ভারতের চাকুরিয়া সেনানিবাস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে। শিকারপুর সাবসেক্টর একশন ক্যাম্প অবস্থান নিয়ে বর্ডার বেল্ট এর বিভিন্ন অপারেশনে অংশ গ্রহণ করেন শাহ আলম (৭২)। পরবর্তীতে দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন এবং যুদ্ধ কালীন সময় দৌলতপুর থানার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধ শেষে দৌলতপুর থানার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উনি প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার ছিলেন।
১৯৭৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে শাহ আজিজুর রহমানের বিপরীতে অংশ গ্রহণ করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলমের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিশাকুন্ডি ইউনিয়নের নাজিবপুর গ্রামে। মৃত আব্দুস সোবহানের ৫ পুত্রের মধ্যে শাহ আলম চতুর্থ। ৫ সন্তানের মধ্যে শাহ আলমসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন ৪ সন্তান। এরা হলেন মইনুল হক, ইদ্রিস আলী, শাহ আলম ও জগলুল কবীর। সবার বড় পলান হোসেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করেন। বড় ভাই পলান হোসেন মারা গেলেও ৩ ভাই নজীব পুরেই বসবাস করছেন। মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম কুষ্টিয়া শহরে দীর্ঘদিন বড়গাংদিয়া মেডিকেল ষ্টোর নামের ফার্মেসী ব্যবসায় জড়িত ছিলেন।
১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর দৌলতপুর হানাদার মুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দৌলতপুর থানা চত্বরে বিজয় পতাকা উড়িয়ে দৌলতপুর মুক্ত ঘোষণা করেন।
মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম প্রসঙ্গে দৌলতপুর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কামাল হোসেন দবির জানান, শাহ আলম ছিলেন দৌলতপুরের প্রথম সারির একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর নেতৃত্বে দৌলতপুরের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধ সংঘঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর দৌলতপুর হানাদারমুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা দৌলতপুর থানা চত্বরে বিজয় পতাকা উড়িয়ে দৌলতপুর মুক্ত ঘোষণা করেন। একই সাথে তিনি দৌলতপুর থানার দায়িত্ব গ্রহন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন না করা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম দৌলতপুর থানার তৎকালীন ইনচার্জ এর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা।
কুষ্টিয়ার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাসিম উদ্দিন বলেন তিনি ছিলেন দৌলতপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ছিল অসামান্য অবদান। কুষ্টিয়াবাসী তাকে গেরিলা শাহ আলম বলেই চিনেন। তাঁর অবদানের কথা কখনো ভুলবেনা জাতি। তবে দীর্ঘদিন আমেরিকায় বসবাস করা এই বীর সেনানী সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে মর্মে সংবাদ শুনে আমরা মর্মাহত হয়েছি। আমরা তথা কুষ্টিয়ার সকল মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর সুস্থতা কামনা করছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বড় পরিসরে তাঁর সুস্থতা কামনা করে দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করার কথাও জানান তিনি। তবে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধার পাশে দাঁড়ানো দাবী করছি।
জানা গেছে, প্রবীণ এই মুক্তিযোদ্ধা গত ২৭ সেপ্টেম্বর জ্যাকসন হাইটস থেকে জ্যামাইকাতে নিজ বাসায় ফেরার পথে সন্ত্রাসী হামলার (হেইট ক্রাইম) শিকার হন। আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাতাড়ি আক্রমণে মারাত্মকভাবে জখম করে পালিয়ে যায়, সামান্য মোবাইলের কারণে। পরে অবচেতন অবস্থায় তাকে জ্যাকসন হাইটের এলমার্স্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনো পর্যন্ত তিনি ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা এখনো আশঙ্কামুক্ত নয়। তিনি কুইন্সের জ্যামাইকার সাউথ রোডের বাসিন্দা।