বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি
জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি

জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (ফার্সি: جلال‌الدین محمد رومی‎‎)(১২০৭ – ১৭ডিসেম্বর ১২৭৩), অথবা পরিচিত আছেন জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখী, মাওলানা রুমি, মৌলভি রুমি নামে তবে শুধু মাত্র রুমি নামে বেশি জনপ্রিয়। তিনি ছিলেন ১৩ শতকের একজন ফার্সি সুন্নি মুসলিম কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিবাদী এবং সুফী। রুমির প্রভাব দেশের সীমানা এবং জাতিগত পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে বিশ্বদরবারে ছড়িয়ে পড়েছে; ফার্সি, তাজাকিস্তানী, তুর্কি, গ্রীক, পাস্তুন, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলামানরা গত সাত দশক ধরে বেশ ভালভাবেই তার আধ্যাত্নিক উত্তরাধিকারকে যথাযথভাবে সমাদৃত করে আসছে।

তার কবিতা সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিভিন্ন শ্রেণীতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। রুমিকে যুক্তরাষ্ট্রের “সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি” এবং “বেস্ট সেলিং পয়েট” বলা হয়।

রুমির সাহিত্যকর্ম বেশিরভাগই ফার্সি ভাষায় রচিত হলেও তিনি অনেক স্তবক তুর্কি, আরবি এবং গ্রীক ভাষায়ও রচনা করেছেন। তার লেখা মসনবী কে ফার্সি ভাষায় লেখা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসাবে তুলনা করা হয়। ইরান সাম্রাজ্য এবং বিশ্বের ফার্সি ভাষার লোকেরা এখনও তার লেখাগুলো মূল ভাষায় ব্যাপকভাবে পড়ে থাকে। অনুবাদসমূহও খুব জনপ্রিয়, বিশেষ করে তুরস্ক, আজারবাইজান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ এশিয়ায়। তার কবিতা ফার্সি সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে, শুধু তাই নয় তুর্কি সাহিত্য, উসমানীয় তুর্কি সাহিত্য, আজারবাইজান সাহিত্য, পাঞ্জাবের কবিতা, হিন্দী সাহিত্য, উর্দু সাহিত্যকেও অনেক প্রভাবিত করেছে। এছাড়াও অন্যান্য ভাষার সাহিত্য যেমন তুর্কীয়, ইরানী, ইন্দো-আর্য, চাগাতাই, পাশতো এবং বাংলা সাহিত্য ও বাংলাকে প্রভাবিত করেছে।

তাকে ইংরেজিতে সবচেয়ে বেশি ডাকা হয় “রুমি” নামে। তার পুরো নাম “জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ বালখী” বা “জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ রুমি”। বালখী এবং রুম দুটো তার জাতিগত নাম অর্থাৎ “বালখ্‌” থেকে এবং “রুম” থেকে(রুম আনাতোলিয়ার ফার্সি এবং তুর্কি নাম)যথাক্রমে। রুমির নির্ভরযোগ্য জীবনিলেখক ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো এর ফ্রাঙ্কলিন লুইস এর মতে আনাতোলিয়া উপদ্বীপ ছিল বাইজেন্টাইন বা রুম সম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল যেটি পরবর্তীতে তুর্কির মুসলিমদের দখলে আসে, যেটি এখন পর্যন্ত আরব, পারস্য এবং তুর্ক নামে পরিচিত, যেটি ছিল রুম এর ভৌগলিক এলাকা। যেখানে অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ত জন্মগ্রহণ করেছেন রুমি ছিলেন তাদেরই একজন। “রুমি” শব্দটি মূলত আরবিক যার অর্থ রোমান। তবে তিনি ব্যাপকভাবে তার উপনাম “মাওলানা” নামে পরিচিত। মাওলানা একটি আরবিক শব্দ যার অর্থ হচ্ছে শিক্ষক।

