Select your language

মাথাভাঙ্গা নদী
মাথাভাঙ্গা নদী

মাথাভাঙ্গা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রধান নদী পদ্মার দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা মাথাভাঙ্গা । জন্মলগ্ন থেকে মাথাভাঙ্গা ছিল পদ্মার প্রধান শাখা। প্রায় ৪০০ বছর আগে গঙ্গা ভাগিরথী দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় নদীতল বালি পড়ে ভরাট হয়ে গেলে মাথাভাঙ্গা প্রধান স্রোত বয়ে নিয়ে যেত।

ড. থমাস ওল্ডহ্যাম ১৮৭০ সালে এশিয়াটিক সোসাইটির কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করেছেন ভাগিরথী ও ভৈরবের মধ্যবর্তী জায়গা কালক্রমে নদীবাহিত পলি মাটি দিয়ে ভরাট হয়ে যায়। ফলে গতিমাত্রা আরো কমে গেলে পদ্মা পূর্ব দিকে সরে যায় এবং মাথাভাঙ্গার আবির্ভাব ঘটে। তবে বিখ্যাত সেচ বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম উইলকক্রের মতে, মাথাভাঙ্গা সেচের জন্য কাটা খাল ছাড়া কিছুই নয়।

অবিভক্ত নদীয়া জেলার প্রধান তিনটি নদীর মধ্য মাথাভাঙ্গা ছিল মুখ্য। মাথাভাঙ্গা নদীয়ার নদী হিসেবেই পরিচিত। এক সময় এ নদী খুব স্রোতস্বিনী ছিল। বহু জনপদ গ্রাস করে মানুষের মাথা ভেঙে দিয়েছিল বলে এর নাম হয়েছে মাথাভাঙ্গা। মতান্তরে, উৎমুখে মূল নদী পদ্মার সঙ্গে সংযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়া অর্থাৎ মাথা বা মুখ ভেঙে যাওয়ায় এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। তবে কোনো এক সময় এ নদীটি হাউলিয়া বা হাউলি নামে পরিচিত ছিল। ১৮৬২ সালে রেলপথ চালু হওয়ার আগে মাথাভাঙ্গা নদীপথেই কলকাতার সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ছিল।

মাথাভাঙ্গা নদী দামুড়হুদা উপজেলার বুক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে নদীয়া জেলায় ঢুকেছে। ১৭৭১ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মিস্টার রেনেলকে নদী জরিপ কাজে নিযুক্ত করে। ১৭৮০ সালে রেনেলের মানচিত্র প্রকাশিত হয়। এতে গ্রীষ্মকালে মাথাভাঙ্গায় বড় নৌকা চলাচলে বিঘ্ন ঘটে বলে উল্লেখ করা হয়। ১৭৯৫ সালে মাথাভাঙ্গা নদী জরিপ শেষে সংস্কার করে নৌ-বাণিজ্যের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়।

১৭৯৭ সালে পলি অবক্ষয়ের কারণে মাথাভাঙ্গার গভীরতা কমে যায়। ১৮১৩ সালে সরকার মাথাভাঙ্গা সংস্কারের জন্য কর ধার্য করে। ১৮১৯-২০ সালে জি কে রবিনসনকে মাথাভাঙ্গার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ও কালেক্টর নিয়োগ করা হয়। অপরদিকে মাথাভাঙ্গার বিপদ হয়ে দেখা দেয় তারই শাখা নদী কুমার। মাথাভাঙ্গার স্রোতের ৫ ভাগের ৪ ভাগ পানিই কুমার নদি দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় মাথাভাঙ্গার বিপদ ত্বরান্বিত হয়ে পড়ে।

১৮২৩ সালে প্রথমবারের মতো বঙ্গদেশে ১০ দশমিক ৪০০ পাউন্ড ব্যয়ে গরুচালিত ড্রেজিং মেশিন আনা হয়। কিন্তু সে বছর হঠাৎ মাথাভাঙ্গার গতি পরিবর্তন ঘটে। পরে ১৮৮১ সালে মাথাভাঙ্গা হঠাৎ নাব্য হয়ে ওঠে। এতে পরিষ্কার এতদঞ্চলের নদীর নব্য গঙ্গা ও পদ্মার প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে মাথাভাঙ্গা একটি বড় খালের আকারে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। অথচ ১৯৭১ সালেও উপজেলার দর্শনা পয়েন্টে মাথাভাঙ্গা পানিপ্রবাহের সর্বোচ্চ রেকড ছিল ১২ হাজার ৯০০ কিউসেক।

এই নদীটির দৈর্ঘ্য ১২১ কিলোমিটার, প্রস্থ ২৯ মিটার এবং দর্শনার নিকট গভীরতা ১০ মিটার। নদী অববাহিকার আয়তন ৫০০ বর্গকিলোমিটার। সাধারণত এই নদীর তীর উপচে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বন্যা হয় না। নদীটি জোয়ার-ভাটার প্রভাবমুক্ত। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক মাথাভাঙ্গা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৭৬।

মাথাভাঙ্গা নদীর উৎপত্তি মুর্শিদাবাদ জেলার জলাঙ্গির উৎস থেকে আনুমানিক ১৬ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে পদ্মা নদী হতে।

মাথাভাঙ্গা নদীটি উৎপত্তিস্থল থেকে কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলা পেরিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার হাওলি ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে ইছামতি-কালিন্দী নদীতে নিপতিত হয়েছে।

ইতিহাস এর অন্যান্য প্রবন্ধ

লালন স্মরণোৎসব  ২০২৪
লালন স্মরণোৎসব ২০২৪

লালন স্মরণোৎসব ২০২৪

  • Sub Title: একদিনের দোল পূর্ণিমার লালন স্মরণোৎসব ২০২৪

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন