ত্রৈলোক্যনাথ আমার জন্ম বৎসর ১৮৭৫। গ্রামের নাম বহরকালুখালি। কালুখালি স্টেশন হইতে এ গ্রামের দূরত্ব ছিল প্রায় দুই মাইল। পোড়াদহ হইতে গোয়ালন্দ রেলপথে জগতি, কুষ্টিয়া, কোর্ট, কুষ্টিয়া (পরে কুষ্টিয়ার পূর্বদিকে গড়াই নদীর ব্রিজ পাড়ে চরাইখোল নামক একটি স্টেশন হয়)।
তাহার পর কুমারখালি, খোকসা, পাংশা, তাহার পরেই কালুখালি। পরবর্তী স্টেশন বেলগাছি, তাহার পরেই রাজবাড়ি। পরে রাজবাড়ির কিছু পশ্চিমে সূর্যনগর নামক একটি স্টেশন হয় রাজা সূর্যকুমারের স্মৃতিতে। রাজবাড়ির পরবর্তী স্টেশন পাঁচুরিয়া জংশন, ইহার পরেই গোয়ালন্দ। ইংরেজি উচ্চারণে গোয়ালান্ডো। পাঁচুরিয়া হইতে শাখা লাইন ফরিদপুরে গিয়াছে। পাংশা ও বেলগাছি ও তন্মোধ্যবর্তী কালুখালি এই তিনটি স্টেশন ১৯১০ পর্যন্ত একটি সরলরেখায় অবস্থিত ছিল। পরে পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে কালুখালি স্টেশনকে সরাইয়া রতনদিয়ার কাছে আনা হয়। অল্পদিনের জন্য অস্থায়ী একটি লাইন করা হয় হারোয়ার উপর দিয়া। কলিকাতা হইতে চাঁগা মেলে কালুখালি সাড়ে চার ঘন্টার পথ। কুষ্টিয়ার পরেই কালুখালি, মেলট্রেনে মধ্যবর্তী কোনো স্টেশনেই থামিত না। কালুখালি জংশন হইবার পর মেল ট্রেন কুষ্টিয়া ছাড়িয়া সোজা রাজবাড়ি গিয়া থামিত।
প্রমত্ত পদ্মার ভাঙ্গনের কারণে ১৮৯০ সালে রেল পুনঃস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৮৯০ সালের ১ এপ্রিল রেল পাংশা, বর্তমান কালুখালি, বেলগাছি, সূর্যনগর, রাজবাড়ি ভায়া লোকোসেডের পশ্চিম দিয়ে উত্তর মুখী দুর্গাপুর, তেনাপচা গোয়ালন্দ ঘাট পুনঃস্থাপিত হয় (ইস্পাতের পথ পৃষ্ঠা-৫১।
১৮৯০ এ দ্বিতীয় পর্যায়ে রেল স্থাপনকালে দলিল দস্তাবেজে গোয়ালন্দ নামকরণ হয়েছে। ১৮৯০ সালে রাজবাড়ি শহরের কেন্দ্রে রেলস্টেশন স্থাপনকালে স্টেশনকে কেন্দ্র করে পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণে এক থেকে দেড় কি.মি. জায়গা রেল কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণ করে। রাজা সূর্যকুমার ও বাণীবহ জমিদার গীরিজাশঙ্কর মজুমদার, বাবু নারায়ণ চক্রবর্তীসহ কয়েক জোতদার ছিলেন এ জমির মালিক। স্বল্প সময়ের মধ্যে রেলওয়ে অফিসার্স কোয়ার্টারসহ স্থাপিত হয় রেলওয়ে খেলার মাঠ, এসআর হল কেন্দ্র, লোকোসেড, শ্রমিক কোয়ার্টার, বিশ্রামাগার, ইত্যাদি। ১৯৪৭ এরপর স্থাপন করা হয় রেলওয়ে কলোনী। অনেকে রেলসূত্রের চাকরিতে স্থায়ী আবাসন গড়ে তোলে। অবশ্য বর্তমান রাজবাড়ি স্টেশনটির আধুনিকীকরণ করা হয় ১৯৬০ এর দশকে। রেলের সূত্র ধরে রাজবাড়ি শহর ভিত্তি লাভ করে। রেল সূত্রে কয়লার ব্যবসায় কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রচুর লাভবান হন। তাদের মধ্যে হাজী গোলজার হোসেন অন্যতম।
১৮৯৫ সালে পাঁচুরিয়া হয়ে রেল গোয়ালন্দ ঘাট (বর্তমান গোয়ালন্দ বাজার সংলগ্ন) পর্যন্ত পুনঃস্থাপিত হয়। এরপর পাঁচুরিয়া থেকে অম্বিকাপুর (আমিরাবাদ) রেল বসে ১৮৯৯ সালে। এ সময় খানখানাপুর, বসন্তপুর রেলস্টেশন স্থাপিত হয়। রাজবাড়ি জেলার বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের বাঁশ, বেত, পাট বহনের গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৩২ সালের ১ জানুয়ারি কালুখালি থেকে ভাটিয়াপাড়া পর্যন্ত রেল স্থাপিত হয়। এ সময় রামদিয়া, বহরপুর, আড়কান্দি, স্টেশন স্থাপিত হয়। কালুখালি রেলের জংশন স্টেশনে পরিণত হয়। পরবর্তীতে গোয়ালন্দ ঘাটের মুখে পলি জমে চর পড়লে ঘাট বর্তমান দৌলতদিয়ায় স্থাপন করা হলে ১৯৭৭ সালে রেলপথ দৌলতদিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়। দৌলতদিয়া পর্যন্ত রেল স্থাপনের ক্ষেত্রে আক্কাস আলী মিয়া বিশেষ ভূমিকা রাখেন। রেলপথ নির্মাণে যে বৃটিশ সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে সে কথা বলাই বাহুল্য।
ইবি (ইস্ট বেঙ্গল) রেলওয়ে কোম্পানি এ রেলপথ নির্মাণ করে। কোম্পানি কন্ট্রাক্টর ও সাব কন্ট্রাক্টর দ্বারা রেলপথ ও অন্যান্য স্থাপনা কাজ সম্পন্ন করে। অত্র অঞ্চলে রেল স্থাপনের ঠিকাদারী কাজ সম্পন্ন করেন পাবনা জেলার সাগরদাড়ি গ্রামের গোবিন্দ দত্ত ও গুরুচরণ দত্ত। রেলের ঠিকাদারীতে তারা অনেক অর্থবিত্তের মালিক হন এবং গ্রাসাদোপম বাড়ি নির্মাণ করে। সাধারণ্যে জমিদার বলে খ্যাতি লাভ করেন।
রেল কোম্পানি রেলপথ নির্মাণে জনসাধারণের নিকট থেকে যে ভূমি অধিগ্রহণ করে তার যুক্তিযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। ঠিকাদারের অধীনস্থ কর্মচারীরা ক্ষতিপূরণের হিসেব কষে দিত। তখনকার দিনে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ হিসেব অবাক বৈকি? আম, জাম, কাঁঠাল, সুপারি, ডাব তো বটেই কলাগাছকেও ক্ষতিপূরণের আওতায় আনা হয়েছিল। এছাড়া জমি আর জমির ফসল তো ছিলিই। একটি কলাগাছের কলা, কলাপাতা, মোচা ইত্যাদি হিসেবের মধ্যে এনে এর ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছিল ৫ থেকে ১০ টাকা। ১ মণ ধানের দাম ছিল তখন তিন থেকে সাড়ে তিন টাকা। সে হিসেবে কলাগাছের দাম ১০ টাকা ---অবাক তো বটেই। আম, জাম, কাঁঠাল, ডাব গাছের দাম ৫০ হতে ১০০ শত টাকা ধার্য ছিল (আমার স্মৃতিকথা, পৃষ্ঠা-১৩৮)।
