বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

কুমারখালী মুক্ত দিবস ৯ই ডিসেম্বর
কুমারখালী মুক্ত দিবস ৯ই ডিসেম্বর

৯ই ডিসেম্বর কুমারখালী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে (৯ই ডিসেম্বর) বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষের প্রতিরোধ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে কুমারখালী থানা পাক হানাদার মুক্ত হয়।

৭ই ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করে কুন্ডুপাড়া রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমন করেন। সে সময় রাজাকার ফিরোজ-খুরশিদ, গোলাম রসুল, সাদী, গালিবদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ। এ যুদ্ধের খবর পেয়ে কুষ্টিয়া থেকে পাক-সেনারা কুমারখালী শহরে প্রবেশ করে এবং বিক্ষিপ্তভাবে ব্রাশ ফায়ারের মাধ্যমে আতংক সৃষ্টি করে। কিন্তু সে সময় হাতে গোনা কয়েকজন যুক্তিযোদ্ধা ও অপর্যাপ্ত অস্ত্র থাকায় পাক বাহিনীর মুখোমুখি না হয়ে কৌশলে পিছু হটে। এ সময় পাকবাহিনী ও রাজাকাররা কুমারখালী শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হত্যাসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট ও শেল নিক্ষেপ চালায়।

৭ই ডিসেম্বরের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা তোসাদ্দেক হোসেন ননী মিঞা, কুন্ডুপাড়ার ওমর আলী শহীদ হন। এ ছাড়াও শহীদ হন সামসুজ্জামান স্বপন, সাইফুদ্দিন বিশ্বাস, আব্দুল আজিজ মোল্লা, শাহাদত আলী, কাঞ্চন কুন্ডু, আবু বক্কর সিদ্দিক, আহমেদ আলী বিশ্বাস, আব্দুল গনি খাঁ, সামসুদ্দিন খাঁ, আব্দুল মজিদ ও আশুতোষ বিশ্বাস মঙ্গল। ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সংগঠিত হয়ে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রাজাকার ও পাকবাহিনীর ক্যাম্পে হামলা করতে পৃথক পৃথক এলাকায় অবস্থান নিয়ে নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা বারিক খান, রনজু, আঃ রাজ্জাক, হাবীব, মঞ্জুর আর রহমান, রেজাউল করিম হান্নান প্রমূখ। এ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গনি, মনজু সাত্তার, সামছুল আলম পিন্টু মাষ্টার, মাহাতাব, কামাল, আতিয়ার রহমান স্বপন (সর্ব কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা), মকবুল হোসেন, ধীরেন, টগর, জহুর, মিজান বিশ্বাসসহ আরো অনেকেই অংশ নেয়।

৯ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা শহরের চারপাশ থেকে পাকবাহিনীর ক্যাম্প (বর্তমান কুমারখালী উপজেলা পরিষদ) আক্রমন করে। দীর্ঘসময় যুদ্ধের পর পাকবাহিনী পিছু হটতে শুরু করে। এক পর্যায়ে পাকবাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে ট্রেনযোগে কুষ্টিয়ার দিকে রওনা দিলেও পাকবাহিনীর বহনকারী ট্রেনটিতে হামলার পরিকল্পনা করে মুক্তিযোদ্ধারা। পাকবাহিনীর সদস্যদের বহনকারী ট্রেনটি চাড়াইকোল হাতিসাঁকো এলাকায় পৌঁছানো মাত্রই মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেনটি লাইনচ্যুত করে দেয়। ফলে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে এবং পাকবাহিনীর সদস্যরা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পায়ে হেঁটে কুষ্টিয়া অভিমুখে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পকবাহিনীর সদস্যরা আরেকটি ট্রেনযোগে কুমারখালীতে আসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এদিনে রাজাকার কমান্ডার খুশি মারা যায়। আর অন্যান্য রাজাকারেরাও ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং কুমারখালী থানা হানাদার মুক্ত হয়। এইদিন মুক্তিযোদ্ধারা রাইফেল, এসএলআর ফুটিয়ে উল্লাস করতে করতে কুমারখালী থানায় গিয়ে যায়। এ সময় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম হান্নানসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা। আর কুমারখালী হানাদার মুক্ত হওয়ার খবর পেয়ে সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল শুরু করেন।

বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে সর্বস্তরের মানুষের স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহণে ৯ই ডিসেম্বর কুমারখালী মুক্ত দিবস পালন করা হয়ে থাকে।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন