বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

বাউল কবি রশিদ উদ্দিন

বাউল কবি রশিদ উদ্দিন

বাউল সাধক রশিদ উদ্দিন ছোটবেলা থেকেই ছিলেন আত্নভোলা। তাই বড় ভাইয়ের নিকট বাল্য শিক্ষা পাঠ ছাড়া কোন বিদ্যালয়ে তার লেখাপড়া হয়নি। রশিদ উদ্দিন ১৫/১৬ বছর বয়সে পার্শ্ববর্তী পুখুরিয়া গ্রামের টাকনা মিস্ত্রীর সান্নিধ্যে এসে একটু একটু করে একতারা বাজিয়ে বাউলগান শিখতে শুরু করেন। তখন বাহিরচাপড়া গ্রামে কৃষ্ণলীলা গান শুরু হয়। রশিদ উদ্দিন কৃষ্ণের অভিনয় করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। এ সময় পার্শ্ববর্তী বাংলা বেতাটিসহ সর্বত্র কবিগানের ব্যাপক প্রসার ছিল। দুর্গাপূজা, কালীপূজা, দোলপূজাসহ হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে কবি গান ছিল অত্রাঞ্চলে এক বিশেষ আকর্ষণ। পাশাপাশি টিপু পাগলের নেতৃত্বাধীন পরিচালিত ১৮২৭ সনে ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার পর লেংটা ফকিরদের জলসা ছিল নিত্য দিনের ব্যাপার। তখন বাহিরচাপড়া গ্রামে কিশোরগঞ্জের কঠিয়াদী থেকে এক লেংটা পীরের আগমন ঘটে। ১৯০৯ সনে রশিদ উদ্দিন এ লেংটা শাহের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে নিজ বাড়িতে হাল্কা জিকিরের জলসায় মেতে উঠেন। এ জলসায় বাংলার দীনা মাঝি ও পুখুরিয়ার টকনা মিস্ত্রী ছিল রশিদের নিত্য রাতের সাথী। নেত্রকোণার প্রখ্যাত বাউল কবি জালাল খাঁ তখন রশিদ উদ্দিনের বাড়িতে লজিং থেকে নেত্রকোণা স্কুলে লেখাপড়া করতেন। জালাল খাঁ তখন থেকেই রশিদ উদ্দিনের নিকট বাউল গানের তালিম নেয়া শুরু করেন। বাউল সাধক রশিদ উদ্দিন তার বড় ছেলে আরশাদ উদ্দিনের দুই বছর বয়সের সময় ছেলেকে মৃত্যু শয্যায় রেখে হঠাৎ রাতে গৃহত্যাগ করেন। তখন রশিদ উদ্দিনের গৃহত্যাগের সংবাদ পেয়ে জালাল খাঁ ১৯২৮ সনের মার্চ মাসে এক পুত্র ও এক কন্যাকে সিংহের গ্রামস্থ শ্বশুরালয়ে রেখে বালুয়াখালীর সিদ্দিক জমাদারের বাড়িতে এসে রশিদ উদ্দিনের গৃহত্যাগের অথ্য সগ্রহপূর্বক সন্ধানে বের হন এবং দীর্ঘ নয় মাস পর রশিদ উদ্দিনকে শারফিনের মাজারে খুঁজে বের করেন। জালাল খাঁ শারফিন থেকে রশিদ উদ্দিঙ্কে সঙ্গে নিয়ে বালুয়াখালী ফিরে আসেন। রশিদ উদ্দিন তখন থেকে প্রায় দুই বছর ভাত খাওয়া ছেড়ে দেন। তখন তিনি শুধু দুধ ও রুটি খেতেন। রশিদ উদ্দিনের এ উদাসী ভাব দেখে বাউল কবি জালাল খাঁ স্থায়ীভাবে রশিদের সঙ্গে থাকার জন্য সিদ্দিক জমাদারের মেয়ের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন এবং জালাল খাঁ রশিদের শিষ্যরূপে বাউল সাধনায় মনোনিবেশ করেন। তাই জালাল খাঁ রশিদ উদ্দিনের অন্যতম সহকর্মী ও সাগরেদ।

