মহর্ষি মনমোহন দত্ত
মহর্ষি মনমোহন দত্ত একজন মানবতাবাদী। তিনি মরমী সাধক ও আধ্যাত্মিক সাধনার সমন্বয়বাদী ধারার একজন জ্যোতির্ময় ঋষি। যিনি একইসঙ্গে সঙ্গীত রচনার মাধ্যমে ধর্ম সাধনার কাজটিও করে গেছেন সযতনে। ‘মলয়া’ সংকলনটি সঙ্গীত হিসেবে যেমনি অনন্য, এতে প্রতিফলিত ধর্মদশর্ন, ভাবসম্পদ এবং বিষয়বস্তু তেমন সমৃদ্ধ ও নান্দনিক।
এই মাধূর্যময় মলয়া সঙ্গীতের প্রবক্তা মহর্ষি মনমোহন দত্ত। সঙ্গীতজ্ঞ এই মহান সাধক-কবি জন্মগহ্র ণ করেন (১২৮৪ বাংলার ১০ মাঘ) ১৮৭৭ সালে; তিতাস বিধৌত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ছায়া-সুনিবিড় সাতমোড়া গ্রামে। মনমোহন দত্তের পূর্বপুরুষ ঢাকা সোনারগাঁয়ের জমিদার রাজবল্লভ দত্ত। জমিদারীর মোহকে পাশ কাটিয়ে, চলে আসেন তিনি সাতমোড়া গ্রামে। রাজবল্লভের পুত্র বৈদ্যনাথ দত্ত। তিনি ছিলেন সঙ্গীতের সমঝদার ও শ্যামা সঙ্গীতের রচয়িতা। বৈদ্যনাথের পুত্র পদ্মনাথ দত্ত। তিনি পেশায় ছিলেন কবিরাজ, কিন্তু অধ্যাত্মবাদে সমর্পিত প্রাণ। লোকশ্রুতি রয়েছে যে, তিনি মৃত্যুর এক সপ্তাহ পূর্বেই নিজের মৃত্যুর দিন-ক্ষণ বলে গিয়েছিলেন। এই পদ্মনাথ দত্তের জেষ্ট্য পুত্রই হলেন মহর্ষি মনমোহন দত্ত। পূর্বেই বলেছি, তাঁর জন্ম (১২৮৪ বাংলা সালের ১০ মাঘ) ১৮৭৭ সালে এবং মৃত্যু (১৩১৬ বাংলা সালের ২০ আশ্বিন) ১৯০৯ সালে। বেঁচে ছিলেন মাত্র ৩২ বছর। ক্ষণজন্মা এই ঋতিক্ব কবি তাঁর অল্পায়ু-জীবনে যে সৃষ্টিকর্ম ও সাধনার চিহ্ন রেখে গেছেন- তা চিরকালের সম্পদ ও পাথেয় হয়ে থাকবে।
-
ফকিরি কি গাছের গোটা
ঢেঁকি যদি স্বর্গে যাইত বারা বানত তবে কেটা
ফকিরি কি গাছের গোটা
ঢেঁকি যদি স্বর্গে যাইত
বারা বানত তবে কেটা।। -
পাগল পাগল সবাই পাগল
তবে কেন পাগল খোটা
পাগল পাগল সবাই পাগল
তবে কেন পাগল খোটা।। -
শিখিয়ে দে তুই আমারে কেমন করে তরে ডাকি
এক ডাকে ফুরাইয়া দেরে জনম ভরের ডাকাডাকি
শিখাইয়া দে তুই আমারে
কেমন করে তোরে ডাকি।। -
ও দয়াল গুরু গো মনের দুখ আর বলা গেলো না
ও দুখ বলতে গেলে না যায় বলা মন তলায় জল মানে না
ও দয়াল গুরু গো
মনের দুখ আর বলা গেলো না
ও দুখ বলতে গেলে না যায় বলা
মন তলায় জল মানে না
বলা গেলো না।।