বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী পান পাতা
কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী পান পাতা

পান গাছের পাতাকেই পান বলা হয়, এটি চিবিয়ে খাওয়া হয়। বাংলাদেশে পান খুবই পরিচিত খাবার। পান সাধারণত কোনকিছু খাওয়ার পর মুখে নিয়ে চিবানো হয়। অতিথি আপ্যায়নে কিংবা বৈঠকে আলোচনার টেবিলে পান দেওয়া আমাদের দেশের একটি পুরনো রেওয়াজ।

সাধারণত বয়স্ক লোকেরা পান খেয়ে থাকেন। শহর ও গ্রাম সর্বত্রই প্রচুর পান দোকান দেখা যায়। পান খাওয়ার প্রভাবে দাঁত লাল হয়ে যায়। দেশে-বিদেশে পানের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আমাদের কুষ্টিয়ায় প্রথা আছে পান নিয়ে, বিয়ে বাড়ীতে খাওয়া-দাওয়া শেষে পান খাওয়ানোর প্রথা চালু আছে। শুধু বিয়ে বাড়ীতে নই অন্যান্য অনুষ্ঠানেও খাওয়ার পর পান খাওয়ার প্রথা লক্ষ্য করা যায়।

বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলে অনেক আগে থেকেই পান চাষ হয়। বাংলাদেশের সেরা পান উৎপাদন হয় কুষ্টিয়া অঞ্চল থেকে। কুষ্টিয়ার পান বিশ্ব জোড়া সুনাম রয়েছে। বিদেশীরা কুষ্টিয়া এলে পান খেয়ে বেশ প্রশংসা করে। মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর, বিত্তিপাড়া, লক্ষ্মীপুর অঞ্চলে বেশী পানের বরজ চোখে পড়ে। এই অঞ্চলের পান পাতা গূলিও বেশ বড় বড় এবং খাইতে বেশ স্বাদ আছে।

দিন দিন বাড়ছে লাভজনক পান চাষ। এক একর জমিতে ৩শ পিলির পান বরজ করা যায়। এতে শ্যান, বাঁশ, উলে, পাটখড়ি, শলা, মজুরি ও রক্ষণাবেক্ষণসহ মোট খরচ পড়ে প্রায় ১২ লাখ টাকা। এক বছর পর ৩শ পিলির পান বরজ থেকে বিক্রি হয় প্রায় ২৪ লাখ টাকা। সময় ভেদে আরো বেশি হয়। এমনই লাভজনক ফসল পান চাষ আজ হুমকির মুখে। পান বরজ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।

পানচাষী আসলাম, মান্নান মাস্টার, রাজিম উদ্দীন, রুহুল আমিন জানান, ভেড়ামারার প্রধান অর্থকরী ফসল বলতে পান চাষ। এর ওপর নির্ভর করে এখানকার কৃষকের জীবন জীবিকা।

ভারত থেকে যথেচ্ছভাবে পান আমদানীর ফলে বিপাকে পড়েছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বিপুল সংখ্যক পানচাষী। ভারতীয় পানে দেশের মোকামগুলো সয়লাব হয়ে যাওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছেন না স্থানীয় পানচাষীরা। সবচেয়ে মুসকিলে পড়েছেন বর্গাচাষীরা। বাজার মন্দা হওয়ায় ক্ষেতের ফসল বিক্রি করে সংসার চালানো দূরের কথা, বর্গার টাকাও উঠছেনা তাদের।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ৫২০ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হচ্ছে। উপজেলার মুথরাপুর, মাদাপুর, বাগোয়ান, তারাগুনিয়া, শালিমপুর, হিসনাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষকদের জীবন জীবিকা চলে পান চাষ করে। কৃষকারা জানান, সারা বছর ধরে পান বিক্রি করা হলেও মুলত শীতকালে বেশিরভাগ পান বিক্রি করা হয়। তবে পান বিক্রির প্রধান মৌসুমে হঠাৎ করে পাশের দেশ ভারত থেকে পান আমদানী করায় হুমিকের মুখে পড়েছেন এখানকার প্রায় ৫০ হাজার পানচাষী।

অবাধে ভারতের পান আসলে দেশের মোকামগুলোতে মারাত্মকভাবে কমে যায় পানের দাম। ফলে বাজারে পান বেচে উৎপাদন খরচই উঠেনা। মথুরাপুর গ্রামের কৃষকরা জানান, ভারত হতে পান আসলে অর্ধেক দামও পান না পান হতে। কারণ, বেসরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বিপুল পরিমান পান আমদানী করা হচ্ছে। বাগোয়ান গ্রামের পানচাষী আব্দুল ওদুদ বলেন, পান বরজ তৈরীতে প্রচুর খরচা হয়। তিনি বলেন ভারত থেকে পান আমদানীর ফলে পানের দাম কমে গেলেও বরজের প্রধান উপকরণ পাটকাঠি, খড় ও বাঁশের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে এখন পান বিক্রি করে উৎপাদন খরচই উঠছে না।

সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, অনেক প্রান্তিক কৃষক প্রতি বিঘা জমি বছরে ২০ হাজার টাকায় বর্গা নিয়ে পান চাষ করেন। পানের দাম পড়ে যাওয়ায় এখন তারা বর্গার টাকা শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। একই সাথে বেকায়দায় পড়েছেন পান ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। দৌলতপুর পানচাষী সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, পান চাষীদের রক্ষায় অবিলম্বে ভারত থেকে পান আমদানী বন্ধ করা দরকার। না হলে এ উপজেলার বিপুল পরিমান পানচাষী পথে বসবেন। তিনি বলেন, দেশে যে পান উৎপাদন হয় তাতেই দেশের চাহিদা মিটে যায়। এরপরও ভারত থেকে পান আমদানী করায় বিস্ময় প্রকাশ করেন এই কৃষক নেতা। দেশের পানচাষীদের স্বার্থে সরকার অনতিবিলম্বে ভারত থেকে পান আমদানী বন্ধে পদক্ষেপ নেবে এমন প্রত্যাশা কুষ্টিয়ার পানচাষী, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
আমরা কুকিজ ব্যবহার করি
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে কুকিজ ব্যবহার করি। তাদের মধ্যে কিছু সাইট পরিচালনার জন্য অপরিহার্য, অন্যরা আমাদের এই সাইট এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করে (কুকিজ ট্র্যাক করা)। আপনি কুকিজকে অনুমতি দিতে চান কিনা তা আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দয়া করে মনে রাখবেন যে আপনি যদি সেগুলি প্রত্যাখ্যান করেন তবে আপনি সাইটের সমস্ত কার্যকারিতা ব্যবহার করতে পারবেন না।