বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

বৃহত্তর কুষ্টিয়ার ধর্মচারণ
বৃহত্তর কুষ্টিয়ার ধর্মচারণ

ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বৃহত্তর কুষ্টিয়ার মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনাসমৃদ্ধ। যে কারণে এ অঞ্চলে মুসলিম-হিন্দু খ্রিষ্টান যে যার ধর্ম চারণ সহজভাবে পালন করতে সক্ষম হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলার জন্ম ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর। দেশ ভাগের পূর্বে বর্তমান বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা কুষ্টিয়া সদর, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর মহকুমা ছিল অবিভক্ত নদীয়া জেলার অংশ। নদীয়া নবদ্বীপ ছিল হিন্দুধর্ম ও শাস্ত্রাদি চর্চার প্রধান ক্ষেত্র। ত্রয়োদশ শতকের প্রারম্ভে বখতিয়ার খলজির নদীয়া বিজয়ের ফলে বাংলাদেশে মুসলিম শাসনের সুত্রপাত। নবদ্বীপে শ্রী চৈতন্যের আবির্ভাব ও বৈষ্ণব ধর্মমত প্রচার এ জেলা তথা বাংলার মুসলমানদের উপর যে বেশি প্রভাব ফেলেছিল তা অনস্বীকার্য। এ ছাড়া আউল-বাউল, সহজীয়া হযরতি-গোবরাট প্রভৃতি প্রায় পনেরটি উপধর্ম মতের জন্ম-বিকাশ ও সাধন ক্ষেত্র নদীয়া-নবদ্বীপ-কুষ্টিয়া অঞ্চল।

পঞ্জদশ শতকে আগত বিখ্যাত আউলিয়া হযরত খান জাহান আলী, কুষ্টিয়ার উপর দিয়েই যশোরে গিয়েছিলেন। তিনি এ জেলায় ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচার করেন।

বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলায় ইসলাম প্রচারের কালনির্ণয় করা দুঃসাধ্য। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ঘোলদাড়ি গ্রামে হযরত খায়রুল বাশার ওমজের মাজারের পাশে একটি পুরাতন মসজিদ আছে। এই মসজিদ সন্মন্ধে বলা হয়ঃ বাংলা ৪১৩ সালে পীর খায়রুল বাশার ওমজ প্রতিষ্ঠা করেন।

ঘোলদারি গ্রামে অবস্থিত মসজিদটি বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার প্রথম মসজিদ বলে বিবেচিত।

দরবেশ মেহের আলী শাহ্‌ ওরফে শাহ্‌ ভালাই (প্রকৃত নামঃ শায়খ সৈয়দ মুহম্মদ জহির উদ্দিন, জন্ম ১৮০৬ সনে ইয়েমেনে) মেহেরপুরের সমগ্র অঞ্চলে সর্বপ্রথম পত্তন (ভিত্তি) করেন।

তিনি চুয়াডাঙ্গা এবং পশ্চিমবাংলার রানাঘাট, করিমপুর, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়া অঞ্চলেও ইসলাম প্রচার করেছেন।

১৮৩০ সালের দিকে পাদ্রি রেভারেন্ড এম হোসেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থানার কার্পাসডাঙ্গা এলাকায় খ্রিষ্টধর্ম প্রচার শুরু করেন। ১৮৩৮ সালের দিকে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে খ্রিষ্টান মিশনারিরা শুধুমাত্র খাবারের বিনিময়ে বহু দরিদ্র হিন্দু মুসলমানকে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত করতে সক্ষম হন।

১৮৬০ সালে কুষ্টিয়ায় মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলা ১৩০৫ সনে একজন হিন্দু মুন্সেফের চেষ্টায় ফৌজদারি কোটের নিকট একটি ছোট আকারের মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। মীর মশাররফ হোসেন পাংশা থেকে প্রকাশিত ইয়াকুব আলী চৌধুরী সম্পাদিত “কোহিনুর” প্রত্রিকায় (১৩০৫) “সৎ প্রসঙ্গ” শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশ করেছিলেন।

এই মসজিদটি পূর্বে কোর্ট মসজিদ এবং বর্তমানে বড় মসজিদ নামে পরিচিত। তবে যতদুর জানা যায় কুঠিপাড়ার মসজিদটিই কুষ্টিয়া শহরের প্রথম মসজিদ। বাংলা ১২৯৫ সালের দিকে পাবনা নিবাসী কোটের একজন মুসলমান নাজির একটি খড়ের ঘরে প্রথম মজসিদ নির্মাণ করেন।

কুষ্টিয়া শহর প্রথমে ছিল একটি দ্বীপাঞ্চল, এর প্রাচীন নাম ছিল কাকদ্বীপ। সেন রাজা বল্লাল সেন নদীয়ার নবদ্বীপে রাজধানী নির্মাণ করে হিন্দুধর্মের সংস্কার করেন। পালরাজাদের নিম্নবঙ্গের রাজধানী ছিল নবদ্বীপ নিকটস্থ সুবর্ণবিহারে।

এ জেলার হিন্দুদের মধ্যে শক্তি শৈব, বৈষ্ণব, কর্তাভজা, বললাম ভজা ইত্যাদি বেশি। দুর্গা, সরস্বতী, কালী প্রভৃতি পূজা জাঁকজমকের সাথে পালিত হয়।

নিম্নশ্রেণির হিন্দুদের মধ্যে পূজা বাদে গাজন, মনসা, শীতলা প্রভৃতি লৌকিক দেব-দেবীর পূজা হয়। কুষ্টিয়ার সকল মন্দিরেই রাঁধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ পুজিত হয়। দেশ বিভাগের পূর্বে প্রায় সকল গ্রামেই বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীদের আখড়া ছিল।

বৃহত্তর কুষ্টিয়ার মসজিদ মন্দির গির্জা - আব্দুল্লাহ সাঈদ

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.