বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেছেন- বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের কোন ধর্ম ও জাত ছিলনা। লালনের একটি মাত্র পরিচয় ছিল সেটি হচ্ছে মানবতা। তিনিই একমাত্র বাউল সাধক যিনি সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানবতাবাদীর পথে ডাক দিয়ে ছিলেন।
তিনি অহিংস মানবতার ব্রত নিয়ে মানুষের কল্যাণে অসংখ্য গান সৃষ্টি করে গেছেন। তাঁর এই অমর সৃষ্টি সঙ্গীত কোন ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সকল ধর্মের উর্ধে থেকে সম্প্রীতির বাধনে আবদ্ধ করতে মরমী এই সাধক মানব মুক্তির জন্য সৃষ্টি করেছিলেন ফকিরী মতবাদ। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু লালনের আর্দশে অনুপ্রাণীত হয়ে সেদিন সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো দৃঢ় করে তুলতে বলেছিলেন ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আজকের যুগে তাঁর এই আহবান বড় একেবারেই বাঙালী জাতির জন্য সমকালিন। তাই আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে লালনের আর্দশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
সোমবার রাতে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে লালন একাডেমির আয়োজনে বাউল সম্রাটের ১২৭তম তিরোধান দিবসের ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুবউল আলম হানিফ আরো বলেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের সৃষ্টি দেশের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বে তাঁকে ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে। অথচ আমাদের এখানে লালনের ভাবাদর্শ নিয়ে তেমন একটা চর্চা দেখা যায়না। তিনি বলেন, বিশ্বের বুকে লালনের ভাবাদর্শ ছড়িয়ে দিতে আগামীতে এই ছেড়িয়ায় লালন ধামে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবো।
তিনি আরো বলেন, লালন ফকির জাতহীন মানব দর্শন ও মানবতার ভাবধারাকে প্রতিষ্ঠিত করতে একটি অসা¤প্রদায়ীক সাম্যের সমাজ চেয়ে ছিলেন তিনি। লালন মানুষকে শিখিয়েছিলেন কোন ধর্মের মধ্যে আবদ্ধ থেকে সম্প্রীতি বজায় রাখা যায় না। সকল ধর্মের উপর মানব ধর্ম। ধর্ম একটি উৎসব। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। ফকির লালন এর চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে সমাজের সকল প্রকার হানাহানি কাটাকাটি দুর করা সম্ভব। সবার আগে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে একজন খাঁটি মানুষ হিসেবে। মানুষ হতে পারলেই এদেশের সমাজ ব্যবস্থা এক ও অভিন্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে বাউল সম্রাট লালন সাঁই মাজার প্রাঙ্গনে আগত সাধু-গুরু দর্শনার্থীদের খাওয়া পানি সমস্যা দুর করতে বিশুদ্ধ পানীয়-জলের প্রবাহ স্থাপনার উদ্বোধন করেন। এছাড়াও লালন একাডেমিতে একটি আধুনিক মানের রেষ্ট হাউস নির্মাণ কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে বলে আশা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই আগত অতিথিদের কুষ্টিয়া লালন একাডেমীর পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া, ক্রেষ্ট ও আত্মসুদ্ধির প্রতীক একতারা উপহার দিয়ে বরণ করে নেন। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো: জহির রায়হানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম মেহেদী হাসান (বিপিএম) কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খোকসা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহা¦জ সদর উদ্দিন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, বিজ্ঞ জিপি এ্যাড.আখতারুজ্জামান মাসুম, বিজ্ঞ পিপি এ্যাড.অনুপ কুমার নন্দী, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লালন একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাইজাল আলী খান প্রমুখ।
প্রধান আলোচক হিসেবে লালন শাইয়ের জীবন কর্ম ও সৃষ্টি রচনাবলী নিয়ে আলোচনা করেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. সরোয়ার মুর্শেদ। আলোচক ছিলেন লালন মাজারের প্রধান খাদেম মহম্মদ আলী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কুমারখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুজ্জামান, লালন একাডেমির এ্যাডহক কমিটির সদস্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সেলিম হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির সহ-সভাপতি কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে পরিবেশিত হয় লালন সংগীত। এতে উদ্বোধনী প্রার্থনা সংগীত পরিবেশন করেন পরম শ্রদ্ধেয় গুরু নহির শাহ ও তার ভেগধারী বাউল ফকিরগণ। এরপর পরই বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের নিয়মিত লালন সঙ্গীত শিল্পী কুষ্টিয়ার কৃতিশিল্পী শাহানাজ বেলি, সমীর বাউলসহ স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ লালন সঙ্গীত পরিবেশন করেন। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই সংগীত পরিবেশন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সৈকত মাহমুদ।
সুত্রঃ- আন্দোলনের বাজার