বৃটিশরা বেনিয়া ছিল ঠিকই কিন্তু ন্যায় বোধ কম ছিল না। অনেকের ক্ষতিপুরণের টাকায় আর্থিক অবস্থার চাকা ঘুরে গেল। এ সময় গড়াই ব্রিজ করতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয় এবং অনেক মানুষ মারা যায়। সাগরকান্দির বাবুরা এই ব্রিজের ঠিকাদারীর আয়ে বিপুল অর্থের মালিক হন এবং তারা জমিদারী ক্রয় করেন। রেলস্থাপনের পর থেকে কত ঘটনাই না ঘটে গেছে রেলকে কেন্দ্র করে। আশা নিরাশার কেচ্ছা কাহিনীসহ শিল্প, সাহিত্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, আন্দোলন, সংগ্রাম, দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা, মামলা মোকদ্দমা, সফলতা ও বিফলতার ইতিহাস বহন করে চলেছে রাজবাড়ির রেললাইন, রেলগাড়ি, রেলকর্মচারী, সাধারণ রেলযাত্রী ও ছাত্র জনতা।
উনিশ শতকের গোড়ার কথা। এক ইংরেজ সাহেব আসলেন রেলের বড় কর্তা হয়ে। থাকেন রেলের বাংলোতে (বর্তমান জাতীয় গ্রন্থাগারের উত্তরে এইএন সাহেবের বাসা)। সাহেব বলে কথা? আসলে সহজ মানুষ। রাজবাড়ির গ্রামীণ পরিবেশ তার ভালো লাগে। সকাল সন্ধ্যায় ঘুরে বেড়ান একাকি। বাংলোতে থাকেন একা। পরিচয় হয় কত রকম মানুষের সাথে। রাজবাড়ি শহরের পশ্চিমে শহরতলীতে ২০/২৫ ঘর বাগদীদের বাস। এখনো তা বাগদীপাড়া বলে পরিচিত। পরিচয় ঘটে এক বাগদী মেয়ের সাথে। পরিচয় ধরে প্রেম পরে পরিণয়। বাগদির মেয়ে বিয়ে করে তুলে আনলেন বাংলোতে। কয়েক বছরের সংসার। একদিন মেয়েটি কলেরা আক্রান্ত হয়ে মারা গেল। সাহেবের সেকি কান্না। স্ত্রীর স্মৃতি রক্ষার্থে সমাধিস্থ করা হল। জাতীয় গ্রন্থাগারের পশ্চিমে রাস্তার মোড়ে বাঁধানো সমাধিটি সে প্রেমের স্মৃতি বহন করে চলেছে।
রাজবাড়িতে রেল আসার পূর্বে ১৮৬১ সাল থেকে শুরু হয় গড়াই ব্রিজ নির্মাণ। মীর মশাররফ হোসেন চন্দ আরোপ করেন ‘গৌড়ী সেতু’ নামক কবিতা পুস্তিকায়। আত্মজীবনীতে তিনি গড়াই ব্রিজ নির্মাণের একটি বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন। আমার জীবনীগ্রন্থে তিনি লিখেছেন------
লাহিনীপাড়ার উত্তরাংশ হইয়া পূর্বদেশগামী রেললাইন গৌড়ী নদী পাড় হইয়া গোয়ালন্দ পর্যন্ত গিয়াছে। ইংরেজি ১৮৭১ সালে সেতুবন্ধন শেষ হইয়া গাড়ি চলা আরম্ভ হইয়াছে। ভারতে চিরবিখ্যাত মহামতি লউসেও বড়লাট বাহদুর গৌরী সেতু খুলিয়াছেন। গৌরী সেতুবন্ধন সময়ে অনেক মান্যমান হিন্দু মুসলমান কেরানী, ড্রাফটসম্যান, ক্যাশিয়ার বড় বাবু সাজিয়া রেলওয়ে কোম্পানিরর অধীনে কার্য করিতেন। খাশ ইউরোপীয়ান অতি কম হইলে ২০/২৫ জন, দেশী ফিরিঙ্গী প্রায় ঐ পরিমাণ, নিগ্রো হাবসী ১০/১২ জন, কেরানীদল ৭০/৮০ জনের কম ছিল না। হাতী, ঘোড়া, বোট নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার বিস্তর ছিল। চট্রগ্রাম, শ্রীহট্র প্রভৃতি স্থানের এবং দেশীয় কুলী, হিন্দুস্থানী কর্মকার, সূত্রধর কুলী মজুরের সংখ্যার হিসেবে কঠিন। স্বর্গীয় দুর্গাচরণ গুপ্ত যাহার গুপ্ত প্রেস, গুপ্ত পঞ্জিকা বঙ্গদেশ বিখ্যাত তিনিও গৌরী সেতুবন্ধন উপলক্ষ্যে রেলওয়ে কোম্পানির বেতনভোগী হেডবাবু হইয়া কার্য করিতেন। (মশাররফ রচনা সম্ভার, (পৃষ্ঠা-৭৩)।
