বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

বাউলের আঞ্চলিক বৃত্ত ও পদকর্তা
বাউলের আঞ্চলিক বৃত্ত ও পদকর্তা

বাংলার বাউলদের আঞ্চলিক সীমারেখা হল বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বরিশাল, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম ইত্যাদি অব্জল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, বাকুড়া, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, চব্বিশপরগণা ইত্যাদি।

এই যে বিশাল এলাকা জুড়ে বাউলদের বিস্তার ঘটেছে, তাতে সবখানে একই ধরনের বাউল প্রত্যক্ষ করা যায় না। আসলে, অঞ্চলভেদে বাউলদের বেশ-বাস হতে শুরু করে গানের কথায়, সুরে, এমনকি সাধন-পদ্ধতিতে, করণ-কার্যে নানা ধরনের বৈসাদৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যায়। যেমন রাঢ় অঞ্চলের বাউলদের সাথে মধ্যবঙ্গের বাউলদের অন্তর্গত সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল। আসলে, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া-মুর্শিদাবাদ বা বীরভূম-বাকুড়া অঞ্চলের বাউলেরা বৈষ্ণবপ্রভাবিত, তারা বৈষ্ণবদের মতো যেমন গেরুয়া-হলুদ পোশাক পরিধান করেন, তেমনি গানের শুরুতে বা পরে মুখে বলেন ‘হরি হরি’ বা ‘হরি বোল’; পক্ষান্তরে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ফরিদপুর, মাগুরা অঞ্চলের বাউলেরা নাথ, বৈষ্ণব ও সুফি মতবাদের মিশ্রণে সাধনায় নিবিষ্ঠ থাকেন, অন্যদিকে তারা জিন্দাদেহে মুর্দার বেশ তথা সাদা কাপড় পরিধান করেন, আর মুখে বলেন ‘আলেক সাঁই’, ‘আল্লাহ আলেক’, ‘জয় গুরু’, ‘সাঁই নিরঞ্জন’ ইত্যাদি, এদের সাধন-করণ হিসেবে সাধুসঙ্গ করতে দেখা যায়, সে সাধুসঙ্গের সাথে দিনডাকা, আসন দেওয়া, সেবাগ্রহণ, গান গাওয়া ইত্যাদি স্বতন্ত্র্য কিছু নিয়ম মেনে সম্পন্ন করা হয়। অন্যদিকে সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের বাউলেরাও ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়েই তাদের সাধন-ভজন করেন। তবে, এ সকল অঞ্চলের বাউলদের সঙ্গে সুফিদের নিকট সাদৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যায়। তবে, করণ-কার্যের অনেক কিছুতেই তারাও সুফিদের থেকে স্বতন্ত্র্য পরিচয়ের অধিকারী।

বাউল-সাধক ও পদকর্তা

বাংলার বাউল-সাধক পদকর্তাদের মধ্যে শ্রেষ্টত্বের দাবীদার হলেন- ফকির লালন সাঁই। তিনি আনুমানিক ১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দ হতে ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ধরাধামে ছিলেন। লালন সাঁই তাঁর সমগ্রজীবন ব্যয় করেছেন বাউল-সাধনার স্থায়ী ও একটি গানগত রূপ দিতে, তাঁর গানে বাউল-সাধনার করণ-কার্যের নানাবিধ নির্দেশনা আছে। তিনি দৈন হতে শুরু করে গোষ্ঠ, গৌর, আত্মতত্ত্ব, আদমতত্ত্ব, নবীতত্ত্ব, সৃষ্টিতত্ত্ব, সাধনতত্ত্ব, দেহতত্ত্ব ইত্যাদি পর্বের গানের পাশাপাশি সমাজ-সংস্কারমূলক মানবিকতার উদ্বোধনমূলক গান রচনা করেছেন।

বাউল-সাধনার গুরু-শিষ্য পরম্পরার লালন প্রবর্তিত ধারাটি অদ্যাবধি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অত্যন্ত বেগবান রয়েছে। লালনপন্থী সাধকদের মধ্যে পদ রচনায় অন্যান্য যারা শ্রেষ্টত্ব অর্জন করেছেন, তারা হলেন- দুদ্দু শাহ, খোদাবক্শ শাহ, বেহাল শাহ, মকছেদ আলী সাঁই, মহিন শাহ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ ও ভারতের বাউল-সাধক, পদকর্তা ও সংগীতশিল্পী হিসেবে যাদের স্বীকৃতি রয়েছে, তাঁরা হলেন যাদু বিন্দু, দ্বিজ দাস, পাঞ্জু শাহ, গোসাই গোপাল, হাছন রাজা, নবনী দাস বাউল, পূর্ণদাস বাউল, শাহ আবদুল করিম প্রমুখ।

বাউল-সাধনা ও বাউল গান রচনার ধারা বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এখনও প্রবহমান ও সজীব একটি ধারা, যুগে যুগে কালে কালে শত সহ¯্র বাউলেরা পূর্বে যেমন এই সাধনা ও গানের ধারা চর্চা করেছেন, বর্তমান কালেও অসণিত বাউল-সাধক-ভক্তগণ এই ধারা অব্যাহত রেখে চলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে গেলে এখনও তাই বাউলের দেখা মেলে, এমনকি চলতে পথে রাস্তায়, ট্রেনে, বাসে বা শহরাঞ্চলেও বাউলশিল্পীদের প্রসার চোখ এড়িয়ে যায় না, কেননা তাদের কণ্ঠে থাকে সুমধুর গান আর ভাবের বিস্তার।

তথ্য কৃতজ্ঞতাঃ- নাট্যকার ও গবেষক সাইমন জাকারিয়া

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

লালন স্মরণোৎসব  ২০২৪
লালন স্মরণোৎসব ২০২৪

লালন স্মরণোৎসব ২০২৪

  • Sub Title: একদিনের দোল পূর্ণিমার লালন স্মরণোৎসব ২০২৪

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন