বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু
বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু

ক্ষুদিরাম বসু (ইংরেজি: Khudiram Bose) (জন্মঃ- ৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৯ - মৃত্যুঃ- ১১ আগস্ট ১৯০৮) ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরুর দিকের সর্বকনিষ্ঠ এক বিপ্লবী। ফাঁসি মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ১৮ বছর, ৭ মাস ১১ দিন।

বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অন্দোলনের এক মৃত্যুঞ্জয়ী নাম। আজ অবধি লোকমুখে শোনা যাই তাঁর গ্রেফতার হবার স্থানটিও ছিল আমাদের বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার যদুবয়রা গ্রামে। যদিও ইতিহাসের পাতায় অন্য ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। যদুবয়রা গ্রামের প্রবীণেরা আজও এই কথা উল্লেখ করে।

ছবির এই বাড়িটি বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর মামা পূর্ণ লাহোরি বাড়ি। এই স্থানে ক্ষুদিরাম ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। কথিত আছে তাঁর মামা পুলিশের দারোগা পূর্ণ লাহোরি বিশ্বাস ঘাতকতা করে ক্ষুদিরামকে ধরিয়ে দেন। এই বাড়িটি কুমারখালির যদুবয়রা গ্রামে অবস্থিত, এটা বর্তমানে ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসাবে ব্যাবহারিত হচ্ছে। বর্তমানে এটা অযত্নে অবহেলায় ধ্বংসের শেষপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। দেয়ালের প্লাস্টার সহ অনেক দরজা-জানালাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মল-মুত্র করে বাড়িটিতে এমন নোংরা অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে যা পরিদর্শনেরও অযোগ্য।

বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভারতের মানুষের জন্মাধিকার “স্বাধীনতা” ছিনিয়ে আনার যুদ্ধে ছিলেন প্রথম দিকের সর্বকনিষ্ঠ যোদ্ধা। তিনি বাংলার পালনকর্তা ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জনের (বড়লাট) বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে স্বদেশী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বঙ্গভঙ্গের চরম বিরোধী ছিলেন। বিলাতি দ্রব্য বর্জন, বিলাতি লবণের নৌকা ডোবানো প্রভৃতি কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মেদিনীপুরের এক প্রদর্শনীতে বিপ্লবী পত্রিকা “সোনার বাংলা” বিলি করার সময়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে পুলিশকে মেরে পালিয়ে যান। এই অভিযোগে পরে গ্রেফতার হলেও বয়স কম বলে সরকার মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়। বিপ্লবীদের গোপন সংস্থায় অর্থের প্রয়োজন পড়লে মেলব্যাগ লুট করেন।

বিপ্লবী দল–কর্তৃক কলকাতার তদানীন্তন চীফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব পরে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকীর উপর। নিরাপত্তার কারণে সরকার কিংসফোর্ড মজফফরপুর বদলি করলে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী মজফফরপুরে আসেন। ১৯০৮ সনে ৩০শে এপ্রিল রাত ৮টার সময় কিংসফোর্ড গাড়ি ভেবে ক্ষুদিরাম মজফফরপুর ইউরোপীয় ক্লাব থেকে ফেরা একটি গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করেন ফলে নিহত হন ওয়াটসন এবং Bamfylde নামে দুই ব্রিটিশ নাগরিক। ব্রিটিশ নাগরকি নিহত বিষয়টাও বিভিন্ন জাগায়, বিভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এই অপরাধে ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ভোর পাঁচটায় ব্রিটিশ সরকার ১৮ বছর ৭ মাস ১১ দিনের তরতাজা যুবককে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড় করাল। কারাফটকের বাইরে তখন হাজারো জনতার কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে ‘বন্দেমাতরম’ স্লোগান। ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে কারা কর্তৃপক্ষ যুবকটির কাছে জানতে চাইল, মৃত্যুর আগে তাঁর শেষ ইচ্ছা কী? যুবকটি এক সেকেন্ড অপেক্ষা না করেই নিঃশঙ্কচিত্তে বলে উঠলেন, ‘আমি ভালো বোমা বানাতে পারি, মৃত্যুর আগে সারা ভারতবাসীকে সেটা শিখিয়ে দিয়ে যেতে চাই।’ উপস্থিত কারা কর্তৃপক্ষ সেদিন বিস্মিত হলো যুবকটির মানসিক দৃঢ়তা আর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রতি তীব্র ঘৃণাবোধ উপলব্ধি করে। সেদিনের সেই যুবকই হচ্ছেন অগ্নিযুগের মহান বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু।

আজ ক্ষুদিরাম নেই, কিন্তু সারা ভারতের মানুষের হূদয়ে ক্ষুদিরাম যে স্বাধীনতার অগ্নিমশাল প্রজ্বালন করেছিলেন, শত চেষ্টা করেও ব্রিটিশ সরকার তা নেভাতে পারেনি। এখানেই ক্ষুদিরামের সার্থকতা। তাঁর মৃত্যুর এত বছর পর এসেও যখন হাটে-মাঠে-ঘাটে পথ চলতে প্রায়ই বাউল, সাধক ও কবিয়ালদের কণ্ঠে আচমকা শুনতে পাইঃ-

পীতাম্বর দাশের সেই গানঃ-
'একবার বিদায় দে-মা ঘুরে আসি।
হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে জগৎবাসী।
কলের বোমা তৈরি করে
দাঁড়িয়ে ছিলেম রাস্তার ধারে মাগো,
বড়লাটকে মারতে গিয়ে
মারলাম আরেক ইংল্যান্ডবাসী।
শনিবার বেলা দশটার পরে
জজকোর্টেতে লোক না ধরে মাগো
হল অভিরামের দ্বীপ চালান মা ক্ষুদিরামের ফাঁসি
দশ মাস দশদিন পরে
জন্ম নেব মাসির ঘরে মাগো
তখন যদি না চিনতে পারিস দেখবি গলায় ফাঁসি'

তখন মনে হয়, দেশের জন্য ক্ষুদিরামের এ আত্মদান বৃথা যায়নি। তাঁর মতো ক্ষুদিরামদের কারণেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ একদিন ভারতবর্ষ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। তাঁর মতো লাখো ক্ষুদিরামের জীবনের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা পেয়েছি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। সে জন্য ক্ষুদিরামের মৃত্যু নেই। দেশের প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষের হূদয়ে ক্ষুদিরাম তাই বেঁচে থাকবেন অনাদিকাল।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.