কুষ্টিয়া জেলার অন্যতম কৃতিসন্তান, স্বদেশী আন্দোলনের নিরলস কর্মী এবং মোহিনী মিলের প্রতিষ্ঠাতা মোহিনী মোহন চক্রবর্তী বঙ্গদেশের বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন।
ব্রিটিশ আমলে তিনি দেশকে স্বয়ংসম্পন্ন করার জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করেন, তা পরবর্তীকালে একটি আদর্শ হিসেবে গৃহীত হয়। মোহিনী মোহন চক্রবর্তী কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি থানার এলাঙ্গীপাড়ায় ১২৪৫ বঙ্গাব্দে (১৮৩৮ সালে) ২১ আষাঢ় এক ব্রাক্ষ্ণণ পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম কৃষ্ণলাল চক্রবর্তী এবং মাতার নাম ভগবতী দেবী।
তাঁর পিতা পুলিশ বিভাগে চাকরী করতেন এবং পিতামহ নব কিশোর চক্রবর্তী ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে প্রতিষ্ঠিত কুমারখালি সিল্ক ফ্যাক্টরির দেওয়ান ছিলেন। এন্ট্রান্স পাশ করে মোহিনী মোহন চক্রবর্তী কুষ্টিয়া কালেক্টরেট অফিসে অসিফ সহকারী পদে চাকরি নেন। অক্লান্ত কর্তব্যনিষ্ঠা, কর্মতৎপরতা এবং দায়িত্ব বোধের গুণে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে উন্নিত হন। সে সময় একজন বাঙ্গালীর পক্ষে এতটা পদোন্নিত লাভ করা অসম্ভব ছিল।
তাঁর কর্মদক্ষতার প্রশংসা করেছিলেন কুষ্টিয়ার তদানীস্তন মহকুমা প্রশাসক অ্যালেকজান্ডার ম্যাকেঞ্জি। চাকরি ত্যাগ করে মোহিনী মোহন ১৯০৭ সালে বক্রবর্তী এন্ড সন্স নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পনির পক্ষ থেকে ১৯০৮ সালে তিনি কুষ্টিয়া মোহিনী মিলস এন্ড কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি কাপড়ের মিল স্থাপন করেন। মাত্র আটখানা তাঁত নিয়ে মিল শুরু হয়।
পরবর্তীকালে মোহিনী মিলটি এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব খ্যাতি অর্জন করে। মোহিনী মিলের মোটা শাড়ি ও ধুতি বাংলার মানুষের প্রয়োজনে লাগে। শেষদিকে এই মিলে দু-তিন হাজার লোকের চাকরি হয়। মোহিনী মোহনের জনহিতকর একটি কাজের দৃষ্টান্ত এই মিলটি। ১৯২২ সালে মোহিনী মোহন কুষ্টিয়ার সমাজসেবা এবং কর্মসংস্থান ব্যবস্থাপনায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব।