বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

কুষ্টিয়া সাংস্কৃতিক রাজধানী
কুষ্টিয়া সাংস্কৃতিক রাজধানী

‘‘আমার শেষ জীবন কাটাতে চাই কুষ্টিয়ায়’’ বাংলাদেশের হৃদয় হতে। কথাটি বলেছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক অন্নদাশংকর রায়। এমন কথা শুধু তারই নয় অনেক কবি-সাহিত্যিক, লেখক ও মনীষীর। প্রাচীন জনপদ কুষ্টিয়ার মাটি ও মানুষকে ঘিরে নানান কথা গল্প লিখেছেন তারা।

প্রাচীন ঐতিহ্য পদ্মা গড়াই বিধৌত কুষ্টিয়ার বিস্তীর্ণ জনপদ। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মরমী কবি বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, সু-সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন, কাঙ্গাল হরিণাথ, জলধর সেন, অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, কবি আজিজুর রহমান, নীলকর আন্দোলনের পথিকৃৎ জমিদার প্যারী সুন্দরী, অবিভক্ত ভারতের প্রধান বিচারপতি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং হিরোসীমায় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ড. রাধা বিনোদ পাল, বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক কবি দাঁদ আলীসহ অসংখ্য খ্যাতিমান, কবি সাহিত্যিক, বরেণ্য ব্যক্তি ও মনীষীর স্মৃতি বিজড়িত সাহিত্য সংস্কৃতির অন্যতম পাদপীঠ কুষ্টিয়া জেলা। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে ও মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্যাগ, তিতিক্ষা ও সেবার কারণে এ জেলার অনেক মাটি ও মানুষ অত্যন্ত গর্বিত।

বিপ্লবী বাঘা যতীন, সরোজ আচার্য, অতুল কৃষ্ণ, সুনীল সেনগুপ্ত, জ্যোতিষ চন্দ্র এবং আত্মহরি প্রমুখ স্বদেশী বিপ্লবীরা দেশ ও মাতৃকার নিঃস্বার্থ সেবার কারণে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছে। স্বদেশী আন্দোলনের পাশাপাশি ওহাবী আন্দোলনের কাজী মিয়াজান, খেলাফত আন্দোলনে আফসার উদ্দিন আহমেদ, কৃষক প্রজা আন্দোলনে শামসুদ্দিন আহমেদ, খেলাফত আন্দোলনে প্রফেসর আব্দুস সাত্তার পথিকৃৎ পুরুষ।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যূত্থান, ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় আন্দোলনে কুষ্টিয়াবাসীর ভূমিকা অগ্রগণ্য। মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় ভূমিকার কারণে বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় সামগ্রীক ইতিহাসে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত। বৃহত্তর কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের মুজিব নগরে মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী রাজধানী প্রতিষ্ঠায় এ জেলাকে গৌরবের আসনে সমাসীন করেছে। অসংখ্য কবি সাহিত্যিক, শিল্পী, কুশলী এবং চিত্রকরের অনন্য অবদানের কারণে সারা দেশের মধ্যে কুষ্টিয়া সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসাবে খ্যাতি পেয়েছে। বর্তমান বৃহত্তর কুষ্টিয়া স্বাধীনতা উত্তর ১৯টি জেলার মধ্যে ছিল ১৮তম। '৪৭ উত্তর দেশ বিভাগের পর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল হিসাবে এটি পূর্ব বাংলার অন্তর্ভুক্ত হয়। বিভাগপূর্ব সময়ে এটি ছিল অবিভক্ত নদীয়া জেলার অংশ। তৎকালীন সময়ে নদীয়া জেলা মহকুমা ছিল ৫টি। এগুলো হলো কৃঞ্চনগর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও রানাঘাট।

পাকিস্তান সৃষ্টির পর কুষ্টিয়া, মেহেরপুর এবং চুয়াডাঙ্গা নিয়ে স্বাধীন দেশ ‘‘কুষ্টিয়া জেলা’’ গঠিত হয়। প্রথম পর্যায়ে সামগ্রিকভাবে এ জেলার নামকরণ করা হয় ‘নদীয়া'। আর ভারত ভূখন্ডের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া অংশকে বলা হয় নবদ্বীপ। পরবর্তীতে প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং চিঠিপত্রের আদান প্রদানে জটিলতা দেখা দেয়। ফলে কুষ্টিয়ার নদীয়াকে করা হয় কুষ্টিয়া জেলা। তাই কুষ্টিয়ার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। কুষ্টিয়া প্রথম মহকুমা হয় ১৮৬০ সালে।