রশিদ উদ্দিনের অবস্থা তখন পাগল প্রায়। মানুষ-মানবদেহ-প্রকৃতি সৃষ্টিরহস্য, গুরু সাধন, নিঘোর তত্ত্ব, আত্না-পরমাত্না বিষয়ক চিন্তা তাঁর হৃদয়কে ব্যাকুল করে তোলে। তখন রশিদ উদ্দিনের বাড়ি বৈঠকী বাউলগানের এক আখড়ায় পরিণত হয়। গান ছিল তখনকার সার্বজনীন বিষয়। কবি গানে সাধারণত হিন্দু শাস্ত্রের মহাভারত, রামায়ণ, গীতা কেন্দ্রিক দুই কবির মধ্যে কবিতার ছন্দে প্রশ্ন ও উত্তর চলত। আর জারিগান ছিল জংগনামার পুঁথি ও শহীদি কারবালা ভিত্তিক দুই বয়াতির তর্কানুষ্ঠানের মাধ্যমে দলবদ্ধ গান। কবিগান ছিল হিন্দু শাস্ত্র এবং জারি গান ছিল মুসলিম দর্শন ভিত্তিক। এ কবি গান ও বয়াতিদের শাস্ত্রভিত্তিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা রশিদ উদ্দিনকে বাউল গানে বিভিন্ন তত্ত্ব ভিত্তিক সুর ছন্দে ও সুললিত ভাষায় তর্কানুষ্ঠানে উৎসাহিত করে। এ লক্ষ্যে রশিদ উদ্দিনের বাড়ি আস্তে আস্তে বাউল তত্ত্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হয়। এ কেন্দ্রে সহযোগী হিসেবে খালিয়াজুরী থানার বাউল সাধক উকিল মুন্সী, মোহনগঞ্জ থানার হাসলার চান খাঁ, মদন থানার হাজরাগাতির পিতাম্বর রবিদাস সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

  • ভাবের দেশে চলরে মানুষ

    দেখবে খোদার মহান ছবি

    দেখবে খোদার মহান ছবি
    তোমার চর্ম চক্ষের দরজা খুলো
    ভাবের দেশে চলরে মানুষ
    ধ্যানের দেশে চলো।।
  • আমি বলব কি শুনবে কে বুঝবে কিরে ধুন্দা

    এই দুনিয়া মায়ার জালে বান্ধা

    আমি বলব কি শুনবে কে বুঝবে কিরে ধুন্দা
    এই দুনিয়া মায়ার জালে বান্ধা।।
  • মন তুই দেখবি বল কারে ?

    সকল গোল-মাল মিটে যাবে তারে দেখলে

    সকল গোল-মাল মিটে যাবে তারে দেখলে
    সু-নজরে দেখবি বল কারে মন তুই দেখবি বল কারে।।
  • বাউল

    বাউল (Baul) একটি বিশেষ লোকাচার ও ধর্মমত। এই মতের সৃষ্টি হয়েছে বাংলার মাটিতে। বাউলকূল শিরোমণি লালন সাঁইয়ের গানের মধ্য দিয়ে বাউল মত পরিচতি লাভ করে। বাউল গান যেমন জীবন দর্শনে সম্পৃক্ত তেমনি সুর সমৃদ্ধ। বাউলদের সাদামাটা কৃচ্ছসাধনার জীবন আর একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানোই তাদের অভ্যাস। ২০০৫ সালে ইউনেস্কো বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে বাউল গানকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষনা করে।

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
আমরা কুকিজ ব্যবহার করি
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে কুকিজ ব্যবহার করি। তাদের মধ্যে কিছু সাইট পরিচালনার জন্য অপরিহার্য, অন্যরা আমাদের এই সাইট এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করে (কুকিজ ট্র্যাক করা)। আপনি কুকিজকে অনুমতি দিতে চান কিনা তা আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দয়া করে মনে রাখবেন যে আপনি যদি সেগুলি প্রত্যাখ্যান করেন তবে আপনি সাইটের সমস্ত কার্যকারিতা ব্যবহার করতে পারবেন না।