মানবতার ধর্মে বিশ্বাসী রবি প্রথম জীবন থেকেই স্বদেশ ও সমাজের ভাবনাতে ব্যাকুল ছিলেন। তিনি যখন পদ্মাতীরবর্তী অঞ্চলে জমিদারির কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন তখন সেখানকার প্রজাদের সঙ্গে সকল সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতেন তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে। প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও ইংরেজ শাসিত পরাধীন ভারতবর্ষ সম্পর্কে উদাসীন ছিলেন না।
তৎকালীন বহু বিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তাঁর।ধরেছেন, যা স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছিলেন। সেইসময়ে হিন্দু ও মুসলমানদের সম্প্রীতির উদ্দেশ্যে কবিগুরুর উদ্যোগে পালিত হয়েছিল ‘রাখীবন্ধন উৎসব’। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগে ইংরেজদের নির্মম হত্যালীলার প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ইংরেজ প্রদত্ত “নাইট” উপাধি ত্যাগ করেন।
শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতির পেছনেও এই ব্যক্তিত্বের অবদান রয়েছে। তাঁর জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন। প্রাচীন ভারতের গুরুগৃহের আদর্শে ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে তিনি ‘ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে এই প্রতিষ্ঠানটি পরিণত হয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি চেয়েছিলেন এমন একটা শিক্ষাব্যবস্থা, যাতে জীবনের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের সুযোগ থাকে। চার দেওয়ালের বাইরে প্রকৃতির উন্মুক্ত পাঠে শিশুদের সামিল করার তাঁর প্রয়াস অভিনব।
রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত কৃষিকর্ম ও পল্লিউন্নয়ন শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হল শ্রীনিকেতন। শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে তিনি পল্লিউন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন। শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানে জীবনের শেষ পর্যন্ত নিযুক্ত ছিলেন তিনি।