বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

ডা: এম, এ কাশেম কুষ্টিয়ার একটি উজ্জল পরিবার
ডা: এম, এ কাশেম কুষ্টিয়ার একটি উজ্জল পরিবার

কুষ্টিয়া তথা সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে একটি উজ্জল পরিবার ডা: এম,এ কাশেম একজন চিকিৎসক হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন। ডা: বীরেন দত্ত ও ডা: কাজী আব্দুল লতিফ সাহেবের যখন চিকিৎসক হিসেবে যথেষ্ট সুনাম ঠিক সেই সময় ডা: এম,এ কাশেম ও ডা: সিরাজুল ইসলাম কুষ্টিয়াতে চিকিৎসক হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তিনি কাশেম ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন।

তার চার পুত্র : অধ্যাপক আবুল হুসসাম, ড: আবুল বারাকাত, ডা: এ,কে,এম,এ মুনীর, নুরুল আজম। ড: অধ্যাপক আবুল বারাকাত অর্থনীতিবিদ হিসেবে যথেষ্ট সুনান অর্জন করেছেন এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারন সম্পাদক। ডা: এ,কে,এম মুনির কুষ্টিয়া বাসীকে আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে সনো হাসপাতাল তৈরি করেছেন। ৮ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক সনো হাসপাতাল সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ডা: এম,এ কাশেমের সুযোগ্য সন্তানেরা ডা: এ,কে,এম,এ মুনির ও অধ্যাপক আবুল হুসসাম বিশ্বের দরবারে ড: ইউনুসের পরেই কুষ্টিয়া তথা বাংলাদেশের নাম উজ্জল করেছেন।

আর্সেনিক রোগ সম্পর্কে চিন্তা করে তার উপর কাজ করেছেন কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তানেরা। মানুষকে আর্সেনিকের হাত থেকে রক্ষার জন্য সনো ফিল্টারের আবিষ্কারক ডা: এম,এ কাশেমের সন্তান অধ্যাপক আবুল হুসসাম ও ডা: এ,কে,এম,এ মুনির। সনো ফিল্টারকে আর্সেনিক রোধে একটি "যুগান্তকারী আবিষ্কার" সারা বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে।

অধ্যাপক আবুল হুসসাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির রসায়ন ও জৈব রসায়ন বিভাগে অধ্যাপনা করছেন। তার শতাধিক গবেষনা পত্র রয়েছে।

আর্সেনিক দুষনের মাত্রা নিরুপন, ভু-গর্ভস্থ পানির আর্সেনিকের রসায়ন এবং আর্সেনিক ফিল্টার উন্নয়ন বিষয়ে তার সাম্প্রতিক গবেষনা পত্রগুলো প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক জার্নালে। এ নিয়ে তার উদ্ভাবনী কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সর্বাধুনিক পদ্ধতিটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও মিশরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং গবেষনা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে আগ্রহী কয়েক জনের সহোযোগীতায় অধ্যাপক আবুল হুসসাম কুষ্টিয়ায় একটি পরিবেশ গবেষনা কেন্দ্র স্থাপন করেছেন এবং এর মাধ্যমে তিনি জনগনকে পরিবেশের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন।

প্রবাসে থাকলেও বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষ তাকে ভীষন টানে। সে জন্যই বারবার ফিরে আসেন বাংলাদেশে। শত ব্যস্ততার মাঝেও ফিরে আসেন কুষ্টিয়ায়, খুজে ফেরেন তার দুরন্ত কৈশোর। বাংলাদেশে ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য কিছু করার তাড়না থেকেই সনো ফিল্টারের কাজ শুরু করেছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আর্সেনিক সমস্যাটি আমাকে বারবার নাড়া দিয়েছে। সে জন্যই আমি এখানে কাজ করছি নিজের যায়গা থেকে কিছু করার জন্য। আর এটি একজন বিজ্ঞানী হিসেবে কিংবা একজন বাঙ্গালী হিসেবে আমার পবিত্র দায়িত্ব এবং কর্তব্য ছিলো।

১৯৯৭ সাল থেকে ড. হুসসাম তার ভাই ডা: মুনিরকে নিয়ে গবেষনা শুরু করেন। সনো ফিল্টারের সহ উদ্ভাবক ডা: মুনির থাকেন কুষ্টিয়ায়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করার পর করার পর ১৯৮৬ সালে কুষ্টিয়াতে তার চিকিৎসক জীবন শুরু করেন।

বাংলাদেশে আর্সেনিক দুষনের ভয়াবহতা নিরুপনের জন্য কুষ্টিয়ায় সনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার এনভায়রনমেন্ট ইনিশিয়েটিভ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালিয়ে আসছেন। ডা: মুনীর আর্সেনিক দুষনে রোগাক্রান্তদের জন্য ১০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতালও প্রতিষ্ঠা করেছেন।

ড. হুসসাম সনো ফিল্টারের মৌলিক গবেষনা ও উন্নয়ন পরিচালনা করেন জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটিতে। কিন্তু গবেষনার তথ্য উপাত্ত এর পরীক্ষন পরিচালিত হয় কুষ্টিয়ায়।

১৯৯৯ সালে তার কুষ্টিয়ায় মানব সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র ( মাসুক) নামে একটি এন,জি,ও প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি তখন থেকে বিভিন্ন দাতা গোষ্ঠীর সহায়তায় ২৪ হাজার সনো ফিল্টার বিনা মুল্যে বিতরন করেছে। এছাড়াও এ পর্যন্ত প্রায় ৩২ হাজার সনো ফিল্টার পৌছে গেছে দেশের ১৬ টি জেলার আর্সেনিক কবলিত পরিবারে।

বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল অনেক দেশের খাবার পানিতে ব্যাপকভাবে আর্সেনিক দুষন দেখা দিয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে ৫০ কোটি মানুষ আর্সেনিকে আক্রান্ত। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই এ রোগে আক্রান্ত। গ্রামাঞ্চলে দীর্ঘদিন থেকে এ রোগের ব্যাপারে বিভিন্ন কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। আর্সেনিক নামের এই নীরব ঘাতক ব্যধি দেশের মোট জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশকে দাড় করিয়েছে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুকির মুখোমুখি। আর এতোদিন আর্সেনিক দুরিকরনের যেসব প্রযুক্তি পাওয়া যাচ্ছিল সেগুলোর কার্যকারীতা ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ, মুল্যও ছিলো আকাশচুম্বী। এসব বিষয় মাথায় রেখে প্রযুক্তি বিশ্বের নেতৃত্বস্থানীয় গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের এন,এ,ই প্রথমবারের মত বিশ্বের সব প্রযুক্তিবিদদের দিকে আর্সেনিক দুরীকরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেই। শর্ত ছিলো উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটির কার্যকারীতা হতে হবে উচ্চমানের, এটি সামাজিক ভাবে গ্রহনযোগ্য হতে হবে, এতে স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে, এর দ্বারা পরিষোধিত পানির গুনাগুন অক্ষুন্ন থাকতে হবে এবং মুল্য হতে হবে দরিদ্র মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে।

২০০৫ সালের জানুয়ারিতে এই ঘোষনা দেওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রযুক্তিবিদরা উদ্ভাবিত প্রকল্প পাঠাতে থাকেন। এ থেকে অনেক যাচাই বাছাই করে ১৫টি প্রযুক্তি প্রাথমিক ভাবে গ্রহন করা হয়। এর মধ্যে ছিলো বাংলাদেশের সনো ফিল্টার। ২০০৬ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও রাজ্যে "ইউনাইটেড স্টেটস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সিস" এর পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ১৫টি প্রযুক্তির বিচার করা হয়। এ থেকে ১০ সদস্যের এক বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সনো ফিল্টারকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়। সনো ফিল্টার জিতে নেয় এক মিলিয়ন ডলার বা সাত কোটি টাকার গ্রেইঞ্জার চ্যালেঞ্জ পুরস্কার।

গত ২০ ই ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনের এন,এ,ই কমপ্লেক্সে জাকজমকপুর্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সনো ফিল্টারের উদ্ভাবকদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এ পুরষ্কারের সাত কোটি টাকার পুরোটায় ডা. হুসসাম ও ডাঃ মুনীর দান করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের আর্সেনিক কবলিত দরিদ্র মানুষকে আর্সেনিকের কবল থেকে রক্ষা করতে বিনামুল্যে সনো ফিল্টার বিতরনে এর ৭০ ভাগ টাকা দেওয়া হবে। ২৫ ভাগ ব্যয় হবে আর্সেনিক গবেষনা ও উন্নয়ন কাজে। আর অবশিষ্ট ৫ ভাগ টাকায় জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটিতে “আবুল ফাউন্ডেশন” নামে একটি তহবিল গঠন করা হবে, যা থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা গবেষনা কাজের জন্য আর্থিক সহায়তা পাবে। আমরা সারা দেশবাসী এই বিজ্ঞানী ভ্রাতৃদ্বয়ের সারা বিশ্বের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নোবেল গ্রেইজার চ্যালেঞ্জ পুরষ্কার প্রাপ্তিতে গৌরবান্বিত।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.