বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

কুষ্টিয়ার সর্বজেষ্ঠ বিজ্ঞ আইনজীবী [ সাবেক এম.পি ]  আলহাজ্ব মরহুম আব্দুর রহিম
কুষ্টিয়ার সর্বজেষ্ঠ বিজ্ঞ আইনজীবী [ সাবেক এম.পি ] আলহাজ্ব মরহুম আব্দুর রহিম

১৯২১ সালে কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বাড়াদী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে এডঃ আব্দুর রহিম জন্ম গ্রহন করেন। তাহার পিতা মরহুম মুন্সী হোসেন আলী ছিলেন পেশায় একজন গৃহস্ত। জনাব হোসেন আলীর দুই পুত্র মরহুম মোঃ আব্দুল করিম ও মরহুম আব্দুর রহিম এবং দুই কন্যা।

শিক্ষা জীবন – শিক্ষা জীবনে এডঃ আব্দুর রহিম অত্যন্ত কৃতিত্বের এবং মেধার সাক্ষর রেখেছিলেন। পৈত্রিক নিবাস কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হয় তার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন। ১৯৩৩ সালে সুলতানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেনী থেকে বৃত্তি পরীক্ষায় তৎকালীন নদীয়া জেলার মধ্যে তিনি ২য় স্থান অধিকার করেন। প্রাইমারী শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হন তৎকালীন ইউনাইটেড হাই স্কুলে [বর্তমানে কুষ্টিয়া হাই স্কুল] ১৯৩৮ সালে ম্যট্রিকুলেশন পরীক্ষায় ষ্টান্ড করেন। ১৯৪০ সালে কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজ থেকে তিনি ২য় বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ১৯৪২ সালে তিনি একই কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে বিএ পাশ করেন ১৯৪৩-১৯৪৪ সালে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিটি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ১৯৪৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন – প্রবীন আইনজীবী আব্দুর রহিম কর্মময় জীবনে আইন শাস্ত্রে প্রাজ্ঞ, রাজনীতি, সমাজ নীতি, ধর্মনীতি, দর্শন সহ বিভিন্ন অঙ্গনে অসম্ভব প্রতিভাময়ী ও বৈচিত্রময় জীবনের অধিকারী ছিলেন। অসম্ভব ধৈর্য আর সহনশীল ছিলেন তিনি। জীবনে তিনি কোন কিছুকেই প্রতিবন্ধকতা মনে করননি। শিক্ষা জীবন থেকে তিনি সরাসরি নেমে পড়েন কর্মজীবনে। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতেন। ১৯৪৫ সালে মুর্শিদাবাদ সরকারী স্কুলে তিনি ইংরেজী শিক্ষক হিসাবে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। তিনি অত্যাধিক মেধাবী ও প্রাজ্ঞ হওয়ায় ঐ সময়ে স্কুল পরিদর্শকের চাকুরী পান। কিন্তু তিনি চাকুরীতে যোগদান করেন নাই। ১৯৪৭-১৯৪৮ সালে ভেড়ামাড়া হাইস্কুলে রেক্টর হিসেবে কিছুদিন চাকুরী করেন। ১৯৪৯ সালে কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ নিয়ে আইন পেশায় আত্তনিয়োগ করেন।

তিনি জনাব এডভোকেট মাহাতাব উদ্দিনের জুনিয়র হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং সেই থেকেই আমৃত্যু পর্যন্ত অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে আইন পেশায় নিয়মিত নিয়োজিত ছিলেন আইন পেশায় থাকা অবস্থায় তিনি বিভিন্ন সময়ে জি,পি ও পি,পি এর দ্বায়িত্ব সুনামের সঙ্গে পালিন করেন। তিনি ঢাকা ল কলেজের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১০ বারেরও অধীক সময়ে কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির একজন সদস্য ছিলেন। এডঃ আব্দুর রহিম ৫০ বছরের অধিক সময় আইন পেশায় নিয়োজিত থাকার জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিল তাকে ২০০০ সালে ৫০ বর্ষপুর্তি উপলক্ষে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান করেন। কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির তিনি ছিলেন সর্বজৈষ্ট ও বটবৃক্ষসম ব্যক্তিত্ত্ব।

রাজনৈতিক জীবন - বিচিত্র জ্ঞান ও রাজনৈতিক প্রাজ্ঞ এড: আব্দুর রহিমের রাজনৈতিক জীবন ছিলো অত্যন্ত সফল। ১৯৬২ সালে তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতিতে অংশগ্রহন করে রাজনৈতিক জীবনের পদচারনা শুরু করেন। এ সময় তিনি পাকিস্তান সফর করেন। ১৯৭৮ সালে যুবদলে যোগদান করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি বি,এন,পি র প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান। ঐ বৎসরে তিনি বি,এন,পি র নির্বাচিত সাংসদ হন। তিনি সাংসদ থাকাকালীন সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে জাপান সফর করেন। আব্দুর রহিম সাহেব কুষ্টিয়ার মৌলভী আফসার উদ্দীন, জেহের মন্ডল সহ কুষ্টিয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রিয়ভাজন ছিলেন।

