বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

মোহাম্মদ নুরুল হক - আজীবন সেবা ও শিক্ষা বিস্তারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন
মোহাম্মদ নুরুল হক - আজীবন সেবা ও শিক্ষা বিস্তারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন

মোহাম্মদ নুরুল হক একজন সফল শিক্ষাবিদ ও জনসেবক হিসেবে পরিচিত। ১৭ই শ্রাবন ১৩২২ সাল (১লা আগষ্ট ১৯১৫ সাল ইং) বর্তমানে মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার মোহাম্মদপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মুজিব উদ্দীন বিশ্বাস, মাতা মোছাঃ জিউজান নেসা।

তৃতীয় শ্রেনীতে পড়াকালীন সময়ে তিনি পিতৃহারা হন। পরবর্তীতে তার চাচা মহোদয় মোঃ আঃ ওয়াহেদ এবং মোঃ আঃ হান্নান (বি,এ, এল,এল,বি M.L.A ৩৬-৫৮ ইং) সাহেবের সহযোগীতায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সক্ষম হন এবং মেহেরপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৩৩ সালে পাবনা এ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ২য় শ্রেনীতে উত্তীর্ন হন। ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বি,এ ২য় বিভাগে পাশ করেন। উল্লেখ্য তিনি গাংনী থানায় ৩য় গ্রাজুয়েট।

কর্মজীবনঃ
কলকাতা ফোর্ট উইলিয়াম ডাক বিভাগে চাকুরী গ্রহনের মাধ্যমে কর্ম জীবন শুরু করেন। পরে তিনি ১৯৪৩ সালে এই চাকুরী থেকে পদত্যাগ করে সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেন। ভারতের সেন্ট্রাল প্রদেশের কাটনী সেন্টার হতে ৯ মাসের দুরহ অফিসার ট্রেনিং সম্পন্ন করে কমিশন প্রাপ্ত পফিসার পদে বোম্বের “Kandivily Malad Ordnance” ডিপোতে যোগদান করেন। তারপর পুনে শহরে Planning Training এ 1st Indian Officer হিসেবে ৬ মাসের ট্রেনিং প্রাপ্ত হন এবং তদানীন্তন বৃটিশ ভারতের বিভিন্ন ডিপোতে কৃতিত্বের সহিত কাজ করেন। নিউ দিল্লী, পুনে, লক্ষ্ণৌ, বোম্বে, জব্বলপুর, লাহোর প্রভৃতি স্থানে কাজ করেন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হন এবং ৪৭ সালেই ডিসেম্বর মাসে চাচাদের নির্দেশে সেনাবাহিনী ত্যাগ করে অত্র এলাকায় হাজী ভরস উদ্দীন ইনষ্টিটিউশন নামক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাথে জড়িত হয়ে পড়েন এবং উক্ত বিদ্যালয়টি সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে দীর্ঘ ৩৫ বৎসর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ অলংকৃত করেন। তার উৎসাহ ও উদ্দীপনায় কয়েকজন মুসলমান দরিদ্র ছাত্র কৃতি ছাত্র হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন উচ্চপদে কর্মরত আছেন। তিনি বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে সম্মানিত।

সাবেক সংসদ সদস্য জনাব মোহাম্মদ নুরুল হক এর মৃত্যুতে জাতীয় সংসদে উথাপিত শোক প্রস্তাব নিম্নরুপঃ-

আমি এখন সাবেক সংসদ সদস্য জনাব মোহাম্মদ নুরুল হক এর মৃত্যুতে একটি শোক প্রস্তাব এই মহান সংসদে উথাপন করছি। আশা করি প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হবে। জনাব মোহাম্মদ নুরুল হক বর্তমানে মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার মোহাম্মদপুর গ্রামে ১৯১৫ সালের ১ আগষ্ট তারিখে জন্মগ্রহন করেন এবং ১৯৯৮ সালের ২৭ আগষ্ট ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৩ বছর।

জনাব মোহাম্মদ নুরুল হক মেহেরপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে ম্যাট্রিক, পাবনা এ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৩৩ সালে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৩৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি,এ পাস করেন। কর্মজীবনে কিছুকাল তিনি সরকারী চাকুরীতে থাকলেও পরে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহন করেন। তিনি স্থানীয় একটি মাধ্যমিক স্কুলে সুদীর্ঘ ৩৫ বছর প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জনাব নুরুল হক ১৯৭০ সালে সাধারন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরে ১৯৮৬ সালে পুনরায় একই দলের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

জনাব মোহাম্মদ নুরুল হক আজীবন সেবা ও শিক্ষা বিস্তারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি এলাকায় বহু স্কুল, কলেজ ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা ও সংস্কারের কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন এবং ট্রেনিং ক্যাম্পের তত্বাবধানে ছিলেন।

তিনি ৫ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের জনক। তারা সকলেই উচ্চ শিক্ষিত এবং সু-প্রতিষ্ঠিত। ২৮ শে আগষ্ট ১৯৯৮ ইং তার নিজ গ্রাম মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার মোহাম্মদপুর গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে তার মায়ের কবরের পার্শে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতঃ সমাহিত করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৫ কন্যা, ১ পুত্র নাতি-নাতনী সহ আগমনি আত্মীয় স্বজন ও শুভানুধ্যায়ী রেখে যান। তিনি একজন বিচক্ষন ও ন্যায় পরায়ন ধার্মিক ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন ব্যাক্তি ছিলেন।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন