বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

ভবা পাগলা
ভবা পাগলা

ভবা পাগলা (১৮৯৭-১৯৮৪) আসল নাম ‘ভবেন্দ্র মোহন সাহা’। তাঁর জন্ম আনুমানিক ১৮৯৭ খৃস্টাব্দে। তাঁর পিতার নাম ‘গজেন্দ্র কুমার সাহা’। ভবা পাগলারা ছিলেন তিন ভাই এক বোন। তিনি দেখতে ছিলেন একরকম হালকা পাতলা গড়ন, গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, মাথায় ঝাঁকড়া চুল, চিবুকে এক গোছা দাঁড়ী।

গানের ভণিতায় তিনি নিজেকে ভবা বা ভবেণ বলে উল্লেখ করেছেন। মানিকগঞ্জ অঞ্চলে তিনি ভবা পাগলা নামে খ্যাত। তাঁর গান মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ও অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ছিল অনেক আগেই। অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ‘বাংলার বাউল ও বাউল গানে’ তাঁর দুটি গান ছেপেছিলেন। মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ‘হারামণির সপ্তম খণ্ডে’ ভবা পাগলা সম্পর্কে লিখেছেন, ভবা পাগলা এক জন নামকরা বাউল গান রচয়িতা।

তিনি সাটুরিয়া থানার (বর্তমানে উপজেলা) অন্তর্গত আমতা গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। স্বাধীনতার পর (অর্থাৎ ১৯৪৭ এর পর ১৯৭১) তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। তাঁর গান মানিকগঞ্জ জেলা সহ বাংলাদেশ ও ভারতে বিভিন্ন স্থানে পরিচিতি লাভ করে ও গীত হয়ে আসছে। তিনি মূলত শ্যামা সঙ্গীত, ভাব গান, গুরুতত্ত্বের গান, দেহতত্ত্বের গান, ও সৃষ্টিতত্ত্বের গান রচনা এবং সুর নিজেই করেছেন।

তিনি ১৯৪৭-এ ভারতে চলে যান এবং বর্ধমানে কালনাতে অবস্থান করতেন। ভবা পাগলা ১৯৮৪ খৃস্টাব্দে দেহ ত্যাগ করেন।

ভবার পুঁথিগত শিক্ষা অষ্টম শ্রেণীর চৌকাঠ পেরোয়নি। তবে জীবন বোধে যে অমরত্ব লাভ করেছে, তার পুঁথিগত শিক্ষায় জ্ঞান লাভের প্রয়োজনও বিশেষ ছিলনা। ছেলেবেলা থেকেই পরিবারের সহবতে, ভক্তিভাব ছিল ভবার সঙ্গী। গ্রাম্য ভাষায় মুখে মুখে গান বাধা স্বভাব ছিল ভবার। গানের কথার সাথে সুর মিলতো দুই প্রিয় সহচরীর মতো। গানের স্রোতে তারা খেলে বেড়াতো স্বকীয়তায়। অন্তরের সবচেয়ে গভীর জমিতে গড়ে তুলতো অন্তর্যামীর আশ্রয়। বাংলার সংগীত জগতে তো বটেই, বিশ্বের নিরিখেও ভবা পাগলা এক অনন্য নজির।

তথ্য বলছে ভবা পাগলার গানের সংখ্যা ছিয়াশি হাজার। ছিয়াশি হাজার সংখ্যাটা হয়তো অতিরঞ্জিত। গবেষণা বলে, ভবার গানের সংখ্যাটা আসলে দশহাজার। এই সংখ্যাটাও বিপুল। এতো বিপুল সংখ্যক লোকগানের জনক কেন বিস্মৃতপ্রায়? সহজ উত্তর হলো ভবার প্রচারবিমুখতা। তার এই প্রচারবিমুখতার জন্যে, তার জীবনের অনেক ঘটনাই বিতর্কের বেড়াজালে আটকে পড়েছে।

বাউলদের এক অংশ তাকে নিজেদের বলে দাবি করেন। যদিও অধিকাংশের মতে ভক্তিরস থাকলেও ভবা পাগলা তার গানে বাউল ধর্মের প্রভাবকে প্রকট হতে দেননি। জাত-পাতে অবিশ্বাসী ভবার কাছে অন্তরের শুচিতাই ছিল গানের মূল আলেখ্য। তাইতো অক্লেশে তিনি লিখতে পেরেছেন “দূর করে দে মনের ময়লা”। কোথাও গিয়ে এই গানের আবেদনে রবীন্দ্রনাথের কথা মনে পরে। মনে পরে কবিগুরু কেমন একই ভাবে বলেছেন “সংসার যবে মন কেড়ে লয়… জাগেনা যখন প্রাণ”।

গঙ্গার এপার আর পদ্মার ওপারের গান, দুই বাংলার চেতনাকে, একই মালায় বেঁধে রেখেছে। একজন গায় লালন আর একজন শীতল হয় রবীন্দ্রনাথে। ভবার গানেও মিশে যায় বিষাদ-অভিমান। পরিচয় ঘটে নিজের আত্মার সাথে।

ঘটনাচক্রে ভবা পাগলা একবার নন্দলাল দাস নামের এক দূরারোগ্য রুগীকে ঠিক করে দেন। এই ঘটনার পরবর্তী সময়ে অনেকেই ভবাকে ঈশ্বররূপে পূজা করতে থাকেন। প্রতিষ্ঠা পায় ভবার হরবোলা মন্দির। ১৯৮৪ তে ভবা পাগলা শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন। তবে বাংলা লোকসংগীত যতদিন থাকবে ততদিন বারে বারে বলতে হবেঃ-

“বারে বারে আর আশা হবে না”
Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন