১৯৭১ সালের ১২ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ সাঁড়াশি আক্রমনের মুখে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীসহ তাদের এ দেশীয় দোসররা পিছু হটে। ১১ ডিসেম্বর রাতে পাকহানাদাররা পরাস্ত হয়ে ভেড়ামারা-পাকশি হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ওপর মাইনস চার্জ (বোমা) নিক্ষেপ করে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১২ নং স্প্যানটির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে পদ্মা নদী পার হয়ে পালিয়ে গেলে ১২ই ডিসেম্বর এ শহরটি শত্রু মুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৮ নং সেক্টরের অধীনে ছিলো কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা।
এখানে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকহানাদার বাহিনীর মধ্যে অন্তত ১৫টি খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এসব যুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়াই করে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এরা হলেন- মোকারিমপুর ইউনিয়নের গোলাপনগর গ্রামের রফিকুল ইসলাম (বীর প্রতীক), চাঁদ আলী, লুৎফর রহমান, দক্ষিণ ভবানীপুর গ্রমের গিয়াস উদ্দীন, সাতবাড়ীয়া গ্রামের সোহরাব হোসেন, চাঁদগ্রামের উজির আলী, এবং সাতবাড়ীয়া গ্রামের নজরুল ইসলাম। এছাড়াও এসব যুদ্ধে পাকহানাদারদের নির্মমতার শিকার হয়ে অন্তত শতাধিক মুক্তিকামী মানুষ শহীদ হয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের পর ভেড়ামারার যুব সমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তির সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তখন ফ্রিডম ফাইটার নামে ৫টি, অ্যাকশন কমিটি নামে ১টি এবং পলিটিক্যাল নামে ১টি কমিটি গঠন করা হয়।
ফ্রিডম ফাইটার কমিটির নেতৃত্ব দেন কমান্ডার মহিউদ্দীন বানাত, কমান্ডার আব্দুর রহমান, কমান্ডার মোকাদ্দেস হোসেন, কমান্ডার তোবারক হোসেন। পলিটিক্যাল কমিটির নেতৃত্ব দেন কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম এবং ভেড়ামারা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অ্যাড. আলম জাকারিয়া টিপু। স্বল্প সময়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৭৩ জন মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে একযোগে চতুর্দিক থেকে একের পর এক পাক ঘাঁটি আক্রমন করে ধ্বংস করে রাজাকার আলবদরদের আস্তানা।
সর্বশেষ ১১ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর দুর্বার প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দিয়ে পাকহানাদার বাহিনী পালিয়ে যায়। পাকহানাদাররা এ সময় মাইনস চার্জ (বোমা) নিক্ষেপ করে হাডিঞ্জ ব্রিজের ১২নং স্প্যানটির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। ১২ই ডিসেম্বর ভেড়ামারা শত্রু মুক্ত হয়।