ইবরাহীম খাঁ (ইংরেজিঃ- Ibrahim Khan - ফেব্রুয়ারি ১৮৯৪ - ২৯ মার্চ ১৯৭৮) উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। তিনি টাঙ্গাইল জেলার তৎকালীন ভুঞাপুর থানার অন্তর্গত বিরামদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম শাবাজ খাঁ ও মায়ের নাম রতন খানম। ইবরাহীম খাঁ ১৯৭৮ সালের ২৯ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন এবং একুশে পদক পান।
ইব্রাহীম খাঁ ১৯০৬ সালে জামালপুরের সরিষাবাড়ির পিংনা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ১৯১২ সাল পর্যন্ত এখানে অধ্যয়ন করেন। সাহিত্যিক প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ প্রথম মুসলমান ছাত্র যিনি পিংনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রাস (বর্তমান এস.এস.সি) পাশ করেন। ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ.পাস করে তিনি শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন এবং ১৯২৪ সালে আইন পাস করে ময়মন্সিংহে ওকালতি শুরু করেন। তিনি ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন।
ইবরাহীম খাঁ স্মৃতিকথা, শিক্ষা-সাহিত্য-ধর্ম-বিষয়ক প্রবন্ধ, নাটক, ভ্রমণ কাহিনী, রসরচনা, গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস ও জীবনচরিত, শিশু সাহিত্য, পাঠ্য বই ও অনুবাদ মিলিয়ে শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। অনেক দায়িত্বপূর্ণ পদে কর্মব্যস্ত থেকেও অনলসভাবে তিনি বিশাল সাহিত্য ভান্ডার রচনা করেছেন। সাহিত্যের সকল শাখায়ই তিনি স্বচ্ছন্দে সফলতার সঙ্গে পদচারণা করেছেন। মুসলমান সমাজের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের পুনর্জাগরণের প্রয়াস তার লেখনীতে প্রকাশ পেয়েছে।
ব্রিটিশ ভারতে মুসলমানদের করুণ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে মহাপ্রাণ মনীষী ইবরাহীম খাঁ কর্মজীবনের শুরুতেই অসহযোগ আন্দোলন এবং খেলাফত আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। এই আন্দোলন তার গভীরভাবে জনজীবনের সাথে প্রত্যক্ষ পরিচয়ের ভিত তৈরি করে দেয়। সেই সময় মুসলিম মনে আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত করার জন্য তিনি ইতিহাস, সমকালীন জীবন নিয়ে, ইসলামের গৌরবময় অধ্যায় নিয়ে লিখেছেন- এটাকেই তিনি তপস্যা বলেছেন। ব্রিটিশ ভারতে নিগৃহীত পণ্ডিতদেরকে তিনি তার কলেজে সুযোগ দিতেন- এমনকি অন্যত্র বহিষ্কৃত ছাত্ররাও তার আশ্রয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে। তিনি তার নিজের বিশ্বাসে দৃঢ় ছিলেন, কিন্তু অন্যের মতবাদকে বিন্দুমাত্র অশ্রদ্ধা করতেন না। উদার মানবতাবাদী ইবরাহীম খাঁর সাহিত্যচর্চার প্রধান উৎসই শিক্ষা এবং সংস্কার- তিনি মূলত সংস্কারকই। অসংখ্য শৈবালদামে আচ্ছন্ন স্রোতধারার সংস্কারকেও কিছুটা বিপ্লবী ভূমিকা গ্রহণ করতে হয়- তিনি তা করেছেন।
প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ যেমনি সাহিত্যে ও শিক্ষায় অবদান রেখেছেন, তেমনি বাংলাভাষা আন্দোলনেও গুরুতপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৪৬ সালে প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ বঙ্গীয় আইন পরিষদে বাংলাভাষায় বক্তৃতা করেন, যা ছিল তৎকালীন ভারতে কোন নেটিভের সর্বপ্রথম মাতৃভাষায় ব্রিটিশদের সঙ্গে কথা বলা। বাংলাভাষা আন্দোলনের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম। তিনি ১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর ‘তমদ্দুন মজলিস’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের সদস্য ছিলেন প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ। বাংলাভাষা বা ভাষা আন্দোলনের প্রতি প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর যে আকর্ষণ তা ছিল স্বদেশ ও স্বজাতির প্রতি ভালোবাসার অংশবিশেষ। স্বদেশ ও স্বজাতির প্রতি তার গভীর ভালোবাসার মধ্যে ছিল এক ধরনের কৃতজ্ঞতাবোধ। এই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই তিনি বাংলাভাষা আন্দোলনে শরীক হন।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ
- কামাল পাশা
- আনোয়ার পাশা
- কাফেলা
- বৌ বেগম
- আল বোখারা
- বাতায়ন
- ইস্তাম্বুল যাত্রীর পত্র
- ইসলামের মর্মকথা
ছোটদের জন্য গ্রন্থ
- জঙ্গী বেগম
- নিজাম ডাকাত
- বাবর, সালাহউদ্দিন
- নজরুল ইসলাম
- আমাদের মহানবী
- ওমর ফারুক
- কবিতায় ক-খ
- শিয়াল পণ্ডিত
- ব্যাঘ্র মামা
- নীল হরিণ
- দাদুর জাম্বিল
- খবরাখবর
- গুলবাগিচা
- নবজীবনের ঝাণ্ডা বহিল যারা
- তুর্কী উপকথা
- ছেলেদের শাহনামা
- বিচিত্রা
উপন্যাস ও ছোটগল্প
- বৌ-বেগম
- লক্ষ্মীছাড়া
- সোনার শিকল
- মনীষী মজলিস
- গল্প দাদুর আসর
- ওস্তাদ
- মানুষ
- গল্পে ফজলুল হক
- পাখির বিদায়
ধর্মবিষয়ক
- মহানবী মুহম্মদ
- ইসলাম সোপান
- ইসলামের মর্মকথা
- বাংলায় ছোটদের মিলাদুন্নবী
- মুসলিম জাহানে সংস্কার আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা
- হীরক হার
শিক্ষা, সমাজ ও সাহিত্য
- আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা
- ভাষণগুচ্ছ
- নজরুলিকী
অনুবাদ
- সূর্যি মামার রথে
- আরব জাতি
- নূরমহল
- চেঙ্গীজ খাঁ
- মহীয়ান সুলায়মান
- আইনস্টাইন
- ইতিহাসের আগে
- বরফের দেশে
- জর্জ ওয়াশিংটন
- সিন্দবাদ জাহাজী
- বাবরের স্মৃতিকথা
- আপন চলার বাল্যকাল
- খালেদার সমরস্মৃতি
- তুর্কী উপকথা
- ইতিকাহিনী
- ছোটদের জাতিসংঘ
- সবাই মিলে গড়লাম যে বাগান
ইংরেজি রচনা
- Anecdotes from Islam
- Gleanings in golden fields
- To my students
- A peep into our Rebel Poet.