সামাজিক অবদান - জনাব আব্দুর রহিম একজন দয়ালু ব্যক্তি ছিলেন। কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা আদালতে তার প্রচুর চাহিদা ছিলো। কিন্তু দিন শেষে যখন বাড়ী ফিরতেন তখন তার পকেট প্রায় শুন্য হয়ে যেত। তিনি যখন বাড়ী যাওয়ার জন্য রিক্সায় উঠতেন ১৫/২০ জন গরীব মিসকিন তাকে ঘিরে ধরত আর তিনি সবাইকেই সাধ্যমত টাকা দিতেন। অনেক মহরী ও জুনিয়র এডভোকেট তার নামে কেস নিয়ে তাকে দিয়ে কেস লড়াতেন এবং তিনি তাদের সবাইকেও খুশি করতেন বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহোযোগীতা করে এমন কথা অনেক প্রচলিত আছে। বহু গরিব মানুষের মামলা মকর্দমা বিনা পয়সায় করে দিতেন তিনি।

সমাজ সংস্কারক - অবহেলিত পিছিয়ে পড়া আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থা দেখে এড: আব্দুর রহিমের মন যেন কেদে উঠত। তাই তিনি সমাজের নানা উন্নয়ন মুলক কাজ করে গেছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়ক নির্মান, কুষ্টিয়া চাদ সুলতানা বালিকা বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ, কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ, ইত্যাদি প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন। তিনি কুষ্টিয়া ল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক। কুষ্টিয়া মুসলিম হাই স্কুল, মহিনী মোহন বিদ্যাপিঠ, কুষ্টিয়া হাই স্কুল, সুলতানপুর মাহতাবিয়া স্কুল, কুষ্টিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, আফসার উদ্দিন বালিকা বিদ্যালয়, সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তিনি সভাপতি, সহ সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক ছিলেন। কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশন জামে মসজিদের ও হোসেনিয়া ও আব্দুল করিম দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের গভর্নিং কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ২০০১ সালে পবিত্র হজ্ব পালন করেন।

পারিবারিক জীবন - তিনি কোন বিত্ত বৈভবপুর্ন নয়। তিনি একেবারে সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। তার তিন পুত্র চার কন্যা ও স্ত্রী হোসনে আরা। ১ম পুত্র এড: মাহদী হাসান মুকু একজন আয়কর আইনজীবী ও কুষ্টিয়া বারের একজন সদস্য, ২য় পুত্র ঈমান হাসান তুহিন বর্তমানে আমেরিকাতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, ৩য় পুত্র ঈমাম হাসান তুষার নিজ বাড়ীতেই থাকতেন। ১ম কন্যা ইয়াছিরা মহসেনা বি,এস,সি বর্তমানে কুষ্টিয়া কলকাকলি স্কুলের শিক্ষিকা, বিবাহিতা, ২য় কন্যা মুনিরা মোমেন বি, এ (সম্মান) অর্থনীতি, বিবাহিতা, ৩য় কন্যা ডা: হুমাইয়া মুসলিম, এম,বি,বি,এস বিবাহিতা বর্তমানে আমেরিকাতে বসবাস করেন চতুর্থ কন্যা মহয়ানা এম, এ রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিবাহিতা তাহার তিন ভাতিজা কুষ্টিয়া আইনজীবী সমিতির বিজ্ঞ সদস্য এড: আব্দুল্লাহ হেল বাকী, এড: জাহাঙ্গীর আলম গালিব ও সালমা আখতার।

মুসলিম লীগ থেকে পদত্যাগ করে শেখ মুজিবের ৬ দফায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত তার বাড়ীতে ৬ দফার কার্যক্রমের অস্থায়ী অফিস হিসাবে কাজ হয়। কুষ্টিয়ার বাড়ীতে তৎকালীন ছাত্রনেতা আব্দুর রাজ্জাক , তোফায়েল আহমেদ, আসম আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ, শেখ শহিদুল ইসলাম, মনিরুল চৌধুরী, জিন্নাত আলী, কাজী আরেফ, হাসানুল হক ইনু সহ অনেক ছাত্র নেতা থাকা খাওয়া করেছেন। উনার বাসায় ছাত্রলীগের প্রায় সভা হতো। স্থানীয় ছাত্র নেতা যেমন - শেখ দলিল, মারফত আলী, সামসুল হাদী, বাহাউদ্দীন, আখতারুজ্জামান মাসুম, মুর্শেদ আলম মধু, জাহিদ হোসেন, আব্দুল হান্নান, ফজলুল হক, সামসুল বারী, ইয়াকুব আলী, গাংনীর মহিউদ্দিন, জহরুল ইসলাম, মির্জা জিয়াউল বারী নোমান, শহিদুল ইসলাম কিসলু, আব্দুল বারী, নুর আলম জিকু, আক্কাস আলী মঞ্জু, সামছুল হুদা, আব্দুল জলিল সহ অনেকেই প্রায়ই সভা করে ৬ দফা তথা ১ দফা আন্দোলনের গোপন বৈঠক করতো।

৬৯ এর গন আন্দোলনের গোপন বৈঠকের স্থানই ছিলো উনার বাড়ী। যার কারনে প্রায়ই পুলিশ হানা দিত। ছাত্রনেতা আব্দুল মোমেন উক্ত বাড়ীতে থাকতেন এবং সেখান থেকে ছাত্র রাজনীতি করার জন্য উৎসাহ দিতেন যার জন্য উনাকে প্রশাসন দ্বারা অপদস্থ হতে হয়েছে। পিপি থাকার কারনে কুষ্টিয়ার অনেক নেতাকে সেই সময় গ্রেফতার হতে হয়নি।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.