স্মরণোৎসবের ২য় দিনের আলোচনায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি বলেছেন, আমার প্রথম আসা এই বাউল আখড়াবাড়িতে। এসেই বুঝলাম এই মহাজ্ঞানী লালনের সৃষ্টির কৃর্তি আজ আর কুষ্টিয়ার কুমারখালির ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ীর মধ্যে আবদ্ধ নেই। লালন সাঁইয়ের সৃষ্টি বিশ্বে সর্বাজনীন হয়ে উঠেছে। মানব সেবার ব্রত নিয়ে অসংখ্য গান লিখে গেছেন। তাঁর এই অমর সৃষ্টি সঙ্গীত কোন ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
এদিকে যেমন তাঁর সৃষ্টি ছড়িয়েছে বিশ্বে তেমনি তাঁকে নিয়ে হচ্ছে উন্নতর গবেষনা। লালন সাঁই জাত-ধর্মের সীমাবদ্ধতার বাইরে মানুষকে সবার উপর তুলে ধরেছেন। লালন সাঁইয়ের বাউল মতবাদ আজ বিশ্বে সর্বাজনীন হয়ে উঠেছে। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের স্মরণোৎসবে আত্মসুদ্ধির উদাসীর টানে দেশ-বিদেশের বাউল-ফকিরবৃন্দরা ছুটে আসে এই আখড়া বাড়ীতে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে লালন একাডেমির আয়োজনে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের স্মরণোৎসবের ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার ২য় দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, তাঁর কর্মসাধনা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বহিবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সাধুরা এই আখড়াবাড়ীতে এসে সত্য পথে চলার মন্ত্রে দিক্ষা নিয়ে নিজেদের আলোকিত করছেন। আজকের আধুনিক পৃথিবীতে যে সব লেখক গবেষক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের উপর বই লিখেছেন আমি তাদের প্রত্যেককে আহবান জানাবো তারা যেন নিজ দায়িত্বে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়াতে লালন একাডেমির লাইব্রেরীতে এক কপি করে জমা দিয়ে যান। এতে করে দেশ-বিদেশের উৎসুক ভক্ত গবেষক ও আজকের প্রজন্ম লালন সাঁই সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারবে। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের অমরত্বের জন্যই কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া এখন বিশ্ব মরমীর তীর্থ কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। খুব শীঘ্রই ছেউড়িয়ায় লালন ফকলোর ইন্সটিটিউট প্রতিষ্টা করতে এবং কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন ভাতাসহ সাধুদের সাধনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষনা দেন তিনি। যেখানে লালনের গানের স্বরোলিপি সহ তাঁর আধ্যাতিকতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানা যাবে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্জ রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুর রশীদ চৌধুরী, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ কুষ্টিয়া শাখার সভাপতি আলম আরা জুঁই। প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান, লালনের আধ্যত্মিক ভাবধারার জগৎ ও বাউল জীবন নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট লালন গবেষক এ্যাড. লালিম হক।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান ও লালন একাডেমির এ্যাডহক কমিটির সদস্য মোঃ সেলিম হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির এ্যাডহক কমিটির সদস্য এপিপি এ্যাড. শহিদুল ইসলাম। আলোচনা শেষে অতিথিদের কুষ্টিয়া লালন একাডেমীর পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া, আত্মসুদ্ধির প্রতীক একতারা ও ক্রেষ্ট উপহার দিয়ে বরণ করে নেন। আলোচক এ্যাড. লালিম হক বলেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ বাঙালী সংস্কৃতির এক মহান প্রতিনিধি। বাংলা সংস্কৃতির মূল ধারা লোকসংস্কৃতি। এই ধারাকে যারা পুষ্ট করেছে ফকির লালন তাদেরই একজন। সম্প্রদায় সম্প্রীতি ও ধর্মান্ধ মৌলবাদের বিরুদ্ধে তাঁর ফকিরীবাদ বাউলতত্ব মানুষের প্রধান দর্শন। বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ বাঙালী সংস্কৃতির এক মহান প্রতিনিধি। বাঙালী সংস্কৃতির মহান প্রতিনিধি লালন ফকির, গানে ও সাধনায় তার দর্শণে সেই মানবিক মূল্যবোধে সেই সামাজিক চেতনায় গভীর, লালন ফকির একই সঙ্গে মরমী এবং দ্রোহী, তার গানের ভেতর দিয়ে বাউল সাধনার নানা প্রসঙ্গ অনুসৃত হয়েছে। তার গানের ভেতর দিযে সমাজের অসঙ্গতি, কুপ্রথা সকল জাতপাতের ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। দ্বিতীয় পর্বের সঙ্গীতানুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত লালন সঙ্গীত শিল্পী উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন লালন একাডেমীর সাবেক সদস্য বাউল আব্দুল কুদ্দুস। সঙ্গীত পরিবেশন করেন সমির বাউল, খুরশিদ আলম, সুফিয়া কাঙালিনী। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই সংগীত পরিবেশন। স্মরণোৎসব অনুষ্ঠানের সার্বিক উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেন ফারহানা ইয়াসমিন ও কনক চৌধুরী।
তথ্য সুত্রঃ- আরিফ মেহমুদ - আন্দোলনের বাজার।