বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

দুদ্দু শাহ্ - মরমি কবি বাউল
দুদ্দু শাহ্ - মরমি কবি বাউল

দুদ্দু শাহ্ (জন্মঃ- ১৮৪১ - মৃত্যুঃ- ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে) লালনের পরেই দুদ্দু শাহ্‌ সবচেয়ে মান্য মহাজন হিসেবে বাউল সমাজে খ্যাত। তাঁর গানের পঙ্কত্তি বাউল তত্ত্বের ভাষ্য হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। বাউল-মতাদর্শের প্রচার ও প্রসারে তাঁর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দেহকেন্দ্রিক বাউল ফকীর সাধনার গুপ্তকথা রহস্যাচ্ছাদিত বৃত্তের বাইরে এনে দুদ্দু শাহ্‌ নবপ্রান দিয়েছেন। তত্ত্ব জিজ্ঞাসুদের জন্য তাই দুদ্দুর পদাবলি প্রবল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

দুদ্দু শাহ্‌ সরাসরি লালনের কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এ কারণেই লালন-আখড়ায় তিনি দীর্ঘসময় অবস্থান করার সুযোগ পান। তখন প্রত্যক্ষভাবে লালনের মত ও পথের জানা-বোঝায় সুযোগ পেয়েছেন। সেসব অভিজ্ঞতার জ্ঞান তিনি তাঁর রচনায় সহজসাধ্য ভাষায় প্রকাশ করেছেন।

১৮৪১ খ্রিষ্টব্দে ঝিনাইদহ (বৃহত্তর যশোহর জেলা) জেলার হরিণাকুণ্ড উপজেলার বেলতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম দবিরুদ্দিন। ফকিরি মতে দীক্ষিত হওয়ার পর, দুদ্ মণ্ডল বা দুদ্দু শাহ নামে অভিহিত হন। তাঁর পিতার নাম মুহম্মদ ঝড়ুমণ্ডল ছিলেন কৃষক। তাঁর চাচা জিন্দার আলী বিশ্বাসও ছিলেন কৃষক। দু্দ্দ শাহ্ ছিলেন তাঁর ভাইদের ভিতরে কনিষ্ঠ। তাঁর অন্যান্য ভাইদের নাম মধু মণ্ডল, পিরু মণ্ডল, গরাই মণ্ডল।

দু্দ্দ শাহ্ হরিশপুর শ্রীনাথ বিশ্বাসের পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। একই সাথে তিনি স্থানীয় আলেম মৌলবিদের কাছে কাছে আরবি-ফারসি ভাষা শিক্ষা করেন। এছাড়া হরিশপুর নিবাসী মদনদাস গোস্বামীর কাছে তিনি সংস্কৃত ভাষা শেখেন। সংস্কৃত ভাষায় রচিত বহু গ্রন্থ এবং চৈতন্যচরিতামৃত তাঁর কণ্ঠস্থ ছিল বলে জানা যায়।

এক সময় তাঁর গ্রামের নিকটবর্তী হরিশপুরে বহু সাধু-দরবেশের বসতি ছিল। এঁদের সংস্পর্শে এসে দুদ্দু শাহ ভাববাদী হয়ে ওঠেন। ফকিরি মতে আকৃষ্ট হয়ে তিনি সদ্গুরুর সন্ধান করতে থাকেন। গুরুর সন্ধানে তিনি যশোর-নদীয়া-সহ বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমণ করেন। এই সময় ধর্ম বিষয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে আলেম ও পণ্ডিতদের সাথে তিনি তর্কুযুদ্ধে অবতীর্ণ হতেন। শেষ পর্যন্ত তিনি তৎকালীন নদীয়া জেলার মহকুমা শহর কুষ্টিয়ায় আসেন। এখানে এসে তিনলালন শাহ-এর গান এবং দর্শনের বিষয়ে অবগত হয়ে, লালন শাহের সাথে দেখা করেন। সেসময় লালন শাহ থাকতেন কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়ায়। এই আখড়ায় দুদ্দু লালনের সঙ্গে প্রথমে ধর্মালোচনায় বসেন। পরে এই আলোচনা তর্কযুদ্ধে পরিণত হয়। অবশেষে লালনের যুক্তির কাছে পরাজিত হয়ে তিনি লালনের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। দুদ্দু শাহ তাঁর একটি গানে এই বিষয়ে জানানঃ-

বাহাছ করিতে এসে বয়াত হইনু,
আমি অতি অভাজন লালন সাঁই বিনু।

এরপর তিনি লালনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে, তিন বহু গান রচনা করেন। অনেকে দুদ্দু শাহকে লালন শাহের সার্থক উত্তরাধিকার হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।

পরর্বর্তী সময়ে এই গানগুলো দুদ্দু শাহের গান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তাঁর গানে পাওয়া যায় সৃষ্টিকর্তার প্রতি একনিষ্ঠ সাধনার কথা। তাঁর মতে নিষ্ঠা ছাড়া কোনো সিদ্ধি লাভ করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন ধ্যান। মানব চরিত্র দ্বিমুখী। এর একটি ভালো, অন্যটি মন্দ। মন্দ কাজের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিৎ, সেটা তাঁর গানেই পাওয়া যায়।

বাউল বৈষ্ণব ধর্ম এক নহে তো ভাই,
বাউল ধর্মের সঙ্গে বৈথাবের যোগ নাই ॥

বিশেষ সম্প্রদায় বৈঞ্চব
পঞ্চতত্বে করে জপতপ
তুলসিমালা অনুষ্ঠান সদাই ॥

বাউল মানুষ ভজে
যেখানে নিজ বিরাজে
বিস্তর অমৃত মজে নারী সঙ্গ তাই ॥

নিত্যামন্দের দুই পুরুষ হয়
বীরভদ্র বীরড়ামনি কয়
দুই জনে দুই মতের গোঁসাই শুনতে পাই ॥

দরবেশি বাউলের ক্রিয়া
বীরভদ্র জানে সেই ধারা
দরবেশ লালন সাঁইর কথায়
দুদ্দু জানে তাই ॥

শেষজীবন তিনি কাটান তাঁর পৈত্রিক বাড়ি বেলতলায়। ১৯১১ (ধারণামতে) খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। বেলতলায় পৈতৃক বাস্তু-ভিটেতে সমাহিত করা হয়।

রচিত গ্রন্থ:

  1. লালন চরিত
  2. নুরে মোহাম্মদী
Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.