বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

এক নজরে বারোশরীফ দরবার ও জামে মসজিদ
এক নজরে বারোশরীফ দরবার ও জামে মসজিদ

বারোশরীফ দরবার ও জামে মসজিদ ১৬ই শাবান ১৩৯৫ হিজরী মোতাবেক ১৯৭৫ইং সালের ২৫শে আগষ্ট এবং ৮ই ভাদ্র ১৩৮২ বঙ্গাব্দ রোজ সোমবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

পরম করুণাময় আল্লাহ্-রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় হাবীব, সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল (সাঃ) এর মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের পূর্ণতা দান করেছেন। আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূলে করীম, রাসূলে মকবুল, সরকারে দো-আলম, সরদারে দোজাহান হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জন্ম ও ওফাতের দিন ১২ই রবিউল আউয়াল, সোমবার। রাসূল (সাঃ) এর মাধ্যমে মানব জাতির নিকট প্রেরিত হয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ পবিত্র কোরআনুল করিম। শেষ বিচারের দিনও প্রিয় রাসূল (সাঃ)ই আমাদেরকে শাফায়াত করবেন। তাই রাসূল(সাঃ) এর প্রতি মহব্বত ও তাঁর আদর্শ পালনের মাধ্যমে রাসূল (সাঃ) এর প্রেম বা ‘ইশ্কে রাসূল’ অর্জন করে ‘আল্লাহ্ প্রেম’ বা ‘ইশ্কে ইলাহী’তে স্থিতিলাভ হয়। সে কারণেই হুজুর (সাঃ) এর বরকতময় জন্ম ও ওফাত দিবস ১২ই রবিউল আউয়ালকে লক্ষ্য রেখে এই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে ‘বারোশরীফ দরবার এবং জুম্মার নামাজসহ সকল নামাজের জন্য মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিধায় ‘জামে মসজিদ’ বলা হয়।

প্রতিষ্ঠানের অবস্থানঃ

এই প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া শহরের কোর্ট রেল ষ্টেশনের পাশে আর.সি.আর.সি. ষ্ট্রীট, কোর্টপাড়ায় অবস্থিত। মোট ৫০(পঞ্চাশ) শতাংশ জমির উপর মসজিদ ও দরবার, রওজা মোবারক, ওযুখানা, মহিলাদের পৃথক দরবার, ফুল বাগান এবং একটি বিল্ডিং নিয়ে এই দরবার ও মসজিদ প্রতিষ্ঠিত।

প্রতিষ্ঠাতার পরিচয়ঃ

বারোশরীফ দরবার ও জামে মসজিদ বিশিষ্ট ওলিয়ে কামেল, আশেকে রাসূল (সাঃ) হযরত শাহ্ সূফী মীর মাসুদ হেলাল (রঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বিশিষ্ট কামেল পরিবারের সন্তান। তাঁর পূর্বপুরুষ হযরত মীর নিয়ামত আলী শাহ্ (জমাদারশাহ) (রঃ) একজন উচ্চ পর্যায়ের কামেল ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর মাজার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শিবনিবাসে অবস্থিত। ছোটবেলা থেকেই হযরত শাহ্ সূফী মীর মাসুদ হেলাল (রঃ) ধর্মভীরু এবং ইসলামী আমল-আকিদায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তাঁর বাবা জনাব মীর মনসুর আলী খুবই ধর্মানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। পিতার সুযোগ্য তত্ত্বাবধানে ইসলামী আদর্শ ও শরীয়তের বিধানাবলী সম্পর্কে তিনি পরিপক্ক হয়ে ওঠেন।

ময়মনসিংহের মধুপুর জঙ্গলে তাঁর আধ্যাত্মিক সাধনার প্রাথমিক দিনগুলি কঠোর রিয়াযত ও সাধনার মাধ্যমে অতিবাহিত হতে থাকে। পরবর্তীতে তিনি কুষ্টিয়া জেলার রানাখড়িয়া গ্রামে হযরত শাহ্ সূফী শেখ খলিলউদ্দিন (রানাখড়িয়া) (রঃ) এর নিকট বায়য়াত গ্রহণ করেন। মাত্র ২৭ বছর বয়সেই তিনি কাদেরিয়া তরিকায় খেলাফত প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে একে একে চিশ্তিয়া, নক্শবন্দ মোজাদ্দেদী তরীকার খেলাফত প্রাপ্ত হন। সর্বশেষ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট থেকে রূহানীভাবে ‘বারোশরীফ’ তথা ‘মোহাম্মদী তরীকা’ প্রাপ্ত হন এবং এই তরীকার ইমাম হিসেবে পরিচিতি পান।

এরপর থেকে তিনি মোহাম্মদী তরীকায় মুরীদ করতে শুরু করেন এবং এই তরীকার প্রচার-প্রসারে নিজেকে উৎসর্গ করেন। বিগত পবিত্র ৬ই রমজান ১৪০৬ হিজরী মোতাবেক ১৬ মে ১৯৮৬ইং তারিখ শুক্রবার সুবেহ্ সাদেকের সময় তাঁর ওফাত (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রাজেউন) হয়। তাঁর রওজা মোবারক বর্তমানে কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়ায় বারোশরীফ দরবারে অবস্থিত।

বারোশরীফ দরবার ও জামে মসজিদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ-

ক) ইসলাম ধর্ম ও হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে গবেষণা ও তাঁর আদর্শপ্রচার।
খ) পবিত্র আল-কুরআন ও রাসূল (সাঃ)এর সুন্নাহর ভিত্তিতে ইসলামী শরীয়ত ও আধ্যাত্মিকতার চর্চা, প্রকাশ ও বিকাশ ঘটানো এবং ইবাদতবন্দেগী, রিয়াযত ও সাধনার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা। গ) রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশিত পথ অনুযায়ী চলা, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে রাসূল (সাঃ) এর আদর্শ ও প্রদর্শিত পথ প্রতিষ্ঠা করা।
ঘ) বারোশরীফ দরবারের প্রতিষ্ঠাতা মহান ইমাম (রঃ) এর সম্পর্কে গবেষণা, তাঁর আদর্শ এবং বারোশরীফ তথা মোহাম্মদী তরীকার প্রচার।
ঙ) বারোশরীফ তথা মোহাম্মদী তরীকার মাধ্যমে মানুষের রূহের উৎকর্ষ সাধন করে নফস্ বা পশুশক্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে সত্যিকারের পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
চ) বারোশরীফের তথা মোহাম্মদী দাওয়াত বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর সর্বত্র সর্বশ্রেণীর মানুষের মাঝে পৌঁছে দেয়া।
ছ) দুস্থ অসহায় মানুষদের সুচিকিৎসার মাধ্যমে সেবার ব্যবস্থা করা।
জ) নিরক্ষর মানুষদের আক্ষরিক জ্ঞান প্রদান এবং ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানে জ্ঞানী করা।
ঝ) দুস্থ, দরিদ্র, অসহায় ব্যক্তিদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল কর্মী হিসেবে গড়ে তুলে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা এবং একই সাথে তাঁদেরকে ধর্মীয় জ্ঞান প্রদান করা।
ঞ) এতিম ও দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা, বাসস্থান এবং খাদ্যের সুবন্দোব¯ত্ম করা।
ট) সমাজের বিভিন্ন বয়সের বেকার ও দরিদ্র মানুষদের সুসংগঠিত করে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা।
ঠ) মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণাগার এবং পাঠাগারের ব্যবস্থা করা।
ড) উপরোক্ত উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নে সহায়ক সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

প্রতিষ্ঠান পরিচালনাঃ-

বারোশরীফ তথা মোহাম্মদী তরীকার মহান ইমাম হযরত শাহ্ সূফী মীর মাসুদ হেলাল (রঃ) এর জীবদ্দশায় দরবার ও জামে মসজিদ পরিচালনার জন্য তিনি একটি কমিটি গঠন করেন। তিনি ঐ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। তাঁর ওফাতের পরে তাঁরই চিন্তাধারার আলোকে একটি গঠনতন্ত্র লিপিবদ্ধ করা হয়। উক্ত গঠনতন্ত্র দরবারের মুরীদদের সাধারণ সভায় বিগত ৩১শে আগষ্ট, ১৯৯৩ইং তারিখ মোতাবেক ১২ই রবিউল আউয়াল ১৪১৩ হিজরী অনুমোদিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মহান ইমাম (রঃ) কর্তৃক গঠিত কমিটিকে স্থায়ী কমিটি হিসেবে নির্ধারণ করা হয় ও একটি নির্বাহী কমিটি এই দরবারের মুরীদদের দ্বারা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে দরবার ও জামে মসজিদ পরিচালনা করছেন। কুষ্টিয়ার কোর্টপাড়ার কেন্দ্রীয় দরবারশরীফ ছাড়াও নারায়নগঞ্জ, ঢাকা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুর ও কুষ্টিয়ার সিরাজনগর, বাহিরমাদিয়া, ফারাকপুর কৈপাল, দলুয়া, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুরের বাগদিয়াতে এই দরবারের শাখা দরবারসমূহ চালু আছে। নির্বাহী কমিটি দ্বারা নির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে পরিচালনা কমিটির একটি উপদেষ্টা পরিষদ এবং পৃষ্ঠপোষক পরিষদ গঠিত আছে। এছাড়াও শাখা দরবারসমূহ পরিচালনার জন্য ইমাম নিযুক্ত আছেন।

শরীয়ত ও মারেফতের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে বারোশরীফ দরবারঃ

ইসলাম তথা কোরআন ও সুন্নাহ্র আলোকে শরীয়ত, তরীকত, হাকীকত, মারেফত শিক্ষার একটি অন্যতম আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে বারোশরীফ দরবার ও জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আধ্যাত্মিক শিক্ষায় প্রশিক্ষিত হওয়ার জন্য প্রত্যেক মানুষের ‘নফস’কে পবিত্র করা বা নফসের পবিত্রতা (তাযকিয়া নফস) হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। অর্থাৎ দুনিয়া বিমুখ (তরকে দুনিয়া); কাম, ক্রোধ, লোভ-লালসা, অহংকার, হিংসা-দ্বেষ, রিয়া ইত্যাদি কু-রিপু দমনপূর্বক তাসাউফের রীতি-নীতি মেনে রিয়াযত সাধনার দ্বারা নফস্কে ইসলামী অনুশাসনের অনুগামী করে বিশুদ্ধ, বশীভূত ও মার্জিত না করলে শরীয়তের বিধানাবলী নফস্ পালন করতে বা মানতে চায় না। অপরিশোধিত নফস্ মানুষকে মোহচ্ছন্ন ও বিভ্রান্ত করে শয়তান ও প্রবৃত্তির অনুগামী করে। ফলে, আত্মা বা রূহ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে রুগ্ন, কাম-জোর ও কলুষিত হয়ে যায়। তখন আল্লাহর বিধানাবলী মানুষ সঠিকভাবে পালন করতে সক্ষম হয় না। রাসূল (সাঃ) এর সুন্নতের বা তাঁর আদর্শের পয়রবী করাও তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই এই অবাধ্য ও অপরিশোধিত নফসের সাথে জিহাদ করে তাকে বশীভূত করতে হবে। এই জিহাদকে হাদীস শরীফে ‘জিহাদে আকবর’ বা বড় জিহাদ বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। এই জিহাদের মাধ্যমে এবং রিয়াযত ও সাধনার আগুনে নফসকে পরিশুদ্ধ করে উত্তম আখলাক, আকিদা, চরিত্র তথা আল্লাহ্তায়ালার রহমানী স্বভাব অর্জন করতে হবে। শরীয়তের পাবন্দি করে ‘রাসূল প্রেম’ অর্জন করতে হয়। সেজন্য অবশ্যই তরকে দুনিয়া বা দুনিয়া বিমুখ লোকের সত্যপরায়ণতা নফসের পবিত্রতা (তাযকিয়া-নফস্) অর্জনের প্রশিক্ষণের দ্বারা মানুষকে মোমিন হিসেবে গড়ে তোলা ও আধ্যাত্মিক ফায়েজ গ্রহণ ও সংরক্ষণের উপযুক্ত করার মাধ্যমে মানুষের মানুষ জনম সার্থক করে পরিপূর্ণ মানব হিসেবে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় এই আধ্যাত্মিক কেন্দ্রে।

তহবিল ও অর্থ সংক্রান্তঃ

বারোশরীফ দরবারের দেশী-বিদেশী মুরীদ-মুরীদান, আশেক-আশেকানদের চাঁদা ও অনুদান দ্বারা এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে আসছে। আর্থিক শৃংখলা ও স্বচ্ছতার জন্য একটি অর্থ সংক্রান্ত কমিটি ছাড়াও আভ্যন্তরীর ও বহিরাগত অডিটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

মোহাম্মদী তরীকা তথা বারোশরীফের বৈশিষ্ট্যসমূহঃ

এই দরবার ও জামে মসজিদ ইসলামী শরীয়তে বর্ণিত ইবাদতসমূহ যথাঃ সালাত (নামাজ), সিয়াম (রোজা), ইত্যাদির উপর খুবই গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এছাড়াও রূহানী ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য বিশেষ ইবাদনেতর উপরও জোর দেয়া হয়।

আমাদের প্রিয় রাসূল (সাঃ) এর জন্ম এবং ওফাত উভয় দিবসই ১২ই রবিউল আউয়াল এবং সোমবার। তাই রাসূল প্রেমের মাধ্যমে আল্লাহ্র মহব্বত সৃষ্টির জন্য প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১২ তারিখে নফল ইবাদত-বন্দেগী, রোজা রাখা ও ভোর রাত্রে খাস মিলাদ মাহ্ফিল ও বাদ এ‘শা আম মাহ্ফিলের ব্যবস্থা করা হয়।

বছরের তিনটি বড় অনুষ্ঠান বিশেষ গুরুত্বের সাথে উদ্যাপন করা হয়। সবার উপরে গুরুত্ব পায় ‘১২ই রবিউল আউয়াল বা ঈদে মিলাদুন্নবী বা ফাতেহা শরীফ’। এই দরবারের প্রতিষ্ঠাতার [মহান ওলিয়ে কামেল; আশেকে রাসূল; হযরত শাহ্ সূফী মীর মাসুদ হেলাল (রঃ)] ওফাত দিবস হিসেবে ‘৬ই রমজান ওরশ মোবারক’ পালিত হয়। ১৬ই শাবান এই দরবারের ‘অভিষেক দিবস’ বা ‘প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী’ হিসেবে পালিত হয়। প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও মঙ্গলবার বাদ এ‘শা মিলাদ মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত হয়। এই দুটি দিন মুরীদ-মুরীদানগণ নফস্ নিয়ন্ত্রণ ও এবাদতের জন্য নফল রোজা রাখেন।

মনোসংযোগ ও একাগ্রতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে রূহানী ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য এত‘কাফের উপর বিশেষ জোর দেয়া হয় বিধায় ব্যক্তিগত ও যৌথ এতে‘কাফের ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু ইসলামী কোন ইবাদতই পবিত্র কোরআন শিক্ষা ছাড়া সম্ভব নয়, সে কারণে কোরআন শিক্ষার উপর সর্বদাই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। নিয়মিত কোরআন শরীফ খতমের ব্যবস্থা আছে। ছোট ছেলে-মেয়েদের কোরআন শিক্ষার ক্লাস চালু আছে।

রাসূল (সাঃ) যেহেতু রাতে অতি আরামের ঘুমকে হারাম করে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন ও বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগীতে রত থাকতেন সে কারণে তাহাজ্জুদের নামাজ ও রাতের ইবাদত অনুশীলনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। ব্যক্তিগতভাবে ও যৌথভাবে গভীর রাতের ইবাদতের ব্যবস্থা করা হয়।

রাসূল (সাঃ) এর উপর দরূদ ও সালাম পাঠ ব্যতিরেকে ইবাদতে সফলতা লাভ করা এবং রাসূল (সাঃ) প্রেম হাসিল করার মাধ্যমে আল্লাহ্ প্রেমে স্থিতিশীল লাভ করা সম্ভব নয় বিধায় দরূদ ও সালাম পাঠের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

গবেষণাগার, লাইব্রেরী ও সমাজকল্যাণঃ

এই দরবারের প্রতিষ্ঠাতা মহান ইমাম (রঃ) একটি ছোট ইসলামী গবেষণাগার ও লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্থান সংকুলানের অভাবে গবেষণাগার ও লাইব্রেরীটি চালু রাখা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে ইহা চালু রাখার পরিকল্পনা আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা এবং হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা তাঁর ছিল। ভবিষ্যতে এ ধরণের জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি গরীব ও মেধাবী ছাত্রদের থাকা, সাধারণ শিক্ষা ও ইসলামী শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করতেন। এ প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ছেলে শিক্ষা সমাপ্ত করে কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, সমাজকল্যাণমূলক কার্যাদি পরিচালনার ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা আছে।