রুমি জন্মগ্রহণ করেন স্থানীয় ফার্সি ভাষী মাতাপিতার কাছে, যারা মুলত বালখ্‌ এর বাসিন্দা যা বর্তমানে আফগানিস্থান। তিনি হয় ওয়ালখ্‌স যা বৃহৎ বালখ্‌ সম্রাজ্যের বালখ্‌স নদীর কাছে একটি গ্রাম যেটি বর্তমানে তাজাকিস্তান, অথবা তিনি বালখ্‌ শহরে বর্তমান আফগানিস্থান এ জন্মগ্রহণ করেন। বৃহৎ বালখ্‌ তখন ছিল ফার্সি সংস্কৃতি সূফী চর্চার মধ্যবিন্দু। যেটি বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রুমির পিতা ছাড়াও রুমির উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছেন তখনকার ফার্সি কবি আত্তার এবং সানাই। রুমি তাদের গুণগ্রাহিতা করেছেনঃ “আত্তার হচ্ছে আত্না, সানাই হচ্ছেন তাঁর দু’চোখ, এবং সময় এরপরে, আমরা তাঁদের ট্রেনে ছিলাম” এবং আরেকটি কবিতাতে স্মৃতিচারণ করেছেন “আত্তার ভালবাসার সাতটি নগরই ভ্রমন করেছেন আর আমি এখনও একটি গলির প্রান্তে অবস্তান করছি”। তার পৈতৃক দিক থেকে তিনি নাজিম উদ্দিন কুবরা এর বংশদর ছিলেন। তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময় রুম সালাতানাত এর পারশ্যতে কাটিয়েছেন। যেখানে তিনি তার কাজ রচিত করেছেন এবং ১২৭৩ ঈসায়ীতে ইন্তেকাল করেছেন। তাকে কোনিয়ায় সমাহিত করা হয় এবং সেটি এখন একটি তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে। রুমির মৃত্যুর পর তার ছেলে সুলতান ওয়ালাদ এবং তার অনুসারীরা “মৌলভী ক্রম” স্থাপন করে, এটিকে ঘূর্ণায়মান দরবেশও বলা হয়, যেটি সুফী নৃত্যে “সামা” এর জন্য বিখ্যাত। তাকে তার পিতার কাছে শায়িত করা হয় এবং তার দেহাবশেষ এ একটি জমকাল দরগাহ নির্মাণ করা হয়। শামস উদ্দিন আহমদ আফলাকী এর “মানকিব উল-আরিফিন”(১৩১৮ এবং ১৩৫৩ এর মধ্যে লেখা) তে এর বিস্তারিত রয়েছে। এই ঐতিহাসিক জীবনীগ্রন্থকে অত্যন্ত মূল্যবান বলা হয় কারণ এতে রুমি সম্পর্কে কিংবদন্তী এবং সত্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ,ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো এর প্রফেসর ফ্রাঙ্কলিন লুইস এর লেখা রুমি এর জীবনী গ্রন্থে ইহা সম্পর্কে আলাদা একটি অধ্যায় রয়েছে।

রুমির পিতা বাহা উদ্দিন ওয়ালাদ ছিলেন বালখ্‌ এর একজন ধর্মতাত্ত্বিক, আইনজ্ঞ, এবং একজন অতীন্দ্রিবাদী। যিনি রুমি এর অনুসারীদের কাছে “সুলতান আল-উলামা” নামে পরিচিত। সবচেয়ে জনপ্রিয় জীবনিগ্রন্থ লেখকদের মতে তিনি ছিলেন খলীফা আবু বক্কর বংশধর, যদিও আধুনিক গবেষক-পণ্ডিতরা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। মায়ের দিক থেকে খোয়ারিজমীয় বংশদর দাবি করা হয়েছিল রাজবংশের সাথে যুক্ত করার জন্য কিন্তু এ দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয় কালানুক্রমিক এবং ঐতিহাসিক কারণে। সবচেয়ে সম্পূর্ণ বংশতালিকা করা হয়েছে তার পরবিরারে যা ছয় থেকে সাত প্রজন্ম পর্যন্ত বিস্তৃত যেটি যুক্ত হয়েছে হানাফি ফকীহগণের সাথে। আমরা বাহা উদ্দিন এর মায়ের দিক থেকে নামের উৎস জানতে পারিনা, কিন্তু শুধুমাত্র তিনি তাকে “মামি”(ফার্সি ভাষায় মা এর চলিতরূপ)বলে উল্লেখ করেছেন এবং তিনি ছিলেন খুবই সাধারণ একজন মহিলা যিনি ১৩ শতকে বাস করেছেন। রুমি এর মা ছিলেন মুইমিনা খাতুন। তার পারিবারিক কাজ ছিল কয়েক প্রজন্ম ধরে ইসলাম ধর্মের হানাফী মাজহাবের প্রচারণা করা এবং পরিবারের এই ঐতিহ্যকে রুমি এবং সুলতান ওয়ালাদ অব্যাহত রেখেছেন। যখন মঙ্গোল মধ্য এশিয়া দ্বারা আক্রান্ত ১২১৫ এবং ১২২০ সাল এর মধ্যে, বাহা উদ্দিন ওয়ালাদ তার পুরো পরিবার এবং একদল শিষ্য সহ পশ্চিমাভিমুখে রওনা হন। ঐতিহাসিকদের মতে যেটি রুমির শিষ্যদের দ্বারা একমত না, রুমির সাথে তখন পরাসীর সবচেয়ে জনপ্রিয় রহস্য কবি আত্তার এর দেখা হয় ইরানিয়ান শহর “নিশাপুর” এ। আত্তার সাথেসাথেই রুমির আধ্যাত্নিক বৈশিষ্ট চিনতে পেরেছিলেন। তিনি দেখতে পেলেন রুমি তার পিতার পিছনে হেঁটে যাচ্ছেন এবং বললেন, “একটি হ্রদের পিছনে একটি সমুদ্র যাচ্ছে”। তিনি বালককে একটি বই প্রদান করলেন “আসরারনামা” নামে যেটি ইহজগতে আত্নাকে জড়িয়ে ফেলা সম্বন্ধে। এই সাক্ষাত আঠারো বছরের রুমির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং পরবর্তিতে তার কাজের উৎসাহ হিসাবে কাজ করেছে। নিশাপুর থেকে ওয়ালাদ এবং তার লোকজন বাগদাদ এর দিকে রওনা হন এবং অনেক পণ্ডিত ও সূফীদের সাথে সাক্ষাত করেন। বাগদাদ থেকে হজ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং মক্কায় হজ্জ পালন করেন। এরপর অভিযাত্রী কাফেলার দলটি দামেস্ক,মালাত্যেয়া, এরজিকান,শিবাস,কায়সেরি এবং নিগদি পাড়ি দেয়। এরপর তারা কারামান এ সাথ বছর থাকে। রুমির মা এবং ভাই উভয়েই সেখানে মারা যায়। ১২২৫ সালে,কারামানে রুমি বিবাহ করেন গওহর খাতুন কে। তাদের দুটো ছেলেঃ সুলতাম ওয়ালাদ এবং আলাউদ্দিন চালাবী। যখন তার স্ত্রী মারা যান রুমি পুনরায় বিবাহ করেন এবং তার এক ছেলে, আমির আলিম চালাবী ও এক মেয়ে মালাখী খাতুন। ১২২৮ সালের ১ মে, আনাতোলিয়া শাসক আলাউদ্দিন কায়কোবাদ তাদেরকে আমন্ত্রণ জানান, বাহা উদ্দিন আনাতোলিয়া আসেন এবং আনাতোলিয়া এর কোনিয়াতে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন যেটি রুম সালাতানাত এর পশ্চিমাঞ্চল। বাহা উদ্দিন মাদ্রাসা এর প্রধান শিক্ষক হন এবং যখন তিনি মারা যান রুমির বয়স পঁচিশ বছর, উত্তরাধিকারসূত্রে তিনি তার পিতার পদ পান একজন ইসলামিক মৌলভি হিসাবে। বাহা উদ্দিন এর একজন ছাত্র, সৈয়দ বুরহান উদ্দিন মোহাক্কিক তীরমিযি, রুমিকে শরীয়াহ এবং তরীকা সম্পর্কে শিক্ষা দিতে থাকেন বিশেষ করে তার পিতার দিকগুলো। নয় বছর ধরে তিনি সূফীবাদ শিক্ষা গ্রহণ করেন বুরহান উদ্দিন এর শিষ্য হিসাবে যতদিন না তিনি মারা যান ১২৪০ বা ১২৪১ সালে। এরপর রুমির জনজীবন শুরু হয়ঃ তিনি একজন ইসলামী ফকিহ্‌ বা আইনজ্ঞ হন, ফতওয়া প্রকাশ করেন এবং কোনিয়ার মসজিদে নৈতিকতা বক্তৃতা দিতে থাকেন। তিনি মাদ্রাসাতে একজন মৌলভি হিসাবে কাজ করেন এবং তার অনুগামীদের শিক্ষা দেন। এই সময়কালে রুমি দামেস্ক ভ্রমণ করেন এবং বলা হয়ে থাকে তিনি সেখানে চার বছর অতিবাহিত করেন। দরবেশ শামস তাবরিজি এর সাথে সাক্ষাৎ হয় ১৫ নবেম্ভর ১২৪৪ সালে যেটি তার জীবন সম্পূর্ণরুপে বদলে দেয়। একজন সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষক এবং আইনজ্ঞ থেকে রুমি একজন সাধুতে রূপান্তরিত হন। শামস মধ্যপ্রাচ্যের সর্বত্র ভ্রমণ করে খুঁজছেন এবং বলছেন “কে আমার সঙ্গ সহ্য করিবে”। একটি কন্ঠ তাকে বলিল, “বিনিময়ে তুমি কি দিবে?” শামস উত্তর দিলেন, “আমার শির!!” কন্ঠটি আবার বলল, “তাহলে তুমি যাকে খুঁজছ সে কোনিয়ার জালাল উদ্দিন”। ১২৪৮ সালের ৫ ডিসেম্বর রাতে রুমি এবং শামস কথা বলছিলেন, এমন সময় কেউ শামসকে পিছনের দরজায় ডাকে। তিনি বের হয়ে যান এবং এরপর আর কোথাও কখনো দেখা যায়নি। গুজব শোনা যায় যে রুমির পুত্র আলাউদ্দিন এর মৌনসম্মতিতে শামসকে হত্যা করা হয়, যদি তাই হয় তাহলে শামস এই রহস্যময় বন্ধুত্তের জন্য তার মাথা দিয়েছেন।

শামস এর জন্য রুমির ভালবাসা এবং তার মৃত্যুতে শোকের প্রকাশ তিনি করেছেন “দেওয়ান-এ শামস-এ তাবরিজী” কাব্যগ্রন্থে। তিনি নিজে শামসের খোঁজে বের হয়ে গেছেন এবং দামেস্ক ভ্রমণ করেছেন। সেখানে তিনি বুঝতে পারলেনঃ

আমি কেন তাকে খুঁজব?
সে আর আমি তো একই
তাঁর অস্তিত্ব আমার মাঝে বিরাজ করে
আমি নিজেকেই খুঁজছি!

রুমি অনায়সে গজল রচনা করতে শুরু করলেন এবং সেগুলো “দেওয়ান-ই কবির” বা দেওয়ান শামস তাবরিজীতে সংগৃহীত করা হয়। রুমি আরেকজন সঙ্গী খোঁজে পান সালা উদ্দিন-ই জারকুব, একজন স্বর্ণকার। সালা উদ্দিন এর মৃত্যুর পর রুমির কেরাণী এবং প্রিয় ছাত্র হুসাম-এ চালাবি রুমির সঙ্গীর ভূমিকা পালন করেন। একদিন তারা কোনিয়ার বাইরে একটি আঙুরক্ষেতে বিচরণ করছিলেন তখন হুসাম রুমিকে একটা ধারণা বললেনঃ “যদি আপনি একটি বই লিখেন যেমন সানাই এর “এলাহিনামা” বা আত্তার এর “মাতিক উত-তাইর” এর মত, যেটি অনেকের সঙ্গ দেবে। তারা আপনার কাজ থেকে হৃদয়পূর্ণ করবে এবং সংগীত রচনা করবে এটিকে সহবর্তমান থাকতে। রুমি মুচকি হাসলেন এবং এক টুকরো কাগজ বের করে তার “মসনবী” এর প্রথম আঠারো লাইন লিখলেন:-

বাঁশের বাঁশি যখন বাজে, তখন তোমরা মন দিয়া শোন, সে কী বলে,
সে তাহার বিরহ বেদনায় অনুতপ্ত হইয়া ক্রন্দন করিতেছে…

হুসাম রুমিকে মিনতি করতে লাগলেন আরো লিখার জন্য। রুমি তার পরের বারটি বছর আনাতোলিয়ায় তার সেরা কাজ “মসনবী” এর ছয়টি খন্ডের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। ১২৭৩ সালের ডিসেম্বর এ রুমি অসুস্থবোধ করতে লাগলেন। তিনি তার নিজের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এবং অনেক জনপ্রিয় হওয়া একটি গজল রচনা করেন যার শুরু হয়ঃ

কিভাবে জানব কোন ধরণের রাজা আমার মধ্যে আছে আমার সহচর হিসাবে?
আমার উজ্জ্বল মুখে দৃষ্টি দিও না আমার বদ্ধ পাগুলোর জন্য।

১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩ সালে রুমি কোনিয়ায় মারা যান। তাকে তার পিতার কাছে সমাহিত করা হয় এবং যেটি একটি চমকপ্রদ ঘর, “ইয়াসিল তুর্ব”(সবুজ সমাধি, قبه الخضراء; যা বর্তমানে মাওলানা মিউজিয়াম), তার কবরের উপর দাঁড়িয়ে আছে। তার সমাধিফলকে লেখাঃ

যখন আমি মৃত, পৃথিবীতে আমার সমাধি না খুঁজে, আমাকে মানুষের হৃদয়ে খুঁজে নাও।

জর্জিয়ার রাণী গুরসু খাতুন ছিলেন রুমির উৎসাহদাতা এবং কাছের বন্ধু। তিনি কোনিয়াতে রুমির সমাধি নির্মানে তহবিল প্রদান করেন। ১৩ শতকের মাওলানা মিউজিয়াম সহ তার মসজিদ, থাকার জায়গা, বিদ্যালয় এবং মৌলভি তরীকার অন্যান্য ব্যক্তিদের সমাধি দেখতে আজকেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম-অমুসলিমরা ছুটে যান। জালাল উদ্দিন যিনি রুমি নামে পরিচিত, তিনি ছিলেন ইসলামের একজন দার্শনিক এবং মরমী। তার উপদেশ সমর্থন করে ভালবাসার মাধ্যমে অসীম পরমতসহিষ্ণুতা, ইতিবাচক যুক্তি, ধার্মিকতা, দানশীলতা এবং সচেতনতা। তিনি এবং তার শিষ্যদের কাছে সকল ধর্মই অধিক বা কম সত্য। মুসলিম, খৃষ্টান এবং ইহুদীকে একই দৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন, তার শান্তিপূর্ন এবং সহিষ্ণু শিক্ষাদান বা উপদেশ সকল ধর্মের মানুষের অন্তর স্পর্শ করেছে।

রুমি এর শিক্ষার সাধারণ বিষয়বস্তু ছিল অন্যান্য ফার্সি সাহিত্যের মরমী এবং সুফী কবিদের মত তাওহিদ শিক্ষা। তার সাধনা অর্জনের ইচ্ছা এবং আকাঙ্কা প্রতিয়মান হয়ে উঠে তার বই মসনবী-এর নিম্নোক্ত কবিতায়ঃ

আমি পাথর হয়ে মরি আবার গাছ হয়ে জন্মাই
গাছ হয়ে মরি আবার পশু হয়ে জাগি,
পশু হয়ে মরি আবার মানুষ হয়ে জন্মাই
তাহলে ভয় কীসের? কীবা হারাবার আছে মৃত্যুতে?
পরবর্তি পদক্ষপে আমি মানুষের প্রকৃতিতে মারা যাব,
যাতে স্বর্গদূতদের সাথে আমার মাথা এবং ডানা উঁচু করতে পারি,
এবং অবশ্যই স্বর্গদূতদের নদী থেকে লাফ দিব,
সবকিছুই নশ্বর শুধুমাত্র তিনি(সৃষ্টিকর্তা) ছাড়া,
আবারও আমি স্বর্গদূতদের মধ্য থেকে উৎসৃষ্ট হব,
আমি কি হব তা আমার কল্পনার বাইরে,
তারপর আমি অস্তিত্বহীন হব; অস্তিত্বহীন আমকে বলে(সুরের মাধ্যমে) বাঁশির ন্যায়,
প্রকৃতপক্ষে, তাঁর কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন।

از جمادی مُردم و نامی شدم —
وز نما مُردم به حیوان سرزدم
مُردم از حیوانی و آدم شدم —
پس چه ترسم؟ کی ز مردن کم شدم؟
حملهٔ دیگر بمیرم از بشر —
تا برآرم از ملائک بال و پر
وز ملک هم بایدم جستن ز جو —
کل شیء هالک الا وجهه
بار دیگر از ملک پران شوم —
آنچه اندر وهم ناید آن شوم
پس عدم گردم عدم چو ارغنون — گویدم کانا الیه راجعون

মসনবী রচিত হয় প্রতিদিনের দৃশ্য, কোরানের আয়াত এবং ব্যাখ্যা, জঠিল এবং বিশাল আধ্যাত্নবাদ থেকে। প্রাচ্যে বলা তার সম্পর্কে বলা হয় যে সে “একজন নবী নয় কিন্তু এটা নিশ্চিত যে সে একটি ধর্মশাস্ত্র নিয়ে এসেছে”। রুমি প্রচন্ডভাবে বিশ্বাস করতেন যে সৃষ্টিকর্তার কাছে পৌছানোর রাস্তা হচ্ছে সঙ্গীত, কবিতা, এবং নৃত্য। রুমির কাছে, সঙ্গীত সাহায্য করে সমস্ত সত্তাকে পবিত্র করতে কেন্দ্রীভূত করে এবং এতই তীব্রভাবে যে আত্না একই সাথে ধ্বংস এবং পুনরুত্থিত হয়। এই ধারণা থেকে সূফী নৃত্য গড়ে উঠে। তার শিক্ষা মৌলভি তরিকার ভিত্তি হয়ে উঠে, যেটি তার ছেলে সুলতান ওয়ালাদ পূর্ণাঙ্গ করে ছিলেন। রুমি “সামা” এর পৃষ্ঠপোষক, এটি সঙ্গীত শোনার মাধ্যেমে পবিত্র ভাবে নর্তন করা। মৌলভি ঐতিহ্যের মধ্যে “সামা” প্রতিনিধিত্ব করে মন এবং ভালবাসার মাধ্যমে একের নিকট আধ্যাত্মিক আরোহণের এক রহস্যময় ভ্রমণ। এই ভ্রমণে অন্বেষক প্রতিকীভাবে সত্যের দিকে ফিরে,ভালবাসা বৃদ্ধি, অহং পরিত্যাগ, সত্যের সন্ধান পায় এবং নির্ভুল একের নিকট পৌছায়। এরপর অন্বেষক আধ্যাত্মিক ভ্রমণ থেকে ফেরে, পরিপক্কতা লাভের মাধ্যমে সৃষ্টিকে ভালবাসতে এবং সেবা করতে।

মসনবীর অন্য একটি স্তবকে রুমি বর্ণনা করেছেন সার্বজনিন ভালবাসার বার্তাঃ

ভালোবাসার উদ্দেশ্য অন্য সব উদ্দেশ্য থেকে ভিন্ন
ভালোবাসা হলো ঈশ্বরের রহস্যপুঞ্জের জ্যোতির্বিজ্ঞান।

রুমির প্রিয় বাদ্যযন্ত্র ছিল “নে”(এক ধরনের বাঁশি)।

রুমির কাব্যকে মাঝেমধ্যে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়ঃ চতুষ্পদী শ্লোক এবং গজল। গদ্যসমূহকে ভাগ করা হয় প্রবন্ধ, পত্র, এবং “সাতটি ধর্মাপদেশ” এ।

কাব্য

  1. রুমির প্রধান কাজ হচ্ছে “মাতনাওয়ে মানাউয়ি”(আধ্যাত্মিক দ্বিপদী; مثنوی معنوی), একটি ছয় খন্ডের কবিতা কয়েকজন সূফী এটিকে বিবেচনা করেন ফার্সি ভাষার কুরআন হিসাবে। অনেকে একে তুলনা করেন যে সেরা অতীন্দ্রি়বাদী কবিতার কাজগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে। এতে প্রায় ২৭,০০০ লাইনের ফার্সী কবিতা রয়েছে।
  2. রুমির আরেকটি প্রধান কাজ হচ্ছে “দেওয়ান-এ-কবির”(“প্রধান কাজ”) বা “দেওয়ান-এ শামস তাবরিজী”(শামস তাবরিজী এর কাজ); دیوان شمس تبریزی), যেটি নামকরণ করা হয় রুমির শিক্ষক শামস তাবরিজীর নামে। এছাড়া এতে ৩৫০০০ ফার্সী দ্বিপদী এবং ২০০০ ফার্সী শ্লোক আছে, এতে ৯০টি গজল এবং ১৯টি শ্লোক আছে আরবি ভাষায়, এছাড়া প্রায় চব্বিশটি দ্বিপদী তুর্কি ভাষায় এবং ১৪টি দ্বিপদী গ্রীক ভাষায়।

গদ্য

  1. ফি মা ফি ( এর মধ্যে যা আছে তাই আছে ফার্সীঃ فیه ما فیه) এটি একাত্তরটি আলোচনা এবং বক্তৃতার সংগ্রহ যেটি রুমি তার ছাত্রদের দিয়েছিলেন। এটি প্রণীত হয়েছিল রুমির ছাত্রদের টীকা থেকে তাই রুমি এই বইয়ের সরাসরি লেখক নন। এর ফার্সি থেকে ইংরেজি একটি অনুবাদ প্রথম প্রকাশ করেন এজে আরেবেরি “ডিসকোর্স অব রুমি” নামে ১৯৭২ সালে, দ্বিতীয় অনুবাদ বের করেন হুইলার থাকসন “সাইন অব আনসিন” নামে ১৯৯৪ সালে। ফি মা ফির রচনার ধরন ছিল চলিত ভাষায় এবং এটি ছিল মধ্যভিত্ত পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য এবং বাস্তবধর্মী শব্দের অভাব ছিল।
  2. মজলিস-এ সভা (সাতটি সভা, ফার্সি: مجالس سبعه) এর মধ্যে সাতটি ফার্সি ধর্মাপদেশ বা বক্তৃতা ছিল যেটি সাতটি ভিন্ন সমাবেশে এ দেয়া হয়েছিল। এই ধর্মাপদেশগুলো ব্যাখ্যা করে কোরআন এবং হাদীসের গভীর অর্থ। এতে আরো বিভিন্ন কবির কবিতা থেকে উক্তি রয়েছে যার মধ্যে আছে সানাই, আত্তার এবং আরো অনেক কবি ও রুমি নিজে। আফলাকি বর্ণনা করেন, শামস এ-তাবরিজী এর পর, রুমি এই ধর্মাপদেশগুলো দেন বিশিষ্টদের অনুরোধে বিশেষ করে সালাহ উদ্দিন জারকুভ। ফার্সি এর ধরন একদম সাধারণ কিন্তু আরবী উক্তি এবং ইতিহাসের জ্ঞান ও হাদীসসমূহ প্রদর্শন করে ইসলামী বিজ্ঞানের প্রতি রুমির জ্ঞানকে।
  3. মাকাতিব (চিঠিসমূহ , ফার্সি: مکاتیب) এই মধ্যে রুমির চিঠি ফার্সিতে যেগুলো তিনি তার ছাত্রদের, পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিবর্গ এবং অন্যান্য প্রভাবশালীদের কাছে দিয়েছিলেন। চিঠিগুলো সাক্ষ্য দেয় যে রুমি বেশ ব্যাস্ত ছিলেন তার পরিবারে সদস্যদের সাহায্যে এবং তদারিক করেছেন তার আশে পাশে বেড়ে উঠা শিষ্যদের। তার পূর্বের দুটি কাজের সাথে এটি অসদৃশ, চিঠিগুলো সজ্ঞানে বাস্তবধর্মী এবং পত্রসম্বন্ধীয়, যেগুলো সাধারণত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ, কূটনীতিবিদ এবং রাজাদের কাছে লেখা।

