আমৃত ফকির লালন ছেউড়িয়াতেই ছিলেন, মৃতর পর ছেউড়িয়ার আঁখরা বাড়িতেই তার সমাধি নির্মিত হয়। ছেউড়িয়াভিত্তিক লালনের জীবন বৃত্তান্ত বিস্তারিত খুঁজে পাওয়া যায় ফকির আনোয়ার হোসেন মন্টু শাহের সম্পাদিত লালন সঙ্গীত নামক গ্রন্থে।
লালন কোথায় ছিলো, কিভাবে কালীগঙ্গা দিয়ে ভেসে আসলো এসব বিষয়ে যে তথ্য পাওয়া যায় তা সর্বজনগ্রাহ্য নয়। কথিত আছে গঙ্গাস্নান সেরে ফেরার পথে লালন বসন্ত রোগে গুরুতর ভাবে আক্রান্ত হয়ে পরেন। রোগের প্রকোপ অচেতন হয়ে পড়লে সঙ্গী সাথীরা তাঁকে মৃত মনে করে রোগ সংক্রমনের ভয়ে তাড়াতাড়ি মুখাগ্নি করে নদিতে ফেলে দেয়।
লালনের জন্ম আসলে কোথায় তা আজো নিশ্চিত করে বলা যায়না। কোন কোন লালন গবেষক মনে করেন লালন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার চাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ভাড়ারা গ্রামে জন্মেছিলেন। এই মতের সাথে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেন এই বলে যে, ছেউড়িয়া থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দুরের ভাড়ারা গ্রামের ষোল সতের বছরের একটি যুবক নিখোঁজ হলো অথচ তাঁর দীঘ জীবদ্দশায় তাঁকে তাঁর কোন আত্মীয়-স্বজন কিংবা পরিচিত কেউ চিহ্নিত করতে পারলোনা-তা এক বিস্ময়কর ব্যাপার।
১৩৪৮ সালের আষাঢ় মাসে প্রকাশিত মাসিক মোহাম্মদী প্রত্রিকায় এক প্রবন্ধে লালনের জন্ম যশোর জেলার ফুলবাড়ি গ্রামের মুসলিম পরিবারের বলে উল্লেখ করা হয়া। অন্যদিকে পাঞ্জুশাহের ছেলে খন্দকার রফিউদ্দিন তাঁর ভাব সঙ্গীত নামক গ্রন্থে ফকির লালনের জন্ম এর বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন ফকির লালন শাহের জন্মভূমি যে যশোর জেলার হরিনাকুন্ডু থানার অধীন হরিশপুর গ্রামেই ছিলো, ইহাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। লালনের জন্মস্থান সম্পর্কে লালন গবেষক ডঃ আনোয়ারুল করিমের ধারণাটি ছিলো অনবদ্য –
আমি দীর্ঘ ২০ বছর লালন ফকিরের জীবনী বিষয়ে তথ্যনুসন্ধান করে বেড়িয়েছি।
কিন্তু তাঁর জাতিত্ব অথবা জন্মস্থান সম্পর্কে কোন সিদ্ধাতে আজো উপনীত হতে পারিনি।
মুলত লালনের জন্ম পরিচয় রহস্যময়। আসলে লালন নিজেও তাঁর জন্ম পরিচয় প্রদান করতে উৎসাহবোধ করেননি, তা তাঁর গানেই স্পষ্টমান –
সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে
লালন কয় জাতের কিরূপ
দেখলাম না এই নজরে।।
সত্যিই তাই, জাতপাতের উদ্ধে উঠে লালন নিজেকে শুধুই মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়ে গেছেন।