অযীফার বৈশিষ্ট্যঃ

বারোশরীফ তথা মোহাম্মদী তরীকার অযীফার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই অযীফায় পবিত্র কোরআন শরীফের প্রসিদ্ধ ও অত্যন্ত মর্তবাপূর্ণ সূরাসমূহ যথা- সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারা, সূরা ইয়াছিন, সূরা আররাহমানের অংশ বিশেষ সংযুক্ত আছে। এই অংশের পরে দরূদ শরীফসমূহের ‘তাজ’ বা ‘মুকুট’ হিসেবে পরিচিত ‘দরূদে তাজ’ অন্তর্ভূক্ত করা আছে। এর পরে আমাদের প্রাণ প্রিয় রাসূল (সাঃ) এর এই পৃথিবীতে আগমন উপলক্ষ্যে সৃষ্টির পক্ষ থেকে যে অভিনন্দন, আনন্দ ও শুভেচ্ছা বার্তা প্রচারিত হয়েছিল তারই প্রকাশ ঘটে অভিনন্দন বার্তায়। যিকিরের প্রথমেই ইসলামী ইমানের মৌলিক কলেমা- কলেমা তৈয়ব পাঠের মাধ্যমে ইসলামী ঈমানের প্রতি মনে ও মুখে প্রকাশ্য স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

এর পরই জিকির, কিয়াম ও সালামের অংশ। জিকির, কিয়াম ও সালামের মাধ্যমে রাসূল (সাঃ) এর প্রতি গভীর ভালবাসা, শ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয়।

অযীফার মর্মার্থঃ

বারোশরীফের অযীফার ভাবার্থ বা মর্মার্থ স্বল্প ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ইসলামী ঈমান ও আকিদার উপর সম্পূর্ণ ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করে রাসূল (সাঃ) এর প্রেমের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য হাছিল করার প্রক্রিয়া এই অযীফার ভিতর নিহিত আছে। পবিত্র কোরআন শরীফের সূরাসমূহের মাধ্যমে অযীফা শুরু হওয়ায় আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর জাত, সিফাত, সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, এক ও অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রকাশ পেয়েছে। জিকিরের আগে মুখে ও মনে কলেমা তৈয়ব ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্’ উচ্চারণের মাধ্যমে ইসলামের ঈমান ও তৌহিদের ঘোষণা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়। মহান আল্লাহ্র নৈকট্য মানব জন্মের প্রধানতম লক্ষ্য। সেই নৈকট্যের তরীকা বা পথ হচ্ছে ‘মোহাম্মদী’ বা রাসূল (সাঃ) এর প্রতি প্রেম। সেই কারণে দরূদশরীফের মাধ্যমে রাসূল (সাঃ) এর প্রেম হাছিলের ব্যবস্থা নিহিত রাখা হয়েছে এই অযীফায়। কালেমা তৈয়ব পাঠের মাধ্যমে জিকির শুরুর এক বিরাট মাহত্ব রয়েছে। তা হচ্ছে আধ্যাত্মিক ইবাদতের শিক্ষার ক্ষেত্রেও ইসলামী ঈমানের স্বীকৃতি পূর্ণরূপে প্রদান করা। জিকিরের মাধ্যমে রূহ পবিত্র ও শক্তিশালী করে রাসূল (সাঃ) এর প্রেম অর্জন করে আল্লাহ্ প্রেমে স্থিতি লাভ করা অন্যতম উদ্দেশ্য। শেষে রাসূল (সাঃ) এর প্রতি সালাম ও মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের দরবারে মোনাজাতের মাধ্যমে অযীফার সমাপ্তি ঘটে।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
আমরা কুকিজ ব্যবহার করি
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে কুকিজ ব্যবহার করি। তাদের মধ্যে কিছু সাইট পরিচালনার জন্য অপরিহার্য, অন্যরা আমাদের এই সাইট এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করে (কুকিজ ট্র্যাক করা)। আপনি কুকিজকে অনুমতি দিতে চান কিনা তা আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দয়া করে মনে রাখবেন যে আপনি যদি সেগুলি প্রত্যাখ্যান করেন তবে আপনি সাইটের সমস্ত কার্যকারিতা ব্যবহার করতে পারবেন না।