কুষ্টিয়া শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে সদর উপজেলার ঝাউদিয়া গ্রাম। সেখানেই অবস্থান ইতিহাসের সাক্ষী প্রাচীন এই মসজিদের। দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন এই মসজিদটি।
স্থানীয় অনেকের মতে, বহু বছর আগে অলৌকিকভাবে মসজিদটি মাটি থেকে ফুঁড়ে ওঠে। মসজিদটি তৈরির কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এটি দেখতে আসেন অনেকে।
আবার অনেকের দাবি, প্রায় ১ হাজার ১০০ বছর আগে ইরাক হতে ভারত, ভারত থেকে শাহ সুফি আদারি মিয়া ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও বাগেরহাট এলাকায় ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে এসেছিলেন। সে সময় তিনি ঝাউদিয়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তিনিই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।
আদারি মিয়ার মত্যুর পর মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় তাকে কবর দেওয়া হয়। তবে ওই স্থানে তার কোনো বংশধর নেই বলে স্থানীয়রা জানান। তার কবর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় একটি মাজার কমিটি। মসজিদের প্রবেশদ্বারে লেখা আছে ‘এটির বড় পরিচয় মানুষের তৈরি এবং এটা প্রতিষ্ঠিত হয় মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে’। কিন্তু ওই সময় কে নির্মাণ করেছে তার কোনো উল্লেখ নেই। স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরাও এর উত্পত্তি সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি।
মসজিদটি ইট, পাথর, বালি ও চীনামাটির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি। এর উপরিভাগে সুদৃশ্য পাঁচটি গম্বুজ ও ভিতরে প্রবেশ দরজায় দুটি মিনার রয়েছে। এটি অপূর্ব শৈল্পিক কারুকার্য সংবলিত। ১৯৬৯ সালে এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি হাসান চৌধুরী তৎকালীন সরকারের সঙ্গে একটি রেজি. চুক্তিনামা অনুযায়ী মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন।
চুক্তিনামা অনুযায়ী এই মসজিদের মোতোয়ালি (তত্ত্বাবধায়ক) হিসেবে থাকবে হাসান আলী চৌধুরী অথবা তারই বংশধর। বর্তমানে তারই বংশধর মসজিদটি পরিচালনা করছেন। মসজিদটি পরিদর্শনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ ভিড় করেন।
বিশেষ করে প্রতি শুক্রবারে এখানে লোক ধারণের জায়গা থাকে না। অনেকেই মান্নত গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি নিয়ে এখানে উপস্থিত হন। মসজিদটিকে ঘিরে কিছু কুটির শিল্পের লোকজনও নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
তবে এখানে আগত দর্শনার্থীদের জন্য তেমন সুযোগ-সুবিধা নেই, নেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। ফলে এ স্থানটি দর্শনীয় হওয়া সত্ত্বেও এর সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আবার মসজিদটির দীর্ঘদিন উন্নয়ন না হওয়ায় সৌন্দর্যও নষ্ট হতে বসেছে।