বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

কাছারি বাড়ি শিলাইদহ
কাছারি বাড়ি শিলাইদহ

শিলাইদহের কাছারি বাড়ি থেকেই জমিদারি কাজ পরিচালনা করতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সময়ের প্রবাহে সেই জমিদারি এখন আর নেই, নেই খাজনা দেয়ার লোকও। আর কাছারি বাড়ি থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কবিগুরুর দাতব্য চিকিৎসালয়।

১৮৯১ সাল থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত শিলাইদহের কাছারি বাড়িতে জমিদারি দায়িত্ব পালন করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জমি থেকে প্রাপ্ত খাজনা ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হতো কাছারি বাড়ি থেকে। এই কাছারি বাড়ি ছিল শিলাইদহ জমিদারির প্রাণস্বরূপ। শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি হতে উত্তর পূর্ব কোণে পদ্মার সন্নিকটে। প্রতিদিনের আমদানী রফতানী দেখে তার সারমর্ম নোট করে রাখেন। আর প্রতি সপ্তাহের রিপোর্ট দেন বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। কলকাতার ঠাকুর পরিবারের জমিদারি ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে ছিল। পূর্ববাংলায়ও বেশ কয়েকটি ছিল। এগুলোর মধ্যে রবীন্দ্রনাথের প্রিয় বিরাহিমপুর জমিদারির সদর কাছারি হলো শিলাইদহ।

১৮৯২ সালে নির্মিত হয় দ্বিতল ভবন বিশিষ্ট এই কাছারি বাড়ি। ত্রিশ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত এই ভবনটি একসময় জনমানুষের কোলাহলে জমজমাট থাকতো। পূণ্যাহ দিনে প্রজাদের সাথে রবীন্দ্রনাথ মিশে যান, বরকন্দজরা চৌকি দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এই কাছারিতে থাকে না কোন পার্থক্য জমিদার এবং প্রজার। এক আসনে বসতে হবে রবীন্দ্রনাথের হুকুম। এই মেলায় তিনি হিন্দু-মুসলিম স¤প্রীতি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ইতোপূর্বে হিন্দু-মুসলিম প্রজার বসবার জন্য পৃথক ব্যবস্থা ছিল। তাদের একই ধরনের বসার জায়গা নির্ধারণ করেন। তিনি জমিদার ও প্রজার প্রত্যক্ষ সম্পর্ককে জোরদারকরণের প্রয়াস নেন। সদর নায়েব বিরক্ত হোন, বিরক্ত হলে কি হবে, এখানে যে সবাই সমান। কাছারিবাড়ির মাঝখানে একটি পুকুর তার পাশেই বিশাল স্টাফ কোয়াটার। পূর্ব দিকে একটি দীঘি, এই দীঘির পশ্চিম পাড়ে ছিল ঘোড়ার আস্তাবল। কিছু ধ্বংসাবশেষ আজও দেখা যায়।

কাছারি বাড়িতে তখন জমিজমার কাজ ছাড়াও বিচারের কাজ চলতো। নায়েব গোমস্তা পেয়াদা বরকন্দাজদের বসবাসের জন্য নির্মিত হয় বাসাবাড়ি। এর প্রবেশ পথে লোহার গেটটি নিরাপত্তার স্বার্থে দেয়া হয়েছিল। কাছারি বাড়ির দক্ষিণ দিকে মাঝ বরাবর ছিল কদমফুলের গাছ। কবিগুরু এই কদম গাছের নিচে প্রায়ই আসতেন। গাছের নিচের দিকে তিনি ইট দিয়ে পাকা করে গোলাকারভাবে বাঁধিয়ে দেন; যেখানে অনেকে একসাথে বসতে পারতেন। এই গাছের পাশেই উন্মুক্ত স্থানে বিভিন্ন কীর্তন, বাউল গান, লাঠিখেলা ও অন্যান্য বিষয়াদি আয়োজন করা হতো। জমিদার রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সবার শ্রদ্ধার পাত্র ও মধ্যমণি। শোনা যায়, এই কাছারি বাড়ীতে ঘন্টা ঝুলিয়ে রাখা হতো। এখানকার কর্মচারীদের সময়ের সঠিক হিসেব রাখতে এবং সময়মত কার্যাদি সম্পন্ন করতে প্রতিঘন্টায় তা বাজানোর ব্যবস্থা ছিল। কাছারিবাড়ি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল। মেরামত ও সংস্কারের অভাবে বিলীন হয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথের আগমন উপলক্ষে কাছারিবাড়িকে জাকজমকের সাথে সজ্জিত করা হত। লাঠিয়ালরা নানারূপ লাঠিখেলা, কুস্তি, বল্লম ও তরবারী খেলায় বাহাদূরী প্রদর্শন করে বাবু মশায়ের নিকট থেকে পুরস্কার নিত।

বাবু মশাই ঋণে জর্জরিত প্রজাদের এত স্নেহ করতেন যে অনেকে মনে করতেন এইগুলো বাবু মশাই এর লোক দেখানো মায়াকান্না মাত্র। প্রজা সাধারণ তাঁকে যার পর নাই শ্রদ্ধা করতো। এই কাছারি বাড়ির জৌলুস ও চাকচিক্য এখন আর নেই। সেই অনদি অতীতের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। কবি এখান থেকেই শাহাজাদপুর, পতিসর যাতায়াত করতেন। তাই সব কিছুর বিচারে রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহের কাছারি বাড়ি বাঙালির জন্য এক অনন্য সম্পদ।

তথ্য কৃতজ্ঞতাঃ- স্থানীয় মানুষ এবং কুষ্টিয়ার ইতিহাসে: শিলাইদহ কাছারি বাড়ি - ড. এমদাদ হাসনায়েন

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.