১৭২৫ সালে কুষ্টিয়া নাটোর জমিদারীর অধীনে ছিল এবং এর পরিচিতি আসে কান্ডানগর পরগণার রাজশাহী ফৌজদারীর সিভি লপ্রশাসনের অন্তর্ভুক্তিতে। পরে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ১৭৭৬ সালে কুষ্টিয়াকে যশোর জেলার অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু ১৮২৮ সালে এটি পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৬১ সালে নীল বিদ্রোহের কারণে কুষ্টিয়া মহকুমা প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ১৮৭১ সালে কুমারখালী ও খোকসা থানা নিয়ে কুষ্টিয়া মহকুমা নদীয়ার অন্তর্গত হয়। ভারত উপমহাদেশ বিভক্তির পূর্বে কুষ্টিয়া নদীয়া জেলার আওতায় একটি মহকুমা ছিল। ১৯৪৭ সালে কুষ্টিয়া জেলার অভ্যুদয় ঘটে। তখন কুষ্টিয়া জেলা ৩ টি মহকুমা নিয়ে গঠিত ছিল। এগুলো কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা এবং মেহেরপুর। এরপর ১৯৮৪ সালে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর আলাদা জেলা হিসেবে পৃথক হয়ে গেলে কুষ্টিয়া মহকুমার ৭টি থানা নিয়ে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা গঠিত হয়।

প্রাচীন জনপদ হিসাবে কুষ্টিয়া নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, কুষ্টে শব্দ থেকে কুষ্টিয়া শব্দটি এসেছে। কুষ্টিয়া নামকরণের ব্যাপারে বেশ কিছু যুক্তিও আছে। এ জেলার এক শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গ এখনও কুষ্টিয়াকে ‘‘কুষ্টে’’ বলে অভিহিত করে। অনেকের মতে কুষ্টা থেকে কুষ্টিয়া নামের উৎপত্তি। এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ‘‘কুষ্টা’’ জন্মায় বলে এ নামের সৃষ্টি হতে পারে।

হ্যামিলটনের গেজেটিয়ারে উল্লেখ আছে যে স্থানীয় জনগণ একে কুষ্টি বলে ডাকত বলে এর নাম হয়েছে কুষ্টিয়া। অনেকের মতে ফরাসি শব্দ ‘‘কুশতহ’’ যার অর্থ ছাই দ্বীপ থেকে কুষ্টিয়ার নামকরণ হয়েছে। সম্রাট শাহজাহানের সময় কুষ্টি বন্দরকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া শহরের উৎপত্তি ঘটেছে। সৈয়দ মুর্তাজা আলীর মতে, কুষ্টিয়া শব্দটি ফার্সি কুশতহ বা কুস্তা থেকে এসেছে। অনেকের মতে, কুস্তি খেলাকে কেন্দ্র করে কুস্তি বা কুষ্টি এবং সব শেষে কুষ্টিয়া নামের উৎপত্তি হয়েছে।

ড. মুফতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেছেন, কাষ্টিয়া শব্দ থেকে এসেছে কুষ্টিয়া। কাষ্টিয়া শব্দটি চুরুনি ভাষা। কাষ্টিয়া অর্থ ওলি, আউলিয়াদের ঘুমানোর জায়গা। এ জেলায় ওলি আউলিয়া, পীর বুজুর্গ বসবাস করার কারণে কাষ্টিয়া থেকে কুষ্টিয়া জেলার নামকরণ করা হয়েছে।

সম্রাট শাহজাহানের আমলে এ স্থানটি গড়ে উঠেছিল নৌবন্দর হিসাবে। ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে কুষ্টিয়ার কুমারখালী নদীবন্দর হিসাবে খ্যাত ছিল। এ জন্য প্রাচীন সভ্যতার অনেক নিদর্শন রয়েছে কুমারখালীতে। এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ বস্ত্রকল কুষ্টিয়া মোহিনীমিল, টেক্সটাইল মিলসহ বেশ কিছু কল-কারখানাও গড়ে ওঠে এখানে।

জেলার রেল পথ ও সড়ক যোগাযোগের একটি প্রাণকেন্দ্র। বাংলাদেশের সর্বপ্রথম স্থাপিত পোড়াদহ রেলওয়ে জংশন রেল যোগাযোগেরক্ষেত্রে করেছে অনেক উন্নত। এ রেলওয়ে জংশনের উপর দিয়ে ঢাকা কলিকাতা এক্সপ্রেস ট্রেন সরাসরি চলাচলের মাধ্যমে রেল যোগাযোগেরক্ষেত্রে মাইল ফলক। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে উপজেলার পোড়াদহে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাপড় হাট। যা বৃটিশ আমল থেকেই বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ধান চাউলের মোকামের কারণে এ উপজেলার রফতানিকৃত উন্নতমানের চাউলের সুনাম দেশ বিদেশে।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.