পাগলা কানাই
অসংখ্য দেহতত্ত্ব, মর্সিয়া,জারি, বাউল, মারফতি, ধূয়া, মুর্শিদি গানের স্রষ্টা পাগলা কানাইয়ের এই গান শুনেছেন অনেকেই। পিতৃহারা হয়ে কানাই ভবঘুরে হয়ে যান। তিনি রাখালির কাজ নেন। কানাই বোনের বাড়ির গরুর পাল চরাতেন আর গান বাঁধতেন, তাতে সুর দিতেন। একটা পাগলামির ভাব ছিল তাঁর মধ্যে। ছোটবেলা থেকে তাই লোকে তাঁর নামের সঙ্গে ‘পাগলা’ শব্দটি জুড়ে দিয়েছিল।
তৎকালীন সময়ে কবিত্ব প্রতিভায় লালনের পরেই তাঁর স্থান নিরূপণ করা যায়।গ্রামের মক্তবে অল্পকিছুদিন পড়াশোনা করে পুঁথিগত বিদ্যা না থাকলেও আধ্যাত্নিক চেতনায় জ্ঞানান্বিত হয়ে অপরূপ সৃষ্টি সম্ভার নিয়ে গ্রাম বাংলার পথে প্রান্তরে দোতারা হাতে ঘুরে ফিরেছেন।
এই স্বভাব কবির সর্বাপেক্ষা পদচারণা ছিল ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে। পরবর্তীতে তিনি ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ফিরে পাবনা ও সিরাজগঞ্জে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন।পাগলা কানাই সম্পর্কে কাঙাল হরিনাথ (১ম খণ্ড) গ্রন্থে জলধর বাবু পাগলা কানাই সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘কানাই-এর গান শুনলে লোকে পাগল হইয়া যায়। তার মতে,দেহ জমি চাষ না করলে সেখানে ফসল হয় না।
-
শোন বলিরে ও মন চাষা
জমি আবাদ না করে হইল কি দুঃখ দশা
শোন বলিরে ও মন চাষা
নিজেই হলি বুদ্ধিনাশা
জমি আবাদ না করে হইল কি দুঃখ দশা।। -
বাউল
বাউল (Baul) একটি বিশেষ লোকাচার ও ধর্মমত। এই মতের সৃষ্টি হয়েছে বাংলার মাটিতে। বাউলকূল শিরোমণি লালন সাঁইয়ের গানের মধ্য দিয়ে বাউল মত পরিচতি লাভ করে। বাউল গান যেমন জীবন দর্শনে সম্পৃক্ত তেমনি সুর সমৃদ্ধ। বাউলদের সাদামাটা কৃচ্ছসাধনার জীবন আর একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানোই তাদের অভ্যাস। ২০০৫ সালে ইউনেস্কো বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে বাউল গানকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষনা করে।