কালিপদ বসু, যিনি কে. পি. বসু নামেও পরিচিত (১৮৬৫ - ১৯১৪) একজন প্রখ্যাত বাঙালি গণিতশাস্ত্রবিদ ও বিজ্ঞানশিক্ষক। তিনি কে. পি. বসু পাবলিশিং কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা।
কে. পি. বসু বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার হারিশংকরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মহিমাচরণ বসু, যিনি স্থানীয় হরিশংকরপুর রেজিষ্ট্রি অফিসের (তৎকালে ঝিনাইদহ রেজিষ্ট্রি অফিস হরিশংকরপুর গ্রামে অবস্থিত ছিল) একজন ভেন্ডার ছিলেন।
গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা সমাপনান্তে তিনি লর্ড রিপন কলেজে ভর্তি হন এবং এখানে থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে গণিত শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেন।
তিনি বীজগণিতের বহু বিচিত্র ও জটিল নিয়মকে সহজ সূত্রে নিয়ে আসেন এবং বর্তমানে প্রচলিত বহু সূত্রও তাঁর উদ্ভাবিত। তাঁর ঐকান্তিক সাধনায় অ্যালজাবরা মেড ইজি, মডার্ন জিওমেট্রি, ইন্টারমিডিয়েট সলিড জিওমেট্রি প্রভৃতি গ্রন্থ প্রণীত হয়। তাঁর আমলে মুদ্রণশিল্প তেমন উন্নত ছিল না। এই অভাব পূরণে তিনি কলকাতায় কে পি বসু পাবলিশিং কম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, যা ৪২ বিধান সরণি, কলকাতায় এখনো বিদ্যমান। তিনি সংগীত ও নাট্যপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। শারদীয় দুর্গোৎসবের সময় তিনি সাধারণ দর্শকদের মধ্যে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করতেন।
পড়াশোনা শেষ করে তিনি ১৮৯২ সালে ঢাকা কলেজে গণিত শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন এবং এখানেই আমৃত্যু কর্মরত ছিলেন।
তিনি বেশ কিছু গণিতশাস্ত্রের পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন:
- এলজাবরা মেড ইজি
- মডার্ণ জিওমেট্রি
- ইন্টারমিডিয়েট সলিড জিওমেট্রি
মেধা, অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের বলে পৈতৃক দৈন্যদশা কাটিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা অর্জন ও প্রভূত অর্থের মালিক হয়েছিলেন। ১৯০৭ সালে তিনি স্ব-গ্রামে প্রাসাদোপম এক ভবন নির্মাণ করেন। তিনি ১৯১৪ সালে পার্নিসাস ম্যালেরিয়া জ্বরে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃতদেহ ঝিনাইদহ এসে পৌঁছালে ঝিনাইদহের সকল অফিস আদালত বন্ধ হয়ে যায়। শোকাভিভূত হাজার হাজর মানুষ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নবগঙ্গা নদীর তীরে উপস্থিতত হয়। ঝিনাইদহ শহরে তার নামে একটি সড়কের নাম 'কে. পি.বসু সড়ক' নামকরণ করা হয়েছে।