ফকীর লালন শাঁইজীর তিরোধান উপলক্ষে সাধুর হাটবাজার এবং লালন মেলা জমে উঠেছে। লক্ষ লক্ষ ভক্তে তাঁর আঁখরা বাড়ি পরিপূর্ণ। লালন সাঁইয়ের ১২৮তম তিরোধান দিবসের উদ্বোধনীতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, সবকিছুর উর্ধ্বে মানুষ ও মানবতা। জাত-পাতের কোন মূল্য নেই, মূল্য শুধু মানবতার।
তাই সবার আগে নিজেদের মধ্যে হানাহানী বাদ দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার উর্ধে থেকে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হতে হবে। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের কোন ধর্ম ও জাত ছিলনা। লালনের একটি মাত্র পরিচয় ছিল সেটি হচ্ছে মানবতা। তিনিই একমাত্র বাউল সাধক যিনি সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানবতাবাদীর পথে ডাক দিয়ে ছিলেন। তাই আমাদের লালন সাঁইয়ের আর্দশ হোক আধুনিক সমাজ গড়ার পথ ও পাথেয়। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে লালন একাডেমির আয়োজনে বাউল সম্রাটের ১২৮তম তিরোধান দিবসের ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।তিনি আরো বলেন, তিনি অহিংস মানবতার ব্রত নিয়ে মানুষের কল্যাণে অসংখ্য গান সৃষ্টি করে গেছেন। তাঁর এই অমর সৃষ্টি সঙ্গীত কোন ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সকল ধর্মের উর্ধে থেকে সম্প্রীতির বাধনে আবদ্ধ করতে মরমী এই সাধক মানব মুক্তির জন্য সৃষ্টি করেছিলেন ফকিরী মতবাদ।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভির আরাফাত, সাধারন সম্পাদক আজগর আলী, জিপি এ্যাডঃ আখতারুজ্জামান মাসুম, পিপি এ্যাডঃ অনুপ কুমার নন্দী, লালন একাডেমির এডহক কমিটির সদস্য তাইজাল আলী খান, সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়া শাখার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব প্রমুখ। আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কুমারখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীবুল ইসলাম খান ও লালন একাডেমির এডহক কমিটির সদস্য সেলিম হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির সহ-সভাপতি কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার সোহেল রহমান। আলোচনা শেষে দ্বিতীয় পর্বে লালন মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে পরিবেশিত হয় লালন সংগীতি। এতে উদ্বোধনী প্রার্থনা সংগীত পরিবেশন করেন পরম শ্রদ্ধেয় গুরু নহির শাহ ও তার ভেগধারী বাউল ফকিরগণ। এরপর পরই স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ লালন সঙ্গীত পরিবেশন করেন। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই সংগীত পরিবেশন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন কনক চৌধুরী।
উল্লেখ্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে আগত ভক্তদের পদধূলিতে মুখরিত কুষ্টিয়া। তিরোধান উপলক্ষে তিনদিনের সাধু সঙ্গ এবং মেলা বসেছে। দিন দিন এই ভক্ত–জনতার সমাগম বাড়ছেই। কেন? খেলাফতধারী প্রবীণ ফকির নহির শাহ বললেন, গান ও বাণীই হচ্ছে লালন শাহের জীবন। বিপুল ভক্তকুল বলে দিচ্ছে, লালনের গান আর বাণীর টানেই ১২৮ বছর ধরে এই আখড়াবাড়িতে মানুষের ছুটে আসা।