কুষ্টিয়া আগে দ্বীপাঞ্চল ছিলো। এখানে বহু গাছগাছালি ছিলো বিশেষ করে বাবলা গাছ। সেই সমস্ত গাছে বহু কাক বাস করত। তাই অনেক আগে কুষ্টিয়ার নাম ছিলো ' কাকদ্বীপ '। অনেকের মতে কুষ্টা (পাট) থেকে 'কুষ্টিয়া ' নামের উৎপত্তি। দেশ বিভাগের আগে বৃহত্তর কুষ্টিয়ার নাম 'নদীয়া ' ছিলো। প্রশাসনিক অসুবিধার কারনে তৎকালীন ডিষ্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট জনাব সৈয়দ মুর্তজা আলী ১৯৪৮ সালের প্রথম দিকে কুষ্টিয়া নামকরন করেন।
কুষ্টিয়া জেলার নামকরন সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন মনীষীগন ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়ে গেছেন। মতগুলো সম্পুর্ন একটি ধারনা মাত্র। কেননা প্রাচীন যুগের সঙ্গে এ জেলার ইতিহাসের যোগসুত্রের কোন পাথুরে প্রমান পাওয়া যায় না। তবে কুষ্টিয়া সদর থানার ( বর্তমান হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের ) পুরাতন কুষ্টিয়া এবং অতি পুরাতন ম্যাপ থেকে পাওয়া যায় তখনকার পদ্মা নদীর অবস্থানের উত্তরে পুরাতন কুষ্টিয়া চতুর্দিকে নদী দ্বারা বেষ্টিত ছিলো। সম্রাট শাহ জাহানের আমলে এটাই কুষ্টিয়া শহর ছিলো। অনেকের মতে সৈয়দ মুর্তাজা আলীর ধারনা কুষ্টিয়াতে উন্নত জাতের পাটের ব্যাপক হারে চাষ হতো।
কুষ্টিয়াবাসী পাটকে অঞ্চলিক ভাষায় কোষ্টা বলতো। কুষ্টা থেকে কুস্টে তা থেকে কুষ্টিয়া নামের উৎপত্তি। কবি গোলাম মোস্তফার মতে ' দ্রাবিড় ' শব্দ থেকে কুষ্টিয়া নামটি এসেছে। কারো কারো মতে ফরাসী কুশতহ বা কোস্তা থেকে কুষ্টিয়া নামের উৎপত্তি। ১৯৪৮ সালের প্রথমদিকে কুষ্টিয়া নামকরন হয়। প্রশাসনিক অসুবিধার কারনে জেলা সদরের নামানুসারে নদীয়া নাম পাল্টিয়ে কুষ্টিয়া নামকরন করেন তৎকালীন ডি, এম ( জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) জনাব সৈয়দ মুর্তাজা আলী। ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমার্ধে কুষ্টিয়ায় মোঘল শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। মোঘল আমলে কুষ্টিয়া সরকার ফতেহাবাদ ও সরকার ভুষনার অধীনে ছিলো।
১৭১৭ - ১৭৫৭ কুষ্টিয়া নবাব মুর্শিদ কুলী খান ও নবাব সিরাজ-উদ-দ্দৌলার শাসনাধীনে ছিলো। পলাশী যুদ্ধে নদীয়া রাজ বংশের পক্ষ অবলম্বন করেছিলো এবং আমঝুপি কুঠিতে ( পরে নীল কুঠি হয়) রবার্ট ক্লাইভের সাথে মীর জাফর ও অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীদের গোপন বৈঠক হয়েছিলো। ১৮৮৭ সালে নদীয়াতে সর্বোপ্রথম জেলা গঠিত হয়। নদীয়ার শেষ কালেক্টর ছিলেন আবু মহম্মদ নাসির উদ্দিন। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে ( ১৮২৩- ১৮২৮) মেহেরপুরের কিছু অংশ বাদে কুষ্টিয়া যশোহর জেলার অন্তর্গত ছিলো। ১৮২৮ সালের আগে কুষ্টিয়া মাত্র কয়েকদিনের জন্য রাজশাহী জেলার অন্তর্গত ছিলো।
১৮৫৭ সালে পাংশা, বালিয়াকান্দী, কুমারখালী ও খোকসা থানা নিয়ে কুমারখালী মহকুমা গঠিত হয়। কুমারখালী অঞ্চল পাবনা জেলার অধীনে ছিলো। তখন কুমারখালীতে মুন্সেফী আদালত ছিলো। ১৮৬৩ সালে কুষ্টিয়া থানা ও ১৮৭১ সালে কুমারখালী থানা কুষ্টিয়া মহকুমা হিসাবে নদীয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়।