রেলস্থাপনের কালে অনেক কোম্পানির নিকট থেকে পেয়েছে জমির ক্ষতিপূরণ মূল্য আবার অনেকের ফসলের জমি জিরেত চলে গেছে কোম্পানির হাতে।
অনেকে রেলের চাকরি নিয়ে বাবু হয়েছে আবার অনেকে কয়েক পুরুষের ভিটে মাটি ছেড়ে সরে গেছে বিদেশ বিভুঁইয়ে। কত উৎসুক প্রথম ইঞ্জিন চাকাওয়ালা গাড়ি দেখতে এসেছে। গাড়ির শব্দ, ইঞ্জিনের হুইসেল শুনে চমকিত হয়েছে। কত মানুষ রেলের চাকায় পিষ্ট হয়ে কালে অকালে হারিয়ে গিয়েছে। রেলকে নিয়ে রচিত হল কবিতা ছড়া--------
পা পিছলে আলুর দম’
ঘোড়ার গাড়ি, গরুরগাড়ি, পালকী বাহনে পায়ে হাঁটা শত শত বছরের অভ্যস্ত মানুষের মধ্যে অনেকে রেলকে স্বাগত জানালো আবার অনেকে ভাবল রেল স্থাপন বৃটিশ বেনিয়াদের এ দেশের সম্পাদ লুণ্ঠনের নয়াকৌশল। তবে সভ্যতা আর সংস্কৃতি বিকাশে যখন যেখানে যে কৌশলের উদ্ভাবন হয়েছে তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে নানা দেশ ও নানা জাতির মধ্যে। এদেশে রেলস্থাপনও সে সাক্ষ্য বহন করছে। রেলের যে শুরু তারপর থেকে এর গুরুত্ব কেবল বেড়েই চলেছে।
১৮৭১ সালে রাজবাড়িতে রেল আসার পর থেকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা পর্যন্ত শত বছরের ইতিহাস যদি গ্রহণ করা যায় তাহলে দেখা যাবে এ জেলার অর্থনৈতিক, সামজিক ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছে এই রেলকে কেন্দ্র করে। পাংশা, বেলগাছি, কালুখালি, রাজবাড়ি, গোয়ালন্দ, খানখানাপুর, বসন্তপুর, রামদিয়া, বালিয়াকান্দি তুলনামূলক দক্ষিণের জঙ্গল, নাড়ুয়া এবং পশ্চিমের মৃগী, সাওরাইল কশবামাঝাইল এলাকা থেকে তুলনামূলক বর্ধিষ্ণু এলাকা। এরমধ্যে রাজবাড়ি, গোয়ালন্দ, পাংশা, বেলগাছির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক বেশি।
রেল স্থাপনের পর থেকে কালুখালি একটি জংশন, রাজবাড়ি একটি শহর, গোয়ালন্দ বাংলার দ্বারপথ (Get way of Bengal) বা বৃহৎ গঞ্জ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। তখন বাংলার রাজধানী ছিল কলিকাতা। শিক্ষা-দীক্ষা, যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য, সাহিত্য সংস্কৃতি সবই ছিল কলিকাতা কেন্দ্রিক। এ সময় থেকেই বাবু কালচার বলে একটি শ্রেণি বিশেষের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে যার প্রভাব এ অঞ্চলে এখনো অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায়। এখনো অফিসের হেডক্লার্ককে রাজবাড়িতে অনেক অঞ্চলে বাবু বলতে শোনা যায় আর ছেলে সন্তানদের স্বাভাবিকভাবেই ডাকা হয় বাবু বলে। বস্তুত রেলের কারণে কলিকাতার সাথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশ ঘটায়। জনজীবনে রেলের গুরুত্ব এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, ১৯৪৪ সালে রেলকে নিয়ে এক সঙ্কটের সৃষ্টি হয়। তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমার কালুখালি-ভাটিয়াপাড়া রেল লাইনটি কিছু প্রশাসনিক জটিলতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে ১৯৪০ সালের ৯ ডিসেম্বর কর্তৃপক্ষ ১৮ ডিসেম্বর থেকে উ্ক্ত লাইনটি বন্ধ করার এক নোটিশ জারী করে। এটা ছিল রাজবাড়ি ও ফরিদপুরের জন-মানুষের জন্য এক দুঃসংবাদ।
এ সময় রাজবাড়ি ও ফরিদপুরের জনসাধারণ ভারতের ভাইসরয় ও বাংলার গভর্নর এর নিকট উক্ত লাইন চালু রাখার জন্য আকুল আবেদন জানান। এ আবেদন জনজীবনে শাখা লাইনটির সার্থক ও সামাজিক গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং লাইনটি বন্ধ না-করার দাবি রাখেন।
তারা দাবিতে উল্লেখ করেন-----‘কালুখালি-ভাটিয়াপাড়া রেলপথ ৫২ মাইল দীর্ঘ। এলাকাবাসীও প্রায় ১০০ শত বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে এই রেলপথের দ্বারা উপকৃত হয়েছে। এখানে অন্যকোন যানবাহন নেই। লাইনটি এলাকার অধিবাসীদের নিকট ‘Life cord' নামে চিহ্নিত। শাখা লাইনটি ঐতিহাসিক, বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক গুরুত্ব বহন করে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করা ছাড়াও এই রেলওয়ের মাধ্যমে জনগণের একটি বিরাট অংশ তাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের জন্য কাজের সূত্রে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। কর্মক্ষেত্র প্রসারের মাধ্যমে সামাজিক ক্ষেত্রে মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। নতুন নতুন শ্রেণির উদ্ভব হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ব্যবসায়ী, আইন ব্যবসার সাথে যুক্ত পেশাজীবী, চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত চিকিৎসক, শিক্ষাব্রতী, বিদ্যোৎসমাজ, সরকারি কর্মচারী, কারিগর, কৃষক, দিন মজুর ছাত্র ইত্যাদি শ্রেণি। এই লাইনটি বন্ধ হয়ে গেলে উক্ত সকল শ্রেণির মানুষ বিশেষ করে চাকরিজীবীদের মধ্যে অসুবিধার সৃষ্টি হবে এবং রেলওয়ের অনুপস্থিতির কারণে জনগণের আয়ের উপরও প্রভাব পড়বে। রেলওয়ে আগমনের ফলে এ এলাকার অধিবাসীগণ উৎসাহিত হয়ে তাদের ক্ষমতা ও উপাদান এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য নিবেদন করে। যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ অঞ্চলের অধিবাসীগণ অনেক বেশি পরিমাণে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও অন্যান্য প্রয়োজনের তাগিদে কলিকাতার উপর অনেক নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।’ (পূববাংলার রেলওয়ের ইতিহাস, দীনাক সোহানী, পৃষ্ঠা-২০৪,৫)।