বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

লালন কথা – ৭ম পর্ব
লালন কথা – ৭ম পর্ব

লালনের ভাবশিষ্যরা বিশ্বাস করে যে শারিরীক প্রেম ভালোবাসার মধ্যে প্রকৃত শান্তি নেই; প্রকৃত শান্তি আছে স্বর্গীয় ভালোবাসায়। গুরুর নিকট দীক্ষা গ্রহনের পর সাধনার বিশেষ স্তরে পৌঁছুলেই কেবল শিষ্যকে খেলাফত প্রদান করা যায়।

লালনের অনুসারীরা বিবাহ এবং স্ত্রী সম্ভোগ করতে পারে কিন্তু তাদের বিশ্বাস সন্তান উৎপাদনের ফলে আত্না খন্ডিত হয়, আর খন্ডিত আত্না নিয়ে খোদার নৈকট্য লাভ করা যায়না। সেই কারনেই তারা সন্তান উৎপাদন থেকে বিরত থাকেন।

তাছাড়া সন্তান উৎপাদনকে তাঁরা বেদনাদায়ক বোঝা হিসেবেও বিবেচিত থাকেন। খেলাফতের ধারণাটি ইসলামী সুফিজম থেকে এসেছে যার মুলকথা আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে খোদার নৈকট্য লাভ করা যায়। সুফিবাদ সাধনার দুটি পর্যায় হলো বাকাবিল্লাহ এবং ফানাফিল্লাহ। বাকাবিল্লাহ মানে খোদার অপার ভালোবাসা, অন্যদিকে ফানাফিল্লাহ হলো আত্মার ভিতর খোদাকে ধারণ করা। বাকাবিল্লাহ ও ফানাফিল্লাহ অর্জন করার জন্য প্রয়োজন আত্মার পরিশুদ্ধি। খেলাফত অর্জনের পর একজন সাধক সকল পার্থিব বিষয় থেকে নির্মোহ হয়ে উঠেন।

পুরুষরা সাদা আলখেল্লাহ এবং সাদা লুঙ্গি পরে অন্যদিকে মেয়েরা সাদা শাড়ী পরে, যাকে তাঁরা বলে খিলকা। খিলকা হলো কাফন সদৃশ পোষাক-তাদের ভাষায় জিন্দাদেহে মুর্দার পোষাক।

খেলাফত প্রদানের সময় খেলাফত গ্রহণকারীকে চোখে সাদা কাপড় বেঁধে খিলকা গায়ে লালনের সমাধিকে কেন্দ্র করে সাতবার প্রদক্ষিণ করতে হয়। এ সময় তাঁরা লালনের একটি বিশেষ গান গাইতে থাকে- কে তোমারে এ বেশ-ভুষণ পরাইল বল শুনি।

জিন্দাদেহে মুর্দার বেশ,
খিলকা তাজ আর ডোর কোপনী।।

লালনের ফকিরের বয়স তখন ১১৬ বছর, একদিন তিনি শিষ্যদের ডেকে বললেন, এই আশ্বিন মাসের শেষের দিকে তোমরা কোথাও যেওনা কারণ পহেলা কার্ত্তিক গজব হবে। গজবের বিষয়টি শিষ্যরা কেউ সঠিক ভাবে অনুমান করতে না পারলেও আসন্ন বিপদের আশংকা করতে লাগলো।

মৃতর প্রায় একমাস আগে তার পেটের ব্যারাম হয়, হাত পায়ের গ্রন্থিতে পানি জমে। পীড়িতকালেও তিনি পরমেস্বরের নাম সাধন করতেন, মধ্যে মধ্যে গানে উন্মুক্ত হতেন। ধর্মের আলাপ পেলে নববলে বলিয়ান হয়ে রোগের যাতনা ভুলে যেতেন।

এ সময় দুধ ভিন্ন অন্য কিছু খেতেন না তবে ইলিশ মাছ খেতে চাইলে শিষ্যরা বাজার থেকে ইলিশ মাছ নিয়ে আসে। দুপুরের সাধন ঘরের সামনে সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হয়। বিকেল থেকে শুরু করে সারারাত লালন তাঁর শিষ্যদের শ্বাশ্বত বাণী শোনান, মাঝে মাঝে গাওয়া হয় তাঁর গান। রাতে আলোচনা শেষ করে লালন সাধন ঘরে ফিরে গেলেন বিশ্রাম নিতে।

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন