বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

"মসজিদে কুবা" ইসলামের প্রথম মসজিদ
"মসজিদে কুবা" ইসলামের প্রথম মসজিদ

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) নবুয়ত লাভের পর মক্কায় ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন। ইসলাম প্রচারের কারণে কুরাইশরা মহানবী (স.) ও তার ‘সাহাবাদের (রা.) ওপর নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের পরও মহানবী (স.) দ্বীনের দাওয়াত চালিয়ে যেতে থাকলে কুরাইশরা এক পর্যায়ে মহানবীকে (স.) হত্যা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

এ অবস্থায় আল্লাহর আদেশক্রমে মহানবী (স.) হযরত আবু বকরকে (রা.) সাথে নিয়ে ইসলামের শক্রদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২২ সেপ্টেম্বর মাতৃভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসছেন এই সংবাদ পেয়ে মদিনাবাসী আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন। প্রতিদিন দলে দলে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা মদিনা থেকে তিন মাইল দূরে অবস্থিত কুবা পল্লীর হাররা নামক স্থানে জড়ো হতে লাগলেন এবং তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলেন। কিন্তু তাকে না দেখে সবাই হতাশ হয়ে ফিরে যেতেন। একদিন এক ইহুদি দুর্গ প্রাচীরে উঠে বহু দূরে ধূলি উড়তে দেখে চিৎকার দিয়ে মদিনাবাসীকে হযরত মহানবীর (স.) আগমনের সু- সংবাদ জানায়। সংবাদ শুনে সাথে সাথে মদিনাবাসী আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে এবং মহানবীকে (স.) সাদরে বরণ করে নেন।

মদিনায় হিজরত করে নবী করীম (স.) সর্বপ্রথম আমর ইবনে আওফের গোত্রপতি কুলসুম ইবনুল হিদমের আতিথ্য গ্রহণ করেন। মহানবী (স.) এখানে ১৪ দিন অবস্থান করেন। এখানে অবস্থানকালে তিনি কুলসুম ইবনুল হিদমের (রা.) খেজুর শুকানোর পতিত জমিতে মসজিদে কুবা তৈরি করেন। মসজিদে কুবা উম্মতে মোহাম্মদীর (স.) সর্বপ্রথম মসজিদ। মসজিদে হারাম, মসজিদে নববি এবং মসজিদে আকসার পরই মসজিদে কুবার সম্মান। পবিত্র কোরআনের সুরা তওবার ১০৮ নং আয়াতে এই মসজিদের কথা উল্লেখ আছে। মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন ‘যে মসজিদ প্রথম দিন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার ওপর (মসজিদে কুবা) তাই বেশি হকদার যে, তুমি সেখানে সালাত কায়েম করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আর আল্লাহ্ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।’ (সূরা তাওবা, আয়াত ১০৮)
মসজিদে কুবা প্রথম নির্মাণ থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা হয়। মহানবীর (স.) পর ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রা.) তার খিলাফতকালে সর্বপ্রথম মসজিদে কুবার সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরো সাতবার এই মসজিদের পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়। অনেক পুরনো ও জীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। এ মসজিদ নির্মাণে পুরো মসজিদে এক ধরনের সাদা পাথর ব্যবহার করা হয়।

চার মিনার ও দোতলা বিশিষ্ট মসজিদে কুবার ছাদে ১টি বড় গম্বুজ এবং ৫টি অপেক্ষাকৃত ছোট গম্বুজ রয়েছে। তাছাড়া ছাদের অন্য অংশে আছে গম্বুজের মতো ছোট ছোট অনেক অবয়ব। পাশে আছে হরিৎ খেজুরের বাগান যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। হলদে বিকেলে দূর থেকে মসজিদটি দেখলে হৃদয় ভরে যায়।

মসজিদে নববির দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত এ মসজিদের দূরত্ব মসজিদে নববি থেকে ৩ক্স২৫ কিমি। মদিনায় রাসূলুল্লাহ (স.) ১০ বছর কাটিয়েছেন। এ সময়ে রাসূলুল্লাহ (স.) পায়ে হেঁটে অথবা উটে আরোহণ করে কুবা মসজিদে যেতেন। এরপর তিনি সেখানে দু’রাকাত নামাজ আদায় করতেন। হাদিস শরিফে বর্ণনা আছে, ‘মদিনার জীবনে মহানবী (স.) প্রত্যেক শনিবার কখনো পায়ে হেঁটে, আবার কখনো উটে আরোহণ করে মসজিদে কুবায় তাশরিফ আনতেন। প্রখ্যাত সাহাবি হযরত উসাইদ ইবনে হুজাইব আল আনসারী (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (স.) এরশাদ করেছেন ‘মসজিদে কুবায় এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সওয়াবের দিক থেকে একটি উমরার সমতুল্য।’ (তিরমিযী) মসজিদে কুবার এই সম্মান ও মর্যাদার কারণে মহানবীর (স.) ইন্তিকালের পরও বিশিষ্ট সাহাবায়ে কিরাম (রা.) যেমন হযরত আবু বকর (রা.) হযরত উমর (রা.) প্রমুখ মহানবীর (স.) অনুকরণে প্রায়ই মদিনা থেকে মসজিদে কুবায় আসতেন ও তাতে নামাজ আদায় করতেন। মহানবীর (স. অনুসরণে এখানে আগমন ও দু’রাকাত নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব।

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.