শব্দটি যেভাবে এলো
রাজাকার ফারসি শব্দ৷ যার অর্থ স্বেচ্ছাসেবী৷ ১৯৪০ এর দশকে ভারতের হায়দ্রাবাদের নিজাম ওসমান আলী খানের শাসনামলে একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন কাসেম রিজভী৷ এই বাহিনীর নাম দেয়া হয়েছিল রাজাকার৷
পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনী
হায়দ্রাবাদের সেই সশস্ত্র বাহিনীর অনুকরণেই ১৯৭১ সালে রাজাকার বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানের সামরিক সরকার৷ মে মাসে খুলনায় খান জাহান আলী রোডের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন কর্মী নিয়ে এই বাহিনী গড়ে তোলা হয়৷ ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রধান মো. ইউসুফকে রাজাকার বাহিনীর সর্বাধিনায়ক করা হয়৷ শুরুতে ১০টি জেলায় ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতাদের রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্বে দেওয়া হয়৷
শান্তি কমিটি থেকে সেনাবাহিনী
‘‘প্রথম পর্যায়ে রাজাকার বাহিনী ছিল এলাকার শান্তি কমিটির নেতৃত্বাধীন৷ ১৯৭১ সালের ১ জুন জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারি করে আনসার বাহিনীকে রাজাকার বাহিনীতে রূপান্তরিত করেন৷ এর নেতৃত্ব ছিল পাকিস্তানপন্থী স্থানীয় নেতাদের হাতে৷ পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৭ সেপ্টেম্বর জারিকৃত অধ্যাদেশে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনী সদস্যরূপে স্বীকৃতি দেয়৷’’
প্রশিক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে রাজাকার বাহিনীর প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছিল ১৫ দিন৷ ১৯৭১ সালের ১৪ জুলাই কুষ্টিয়ায় এই বাহিনীর প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হয়৷ ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর রাজাকার বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডারদের প্রথম ব্যাচের ট্রেনিং শেষে সাভারে বিদায়ী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন জেনারেল এ.কে নিয়াজি৷ পরবর্তী পর্যায়ে এই বাহিনীকে একটি স্বতন্ত্র অধিদপ্তরের মর্যাদা দেওয়া হয়৷
রাজাকারের সংখ্যা
ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস এর গবেষণা অনুযায়ী রাজাকারের সংখ্যা ছিল ৫০ হাজারের মতো৷ জেনারেল নিয়াজী তার বইতে এই সংখ্যা উল্লেখ করেছেন৷ স্বাধীনতার পর রাজাকারদের বিচারে ৩৭ হাজার জনের একটি তালিকা করা হয় বলে জানা যায়৷
‘দুষ্কৃতকারী’ নিধন
পাকিস্তানপন্থী পত্রিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অভিহিত করা হতো ভারতীয় চর, দুষ্কৃতকারী হিসেবে৷ ‘রাজাকররা ৭০ জন দুষ্কৃতকারী হত্যা করেছে’, ‘ভারতীয় চরকে নির্মূল করেছে’, এমন শিরোনামে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি রায়ে বলা হয়েছে, ‘‘তাদের মূল কাজ হয়ে দাঁড়ায় গ্রামে-গঞ্জে অত্যাচার, নির্যাতন এবং সামরিক বাহিনীর অগ্রবর্তী পথপ্রদর্শক৷’’
আলবদরের সঙ্গে পার্থক্য
সেপ্টেম্বরে নিয়াজী গড়ে তোলেন আরেকটি আধা সামরিক বাহিনী আলবদর৷ বাংলাপিডিয়ায় মুনতাসীর মামুন লিখেছেন,
‘‘রাজাকারদের কার্যকলাপের সঙ্গে খানিকটা পার্থক্য ছিল আল-বদর বাহিনীর৷ রাজাকাররা সামগ্রিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধিতা করেছে৷ কিন্তু আল-বদর বাহিনীর লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক হত্যার মাধ্যমে নিরীহ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা৷ পাকিস্তান বিরোধী বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করা ছিল তাদের অন্যতম লক্ষ্য৷’’
‘তুই রাজাকার’
১৯৯০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত জনপ্রিয় ধারাবাহিক বহুব্রীহি৷ সেখানে একটি টিয়া পাখিকে ‘তুই রাজাকার’ বলতে শোনা যায়৷ এই সংলাপ পরবর্তীতে রূপ নেয় রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশের স্লোগানে৷ শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতেও ব্যবহার হয়েছে এই শব্দগুচ্ছ৷
সংগ্রহঃ- DW - ফয়সাল শোভন