বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

শাঁইজীর আখড়াবাড়ীতে মানুষ রতনের ভীড়
শাঁইজীর আখড়াবাড়ীতে মানুষ রতনের ভীড়

“বাড়ির কাছে আরশিনগর, সেথা এক পড়শি বসত করে” এই স্লোগানে আজ বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী বাউল সম্রাট মরমী সাধক ফকির লালন শাঁইজীর ১২৯তম তিরোধান (মৃত্যুবার্ষিকী) দিবসের অনুষ্ঠানমালা ও লালন গ্রামীণ মেলা। এ উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় শাঁইজীর বারামখানার আখড়া বাড়ীতে মানুষ রতনের ভীড় বাড়ছে।

মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ্‌ বাঙালির চেতনায় এক অবিস্মরণীয় কালপুরুষ। তাঁর গানের মাঝেই লুকিয়ে আছে সৃষ্টির রহস্য। সৃষ্টিকর্তার সাথে আত্মিক সম্পর্ক তাঁর গানের মূলমন্ত্র। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে একই স্রোতধারায় আনার জন্য আমরণ কাজ করেছেন এই মরমী সাধক। বাউল সম্রাট ফকির লালন শাঁইজীর সঙ্গীত আজও আমাদের অনুপ্রানিত করে। সাধু-গুরু-বাউলদের পদচারণায় আখড়াবাড়ি মিলন মেলায় পরিণত হবে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কুষ্টিয়া লালন একাডেমির আয়োজনে তিরোধান দিবস পালন উপলক্ষ্যে আখড়া বাড়ীতে সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ সত্য সু-পথের সন্ধানে মানবতার দিক্ষা নিতে ইতোমধ্যেই আত্মার টানে দেশ-বিদেশের সাধুগুরু ও ভক্তরা দলে দলে এসে আসন গেড়েছে শাঁইজীর মাজারে। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী এবারও তিনদিনের এ উৎসব পালিত হচ্ছে। বিগত কয়েক বছর ধরে তা বাড়িয়ে পাঁচদিনের প্রথা চালু করা হয়েছিল।

আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হোক আমাদের দিন বদলের অনুপ্রেরণা এই মুলমন্ত্র বাস্তবায়িত করতে বাউল সম্রাটের ১২৯তম তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠানমালাকে সাজানো হয়েছে ৩ দিনব্যাপী। মূল উৎসব শুরু হওয়ার ৫/৬ দিন আগ থেকে আখড়ায় আসা বাউল সাধকরা মাজারের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে গেয়ে চলেছে শাঁইজীর আধ্যাত্মিক মর্মবাণী ও ভেদ তথ্যের গান। জমজমাট এখন লালন শাহের আখড়া বাড়ি। কুষ্টিয়া পরিণত হয়েছে উৎসবের শহরে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতায় ও লালন একাডেমীর আয়োজনে আজ ১৬ই অক্টোবর বুধবার থেকে শুরু হয়ে একটানা ১৮ই অক্টোবর শুক্রবার পর্যন্ত ৩ দিনব্যাপী বাউল সম্রাট সাধক ফকির লালন শাহের ১২৯তম তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান চলবে। আখড়া বাড়ীতে মঞ্চ ও লালন মেলার স্টল নির্মাণ ও মাজার ধোয়া মোছার কাজ শেষ করা হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে। ৩ দিনব্যাপী বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবসের (মৃত্যুবার্ষিকী) অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের এমপি মাহবুবউল আলম হানিফ। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনের এমপি জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের এমপি আঃ কাঃ মঃ সরওয়ার জাহান বাদশা, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালি) আসনের এমপি ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খঃ মহিদ উদ্দিস, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভির আরাফাত, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারন সম্পাদক আজগর আলী, পিপি এ্যাডঃ অনুপ কুমার নন্দী। মুখ্য আলোচক হিসেবে থাকছেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান। আলোচক থাকছেন লালন মাজারের প্রধান খাদেম মহম্মদ আলী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজাদ জাহান। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন লালন একাডেমির এডহক কমিটির সদস্য সচিব এনডিসি এ বি এম আরিফুল ইসলাম।

লালন একাডেমীর সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন বলেন,‘ এবারই প্রথম মিউজিয়ামে লালনের জীবন আলেখ্য তৈরি করা হয়েছে। তার এখানে আসা থেকে শুরু করে আশ্রম তৈরিসহ জীবনের শেষ বেলার নানা স্মৃতি তুলে ধরা হয়েছে। আর অনুষ্ঠান ঘীরে বাউল, সাধূদের জন্য সব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন,‘ তিনস্তরের নিরাপত্তা ছাড়াও ৬টি প্রবেশ পথে তল্লাশী চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিপুল পরিমান মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় ৬ শতাধিক ফোর্স মোতায়েন করা হবে। এছাড়া নদীতে টহল থাকবে।’

উল্লেখ্য, বৃটিশ শাসকগোষ্ঠির নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিল, ঠিক সেই সময়ই সত্যের পথ ধরে, মানুষ গুরুর দিক্ষা দিতেই সেদিন মানবতার পথ প্রদর্শক হিসাবে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র আবির্ভাব ঘটে কুমারখালির ছেঁউড়িয়াতে। লালনের জন্মস্থান নিয়ে নানা জনের নানা মত থাকলেও আজো অজানায় রয়ে গেছে তাঁর জন্ম রহস্য। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। আর্থিক অসংগতির কারনে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। যৌবনকালে পূর্ণ লাভের জন্য তীর্থ ভ্রমনে বেরিয়ে তার যৌবনের রূপান্তর ও সাধন জীবনে প্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। তীর্থকালে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে তার সঙ্গীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করে। পরে মলম শাহ’র আশ্রয়ে জীবন ফিরে পাওয়ার পর সাধক সিরাজ সাঁইয়ের সান্নিধ্যে তিনি সাধক ফকিরী লাভ করেন। ভক্ত মলম শাহের দানকৃতষোল বিঘা জমিতে ১৮২৩ সালে লালন আখড়া গড়ে ওঠে। প্রথমে সেখানে লালনের বসবাস ও সাধনার জন্য বড় খড়ের ঘর তৈরী করা হয়। সেই ঘরেই তাঁর সাধন-ভজন বসতো। ছেঁউড়িয়ার আঁখড়া স্থাপনের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিষ্যভক্তদের নিয়ে পরিবৃত থাকতেন। তিনি প্রায় এক হাজার গান রচনা করে গেছেন। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর ভোরে এই মরমী সাধক বাউল সম্রাট দেহত্যাগ করেন এবং তাঁর সাধন-ভজনের ঘরের মধ্যেই তাকে সমাহিত করা হয়। আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হবে লালন সঙ্গীত। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন দেশের খ্যাতনামা শিল্পীবৃন্দসহ লালন একাডেমীর স্থানীয় শিল্পীরা।

তথ্য সুত্রঃ- আরিফ মেহমুদ - আন্দোলনের বাজার

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
আমরা কুকিজ ব্যবহার করি
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে কুকিজ ব্যবহার করি। তাদের মধ্যে কিছু সাইট পরিচালনার জন্য অপরিহার্য, অন্যরা আমাদের এই সাইট এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করে (কুকিজ ট্র্যাক করা)। আপনি কুকিজকে অনুমতি দিতে চান কিনা তা আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দয়া করে মনে রাখবেন যে আপনি যদি সেগুলি প্রত্যাখ্যান করেন তবে আপনি সাইটের সমস্ত কার্যকারিতা ব্যবহার করতে পারবেন না।