বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ক্লিক করুন অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

আরকুম শাহ্‌ আধ্যাত্মিক সাধক ও সূফী
আরকুম শাহ্‌ আধ্যাত্মিক সাধক ও সূফী

শাহ আরকুম আলী (জন্ম: ১৮৭৭ - মৃত্যু: ১৯ মার্চ ১৯৪১) ছিলেন বাংলাদেশের একজন আধ্যাত্মিক সাধক ও সূফী। জীবন ও সত্তার অর্থ আবিস্কারে ব্রতী এক সৃষ্টিশীল কবি আরকুম শাহ।

চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, জ্ঞানদাস, গোবিন্দ দাসের রাধাকৃষ্ণবিষয়ক পদগুলো বাংলা সাহিত্যের মান উন্নীত করেছে। এগুলো যেমন সুমধুর, তেমনই আধ্যাত্মিক রসে ভরপুর। সেই ধারাবাহিকতায় সুফি কবি আরকুম শাহের মরমি মানস ও শিল্পবোধ তার গানকে সার্বজনীন করে তুলেছে। তার রাধাকৃষ্ণবিষয়ক গান সব ধর্মের মানুষের অন্তরে ঠাঁই করে নিয়েছে অনায়াসে।

১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট জেলার দক্ষিণ ধার খিত্তা পরগণার ধরাধরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকে তিনি বাউল দর্শনে অনুপ্রাণিত হন। তিনি শাহ আবদুল লতিফ নামক একজন পীরের কাছে দীক্ষা নেন। কথিত আছে এই পীরের কাছে তিনি বাতেনি-মারাফতের জ্ঞান লাভ করেছিলেন।

তবে বাউল গানের পাশাপাশি অন্যান্য নানা ধরনের গান রচনা করে সিলেট অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর একমাত্র গানের সংকলন 'হকিকতে সিতারা' প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের সীমা ছাড়িয়ে বহির্দেশেও কালজয়ী জনপ্রিয় কিছু গানের মাঝে কিংবদন্তি হয়ে আছেন আরকুম শাহ। যেমনঃ-

  1. কৃষ্ণ আইলা রাধার কুঞ্জে
  2. পানসি দৌড়াইয়া যাইতাম
  3. সোনারও পিঞ্জিরা আমার করিয়া গেলায় খালি রে
  4. চাইর চিজে পিঞ্জিরা বানাই
  5. আজি দরশনও মিলন হইল এখন

হৃদয়ের সব ব্যথা আর যথাযথ বিষয় উপস্থাপন করেছেন বাংলা, সংস্কৃত, আরবি, হিন্দি, উর্দু, ফারসি, ইংরেজি, তুর্কি শব্দে। তার তত্ত্বপ্রধান পাঁচটি গান জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এসব গানে রয়েছে মনের মানুষের সন্ধানে শাশ্বত প্রেমের প্রকাশ। মরমি ভাবধারায় গানের গভীরতায় রয়েছে ব্যাকুল প্রেমের স্বতঃস্ম্ফূর্ত আকুতি।

প্রেমিক, প্রেম ও প্রেমাষ্পদকে নিয়ে নানা বর্ণনায়, নানা ঢঙে গান রচনা করেছেন। মরমিয়তার সারল্য এবং ঐশিতার বিচ্ছুরণে প্রতিটি গানের সুরমূর্ছনা ছুঁয়ে যায় প্রেমিক হৃদয়। সৃষ্টিকর্তার প্রেমে বিভোর ছিলেন তিনি। স্রষ্টার নৈকট্য লাভের প্রবল আকাঙ্ক্ষাই বিধৃত হয়েছে অধিকাংশ গানে। মুর্শিদের নির্দেশে যৌবনে ঘাটুগান ছেড়ে অগ্রসর হয়েছিলেন ভাবুকতার পথে। অক্লান্ত সাধন-ভজনে আত্মার অনুভূতির অন্তরঙ্গ অবলোকন করেছেন তিনি।

প্রেম হচ্ছে দুটি সত্তার মধ্যে এক ধরনের আকর্ষণ, এই প্রেমের মধ্যে দুটি সত্তার ঐক্য উপলব্ধির অভিপ্রায় নিহিত থাকে। আধ্যাত্মিক সাধকরা অন্তরের প্রেমময় সত্তাকে সর্বক্ষণ জাগ্রত রাখতে সাধনার অংশ হিসেবে গানকে স্থান দিয়েছেন সর্বোচ্চে। তাদের অন্তরের ভাবধারা প্রকাশের প্রধান মাধ্যম হলো গান, আর গানের প্রধান অনুষঙ্গ প্রেম। তাদের প্রেম আর গান যেন এক সুতোয় গাঁথা। জীবন ও সত্তার অর্থ আবিস্কারে ব্রতী আরকুম শাহ সুফিবাদী ভাবদর্শনের মগ্নচেতনায় ছিলেন বিভোর। তিনি ধার্মিক ছিলেন, তবে ধর্মান্ধ নয়। সমাজের হিংসা, বিদ্বেষ, কলহ-দ্বন্দ্ব, কোন্দল, অনাচার-ব্যভিচার, বৈরিতা, স্বার্থপরতা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। ১৯৪১ সালের ১৯ মার্চ জাগতিক দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।

প্রতি বছর হযরত আরকুম আলী'র ভক্তেরা দক্ষিণ সুরমার ধরাধরপুর গ্রামে তাঁর মাজারে সমবেত হয়। প্রতি বছরই ওরশ পালিত হয়।

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.