জলধর সেন (১৩ মার্চ ১৮৬১ - ১৫ মার্চ ১৯৩৯) সাহিত্যিক, সাংবাদিক, পর্যটক। ১৮৬০ সালের ১৩ মার্চ কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি গ্রামে তাঁর জন্ম। বঙ্গবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাপ্তাহিক গ্রামবার্তা প্রকাশিকার সম্পাদক কাঙাল হরিনাথ ছিলেন তাঁর শিক্ষাগুরু।
১৮৭৮ সালে কুমারখালি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে জলধর কলকাতার জেনারেল এসেমবিজ ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন, কিন্তু এফএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। পেশাগত জীবনে তিনি প্রথমে ফরিদপুরের রাজবাড়িস্থিত গোয়ালন্দ স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন (১৮৮১)। পরে তিনি দেরাদুন ও মহিষাদল রাজস্কুলে (১৮৯১) শিক্ষকতা করেন। ১৮৯৯ সালে কলকাতা গিয়ে তিনি বঙ্গবাসী পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯০৭-০৯ পর্যন্ত হিতবাদী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯০৯-১১ পর্যন্ত তিনি সন্তোষের রাজার দেওয়ান হিসেবে কাজ করেন। সেখান থেকে পুনরায় কলকাতায় ফিরে জলধর সুলভ সমাচার (১৯১১) ও ভারতবর্ষ (১৩২০-১৩৪৬) পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি দুই পর্বে (১৯১২-১৩, ১৯৩৬-৩৮) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহসভাপতি ছিলেন।
জলধরের প্রকৃত প্রতিষ্ঠা একজন লেখক হিসেবে। তিনি পাঠ্যপুস্তক, জীবনী, শিশুসাহিত্য, অনুবাদ, ভ্রমণকাহিনী, উপন্যাস ও ছোটগল্পমিলিয়ে প্রায় ৪২টি গ্রন্থ রচনা করেন। সেগুলির মধ্যে জীবনীগ্রন্থ কাঙাল হরিনাথ (দুই খন্ড, ১৯১৩, ১৯১৪); ছোটগল্প নৈবেদ্য (১৯০০), কাঙ্গালের ঠাকুর (১৯২০), বড় মানুষ (১৯২৯); উপন্যাস দুঃখিনী (১৯০৯), অভাগী (৩ খন্ড, ১৯১৫-৩২), উৎস (১৯৩২) এবং ভ্রমণবৃত্তান্ত প্রবাসচিত্র (১৮৯৯) ও হিমালয় (১৯০০) প্রধান। এ ছাড়াও তিনি হরিনাথ গ্রন্থাবলী ও প্রমথনাথের কাব্য গ্রন্থাবলি সম্পাদনা করেন।
গার্হস্থ্য জীবনের সুখ-দুঃখ ও প্রেম-বিরহের এক অনুপম চিত্র জলধর সেনের কথাসাহিত্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ১৯৩৪ সালে নিখিলবঙ্গ জলধর সম্বর্ধনায় দেশবাসীর পক্ষ থেকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁকে মানপত্র প্রদান করেন। জলধর সেন তৎকালীন সাহিত্যিক-সমাজে বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯২২ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘রায়বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৩৯ সালের ১৫ মার্চ কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।