বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

কুষ্টিয়া লালন একাডেমি চত্বরে তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব শুরু।
কুষ্টিয়া লালন একাডেমি চত্বরে তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব শুরু।

প্রকৃত মানুষ হতে একজন গুরু বা মুর্শিদ ধরার বিষয়ে শিক্ষা দিতে মরমী সাধক লালন শাহ আমরণ কাজ করেছেন। মরমী সাধক লালন শাহ তাঁর গানে বলেছে, মানুষ ছেড়ে ক্ষেপা রে তুই মূল হারাবি,মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি..। গানে আরা বলেছে, যে মুরশিদ সেই তো রাসূল ইহাতে নাই কোন ভুল খোদাও সে হয়, এ কথা লালন কয়না কোরআনে কয়।

মরমী সাধক লালন শাহ ১২৮ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে (১৬,১৭ ও ১৮ অক্টোবর) মঙ্গলবার থেকে তিন দিনব্যাপী কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন কালিনদীর তীরে ছেঁউড়িয়ার লালন একাডেমি চত্বরে লালন স্মরণোৎসব শুরু হচ্ছে। স্মরণোৎসব শুরুর আগেই তাঁর অধিকাংশ শিষ্যভক্তগণ এসে গেছেন। মঙ্গল, বুধবার ও বৃহঃবার ৩ দিনের গুরু শিশ্যের মিলনমেলা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা বিনিময়সহ, নানা অনুষ্ঠানমালা নিয়ে এই তিরোধান দিবস পালিত হবে।

তাঁর লেখা গানের সারমর্ম হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার সাথে আত্মিক সম্পর্ক ও গুরু ভক্তি-শ্রদ্ধার বিষয়। মরমী সাধক লালন শাহের লেখা কথাগুলি আজও তাঁর ভক্তদের প্রাণে সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রেমের স্পৃহা জাগায়। এ স্মরণোৎসবে লালন ভক্তরা চোখের জলে গুরুর প্রতি ভক্তি ও ভালবাসা দিতে মিলিত হবেন। লালন দর্শন মতে জানাযায়,বদ্ধজীব মানুষ যখন গুরুর দিক্ষা নেই তখনই সে মানুষ।গুরুর ভক্তি ও খেদমতেই শিশ্যের কাছে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। পহেলা কার্তিক তাঁর ভক্তরা গুরুর প্রতি চোখের জলের সুধা দিয়ে গভীর ভক্তি প্রদান করেন।তাঁদের মত,দৃশ্যমান গুরু খুশি হলে তবেই অদৃশ্যমান মহান সৃষ্টিকর্তা খুশি। মানুষ গুরুর দিক্ষা দিতেই গুরুর প্রতি ভাব বিনিময় করতে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালন শাহের বাড়ীতে তাঁর ভক্তদের এই মিলন মেলা। মরমী সাধক লালন শাহ তাঁর জীবদর্শায় প্রতি বছর দোল পূর্ণিমায় তাঁর অনুসারিদের সঙ্গে নিয়ে স্মরণোৎসব পালন করতেন। আর এখন বাংলা পহেলা কার্ত্তিক লালনের তিরোধান দিবস উপলক্ষে তাঁর শিষ্যভক্তগণ আরেকটি পালন করে থাকেন।

সেই সাথে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমির আয়োজনে বছরে দুইবার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। একটি হচ্ছে দোল পূর্ণিমায় আর আরেকটি হচ্ছে পহেলা কার্তিক তিরোধান (মৃত্যুবার্ষিকী) দিবস। এ দুটি অনুষ্ঠানকে ঘিরে প্রতি বছর লালনের শাহের বাড়ি কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন কালিনদীর তীরে ছেঁউড়িয়ায় লাখো মানুষের সমাগম হয়। এ উৎসবকে ঘিরে দেশের দুর-দুরান্ত থেকে এমনকি বিদেশ থেকেও দলে দলে মানুষ ছুটে আসেন।

৩ দিন ব্যাপী এ অনুষ্ঠানের প্রতিদিন যথারীতি থাকছে আলোচনা সভা, গ্রামীন মেলা ও নির্ধারিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এদিকে, আখড়া প্রাঙ্গণের মঞ্চ এরই মধ্যে প্রস্তুত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য। এ উৎসবকে ঘিরে আখড়া বাড়িতে এখন সাজ সাজ রব। দুর দুরান্ত হতে অসংখ্য সাধুভক্তানুরাগীরা আসতে শুরু করেছেন। আর মেলা চত্বরসহ কালিগঙ্গা নদীর তীর এলাকায় হরেক রকম পণ্যের দোকান বসাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

অনুষ্ঠানে আগত লালন অনুসারী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। আজ সোমবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো: আসলাম হোসেন ও পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত পিপিএম।

এদিকে লালন একাডেমির সভাপতি ও কু্ষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন জানান, আগামী ১৬ অক্টোবর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন কু্ষ্টিয়া-৩ আসনের সাংসদ ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মোঃ মাহবুবউল আলম হানিফ। ২য় দিন প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, এমপি ও সমাপনি দিবসে প্রধান অতিথি থাকবেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া। এছাড়া প্রতিদিন থাকবে সারাদেশ থেকে আগত হাজারও লালন অনুসারী শিল্পীদের গান। লালন মেলায় সিসি ক্যামেরা ও বিকল্প বিদ্যুতের ব্যাবস্থাও থাকবে।

মরমী সাধক লালন শাহ সম্পর্কে জানা যায়, বৃটিশ শাসকগোষ্ঠির নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিল, ঠিক সেই সময়ই সত্যের পথ ধরে, মানুষ গুরুর দিক্ষা দিতেই সেদিন মানবতার পথ প্রদর্শক হিসাবে লালন শাহের আবির্ভাব ঘটে কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন ছেঁউড়িয়াতে। লালন শাহের জন্মস্থান নিয়ে নানা জনের নানা মত থাকলেও আজো অজানায় রয়ে গেছে তাঁর জন্ম রহস্য। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। তিনি কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তবে তিনি ছিলেন স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত। যৌবনকালে পূর্ণ লাভের জন্য তীর্থ ভ্রমনে বেরিয়ে তার যৌবনের রূপামত্মর ও সাধন জীবনে প্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।

তীর্থকালে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে তার সঙ্গীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করে। পরে মলম শাহের আশ্রয়ে জীবন ফিরে পাওয়ার পর সাধক সিরাজ শাহের সান্নিধ্যে তিনি সাধক গুরু হিসেবে পরিচয় লাভ করেন। প্রথমে তিনি কুমারখালির ছেঁউড়িয়া গ্রামের গভীর বনের একটি আমগাছের নীচে সাধনায় নিযুক্ত হন।পরে স্থানীয় কারিকর সম্প্রদায়ের সাহায্য লাভ করেন। লালন ভক্ত মলম শাহ গুরু শিশ্যের মিলনমেলা তৈরীর জন্য ষোল বিঘা জমি দান করেন। দানকৃত ওই জমিতে ১৮২৩ সালে লালন আখড়া গড়ে ওঠে। প্রথমে সেখানে লালনের বসবাস ও সাধনার জন্য বড় খড়ের ঘর তৈরী করা হয়। সেই ঘরেই তাঁর সাধন-ভজন বসতো। ছেঁউড়িয়ার আঁখড়া স্থাপনের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিষ্যভক্তদের নিয়ে পরিবৃত থাকতেন। তিনি প্রায় এক হাজার গান লিখে গেছেন। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর ভোরে এই মরমী সাধক লালন শাহ দেহত্যাগ করেন এবং তাঁর সাধনার ঘরের মধ্যেই তাকে সমাহিত করা হয়।

Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন