মকছেদ আলী শাহ্
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশভাগের আগে অমূল্য শাহ নামের এক বিশিষ্ট লালনগীতির কণ্ঠশিল্পী বর্ধমান-বীরভূম অঞ্চলের বাউলদের অনুসরণে ডান হাতে একতারা এবং বাঁ হাতে বায়া বাজিয়ে বিভিন্ন আসরে দাঁড়িয়ে লালনের গান গাইতে শুরু করলে লালনগীতি পরিবেশনের একটি নতুন ধারা প্রবর্তিত হয়। পরবর্তী সময়ে এ ধারাটি বজায় ছিল সুকণ্ঠের অধিকারী বেহাল শাহ, নিমাই শাহ, খোদা বক্স শাহ (জাঁহাপুর) প্রমুখের মাধ্যমে। মকছেদ আলী শাঁইয়ের সুযোগ হয়েছিল তিনজনের অন্তরঙ্গ সান্নিধ্য লাভ করা।
যার ফলে অমূল্য শাহের গায়কি-ঢংটি অপ্রত্যক্ষভাবে তাঁর ওপর প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে লালনশিষ্য ভোলাই শাহের মাধ্যমে প্রচলনকৃত ইসমাইল ফকির, ফকির গোলাম ইয়াছিন, মোতাহার খন্দকার প্রমুখ যাঁরা পরিচিত ছিলেন ‘ছেঁউড়িয়া ঘরনা’ বলে, তাঁদের গায়কি ধরন-ধারণ সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত ছিলেন তিনি। এঁদের সহায়তায় মকছেদ আলী সাঁই লালনগীতি শিখেছিলেন। লালনের গানে রাগ-রাগিণী, রামপ্রাসাদী, কীর্তন, ধুয়া গানের সুর প্রভৃতির সন্ধান তিনিই প্রথম করেন। পারিপার্শ্বিক প্রভাবের সমন্বয়ে সংগীত জগতের পরিশীলিত কণ্ঠশিল্পী মকছেদ আলী সাঁই যখন নিজস্ব ভঙ্গিতে নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারের মধ্য দিয়ে লালনগীতি গাওয়া শুরু করলেন এবং পাশাপাশি আরও অনেক শিল্পীর কণ্ঠে তাঁর পরিবেশিত ভঙ্গির গান তুলে দিলেন—তখন সহজে এ ধারা জনপ্রিয়তা পায়। বর্তমানে অনেকে লালনগীতি পরিবেশনে অনুসরণ করছেন মকছেদ আলী শাঁইয়ের ধরন-ভঙ্গি। ফরিদা পারভীন, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, চন্দনা মজুমদার, কিরণচন্দ্র রায়, রেবা সরকার, বিউটি প্রমুখ এ ধারারই সার্থক উত্তরসুরি।
-
বাজার মেলায়ে তুমি বসে দোকানদার
তুমি দোকান তুমি দ্রব্য তুমি খরিদ্দার
বাজার মেলায়ে তুমি বসে দোকানদার
তুমি দোকান তুমি দ্রব্য তুমি খরিদ্দার।। -
বাউল
বাউল (Baul) একটি বিশেষ লোকাচার ও ধর্মমত। এই মতের সৃষ্টি হয়েছে বাংলার মাটিতে। বাউলকূল শিরোমণি লালন সাঁইয়ের গানের মধ্য দিয়ে বাউল মত পরিচতি লাভ করে। বাউল গান যেমন জীবন দর্শনে সম্পৃক্ত তেমনি সুর সমৃদ্ধ। বাউলদের সাদামাটা কৃচ্ছসাধনার জীবন আর একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানোই তাদের অভ্যাস। ২০০৫ সালে ইউনেস্কো বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যসমূহের মাঝে বাউল গানকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে ঘোষনা করে।