যায়ে রাজাকার বাহিনীর প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছিল ১৫ দিন৷ ১৯৭১ সালের ১৪ জুলাই কুষ্টিয়ায় এই বাহিনীর প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হয়৷ ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর রাজাকার বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডারদের প্রথম ব্যাচের ট্রেনিং শেষে সাভারে বিদায়ী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন জেনারেল এ.কে নিয়াজি৷ পরবর্তী পর্যায়ে এই বাহিনীকে একটি স্বতন্ত্র অধিদপ্তরের মর্যাদা দেওয়া হয়৷

রাজাকারের সংখ্যা

ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস এর গবেষণা অনুযায়ী রাজাকারের সংখ্যা ছিল ৫০ হাজারের মতো৷ জেনারেল নিয়াজী তার বইতে এই সংখ্যা উল্লেখ করেছেন৷ স্বাধীনতার পর রাজাকারদের বিচারে ৩৭ হাজার জনের একটি তালিকা করা হয় বলে জানা যায়৷

‘দুষ্কৃতকারী’ নিধন

পাকিস্তানপন্থী পত্রিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অভিহিত করা হতো ভারতীয় চর, দুষ্কৃতকারী হিসেবে৷ ‘রাজাকররা ৭০ জন দুষ্কৃতকারী হত্যা করেছে’, ‘ভারতীয় চরকে নির্মূল করেছে’, এমন শিরোনামে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি রায়ে বলা হয়েছে, ‘‘তাদের মূল কাজ হয়ে দাঁড়ায় গ্রামে-গঞ্জে অত্যাচার, নির্যাতন এবং সামরিক বাহিনীর অগ্রবর্তী পথপ্রদর্শক৷’’

আলবদরের সঙ্গে পার্থক্য

সেপ্টেম্বরে নিয়াজী গড়ে তোলেন আরেকটি আধা সামরিক বাহিনী আলবদর৷ বাংলাপিডিয়ায় মুনতাসীর মামুন লিখেছেন,

‘‘রাজাকারদের কার্যকলাপের সঙ্গে খানিকটা পার্থক্য ছিল আল-বদর বাহিনীর৷ রাজাকাররা সামগ্রিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধিতা করেছে৷ কিন্তু আল-বদর বাহিনীর লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক হত্যার মাধ্যমে নিরীহ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা৷ পাকিস্তান বিরোধী বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করা ছিল তাদের অন্যতম লক্ষ্য৷’’

‘তুই রাজাকার’

১৯৯০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত জনপ্রিয় ধারাবাহিক বহুব্রীহি৷ সেখানে একটি টিয়া পাখিকে ‘তুই রাজাকার’ বলতে শোনা যায়৷ এই সংলাপ পরবর্তীতে রূপ নেয় রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশের স্লোগানে৷ শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতেও ব্যবহার হয়েছে এই শব্দগুচ্ছ৷

সংগ্রহঃ- DW - ফয়সাল শোভন

Add comment

সংস্কৃতি এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.