বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

লালন শাহ সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পর্যটকদের দর্শনীয় স্থান
লালন শাহ সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পর্যটকদের দর্শনীয় স্থান

পদ্মার কোলে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ছেয়ে থাকা দক্ষিণ জনপদের দ্বারপ্রান্ত ভেড়ামারা ও পাকশী বেড়ানোর এক অপরূপ নিসর্গে পরিণত হয়েছে। এখানে এলে রূপসী পদ্মার ঢেউয়ের কলধ্বনি, চারদিকে সবুজের বেষ্টনী ও উত্তাল হাওয়ার পরশে যেমন হৃদয় ভরিয়ে দেয়। তেমনি এ এলাকায় রয়েছে ইতিহাস ও প্রাচীন কীর্তিসহ বিংশ শতাব্দীর প্রথম ও দেশের বৃহত্তম রেল সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লালন শাহ সেতু।

সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্মৃতিচিহ্নে সমৃদ্ধ ভেড়ামারা পর্যটনের মনোরম স্পটে সমৃদ্ধ হয়েছে। দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরো একটি অন্যতম স্থান। প্রতিদিন শত-সহস্র দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখর হয়ে থাকে ভেড়ামারা-পাকশীর উভয় পাড়। সকাল-বিকাল মনে হয় যেন এক মিলনমেলা। স্বচোখে না দেখলে বুঝা যাবে না।

ভেড়ামারার অন্যতম কীর্তি হলো হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দক্ষিণ পাশে লালন শাহ সেতু। যমুনা সেতুর অনুরূপ লালন শাহ সেতু বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়ক সেতু। প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর ১ হাজার ৭৮৬ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৭.৫ মিটার দুই লেন বিশিষ্ট এ সেতুটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সরাসরি সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করেছে এবং সেতুর উভয় পাড়ে দু'টি টোল প্লাজা যেন আরো শ্রীবৃদ্ধি করেছে। এই সেতুর পূর্ব প্রান্তে ১০ কিলোমিটার ও পশ্চিম প্রান্তে ৬ কিলোমিটার রাস্তাটি সৌন্দর্য কেড়েছে। লালন শাহ্ সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং পরিবহন ব্যবস্থার প্রসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ প্রবীণদের কাছে ‘সাড়া পুল'। আজ যাদের বয়স ৮০/৯০ বছর তাদের কাছে সাড়া পুল ছিল এক স্বপ্ন। যমুনায় সেতু যেমন এক স্বপ্নের বাস্তবায়ন তেমনি ভেড়ামারায় লালন শাহ সেতু স্বপ্নের বাস্তবায়ন। প্রবীণরা জানান, ১৮৯০ সালে শিলিগুড়ি মিটারগেজ রেলপথ স্থাপিত হলে প্রমত্তা পদ্মার এক তীরে সাড়া ঘাট ও অন্য তীরে দামুকদিয়া ঘাটের মধ্যে চলাচল শুরু হয় রেল, ফেরি ও স্টীমার। ১৯১০ সালে পদ্মার ওপর সেতু নির্মাণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে পদ্মার গতিকে নিয়ন্ত্রণ করা ছিল অত্যন্ত দুরূহ কাজ। এই দুরূহ কাজ করতে গিয়ে বিশ্বে প্রথম রিভার ট্রেনিং ও গাইড বাঁধ নির্মাণ করা হয় পদ্মার উভয় পাড়ে। প্রায় ৮ কিলোমিটার উজান থেকে গাইড ব্যাংক বেঁধে এনে ১৯১২ সালে শুরু হয় রেল সেতুর কাজ। এভাবে পদ্মার গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে রেল সেতুর কাজ শুরু হয়।

এরপর নরম পলিমাটিতে স্প্যান নির্মাণ ছিল আরেকটি দুরূহ কাজ। রিভার বেড বা নদী শয্যার নিচে ১৯০ থেকে ১৬০ ফুট গভীরতায় কূপ খনন করে স্থাপিত হয় স্প্যান। এভাবে প্রতিটি ৫২ ফুট উচ্চতার ১৫টি স্প্যান ও দু'পাশে শক্ত কাঠামোর ল্যান্ড স্প্যানের ওপর ৫ হাজার ৮৯৪ ফুট দীর্ঘ রেল সেতু নির্মাণ করা হয়, যা আজ এক অমর কীর্তি হিসেবে স্থান পেয়েছে। তৎকালীন প্রকৌশলী জগতের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব রবার্ট উইলিয়াম গেলস ও ফ্রান্সিস প্রিংগের নকশায় ব্রেইন্স ওয়ালটি এন্ড ক্রিম নামের প্রতিষ্ঠান এই রেল সেতু নির্মাণ করে। ১৯১৫ সালের ১ জানুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি মালবাহী বগি নিয়ে একটি ইঞ্জিন সেতু অতিক্রম করে। জানা গেছে, সোনা মিয়া নামে এক চালক প্রথম ইঞ্জিন নিয়ে পাড়ি দেন সেতু। এরপর ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ তৎকালীন ভাইস লর্ড হার্ডিঞ্জ আনুষ্ঠানিকভাবে সে সময়ের বৃহত্তম রেল সেতুটির উদ্বোধন করেন। সেই থেকে প্রথম ডবল লাইনের এই রেল ব্রিজের নাম হয় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জনের স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে এই সেতু।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.