মৌলভী সুফি ক্রম প্রতিষ্ঠা করেছে রুমির শিষ্যরা ১২৭৩ সালে তার মৃত্যুর পর। তার প্রথম সফলকারী এই ক্রমের ছিলেন “হুসাম চালাবি” নিজে, রুমির ছোট এবং একমাত্র ছেলে সুলতান ওয়ালাদ(মৃত্যু ১৩১২সালে) এর মৃত্যুর পর যিনি “মসনবী রবনামা” বইয়ের জন্য পরিচিত এবং তাকে এই ক্রমের প্রধান করা হয়। তখন থেকে এই ক্রমের নেতৃত্ব কোনিয়ার রুমির পরিবারের মধ্যে রাখা হয় অবিচ্ছেদ্ধ ভাবে। মৌলভী সুফিরা ঘূর্ণায়মান দরবেশ নামে পরিচিত, যারা সামার মাধ্যমে জিকির করে। রুমির সময়ে(“মানকিবুল আরেফিন” কর্তৃক সত্যায়িত) তার শিষ্যরা জমা হতেন সুরেলার জন্য এবং অনুশীলন করত। ঐতিহ্যমতে রুমি নিজে একজন গুরুত্বপূর্ণ সুরকার ছিলেন যিনি রভাব বাজিয়েছেন, যদিও তার প্রিয় বাদ্যযন্ত্র ছিল বাঁশি। সামার সময় যে সুর সহচর হয় তা হচ্ছে “মসনবী” এবং “দেওয়ান-এ কবির” এর কবিতা বা সুলতান ওয়ালাদের কবিতা। উসমানীয় সম্রাজ্যের সময় মৌলভী ক্রম সু-প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং ক্রমের অনেক সদস্যরাই বিভিন্ন সরকারী পদে খেলাফতের সময় দায়িত্ব পালন করেন। মৌলভী ক্রমের কেন্দ্র হচ্ছে কোনিয়ায়। সেখানে একটি মৌলভী আশ্রমও আছে(درگاه, দরগাহ) ইস্তানবুলে গালাতা টাওয়ারের পাশে যেখানে সামা সম্পাদন করা হয় এবং এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। মৌলভী ক্রম সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে আমন্ত্রণ করেঃ

উসমানীয় সম্রাজ্যের সময় মৌলভী ক্রম থেকে উদ্ভূত হয় উল্লেখযোগ্য কবি এবং শিল্পীর যার মধ্যে আছে শেখ গালিব, আনকারার ইসমাইল রুশি দেদে, ইসরার দেদে, হালেত ইফান্দী, এবং গাভসী দেদে, যাদেরকে ইস্তানবুলের গালাতা মৌলভী খানায় সমাহিত করা হয়। সুর, বিশেষ করে বাঁশি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মৌলভী ক্রমে। আধুনিক ভিত্তির সাথে, ধর্মনিরপেক্ষ তুর্কি প্রজাতন্ত্রতে মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক জনগণের নীতি থেকে ধর্ম সরিয়ে ফেলেন এবং এটিকে সীমাবদ্ধ করেন ব্যক্তিগত ইচ্ছা, আচরণ এবং বিশ্বাসের মধ্যে। ১৯২৫ সালের ডিসেম্বরের ১৩ তারিখে একটি আইন চালু হয় যেটি সকল খানকা(দরবেশদের থাকার জায়গা) এবং যাওয়াইস(প্রধান দরবেশের থাকার জায়গা)বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শ্রদ্ধার জন্য একটি কেন্দ্র গড়া হয় যেখানে “জিয়ারতের” জন্য যাওয়া হয়। শুধুমাত্র ইস্তানবুলেই ছিল ২৫০টিরও বেশি “টেক্কে” এবং ছোট ছোট কেন্দ্র ছিল বিভিন্ন সমিতির জমায়েতের জন্য। এই আইনটি সুফি ক্রম ভেঙ্গে ফেলে এবং রহস্যময় বা দুর্বোধ্য নাম, উপাধি এবং উপাধি সংক্রান্ত পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়, ক্রমের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়, এবং তাদের উৎসব ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। আইনটিতে শাস্তির বিধানও রাখা হয় যদি কেউ ক্রমটি পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। দুই বছর পর, ১৯২৭ সালে, মাওলানা জাদুঘর নামে একটি জাদুঘর খোলার অনুমতি দেয়া হয় কোনিয়ায়।

আসো, আসো তুমি যেই হউনা কেন
মুসাফির, নামাজি, সন্যাসী
কিছুই ব্যাপার না।
আমাদের এই ক্যারাভান নিরাশার নয়,
আসো যদিও তোমার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হয়েছে হাজারবার
আসো, আবারো, আসো আসো।

৯৫০ দশকে, তুরস্ক সরকার কোনিয়ায় প্রতি বছর একবার ঘূর্ণয়মান দরবেশ পালন করার অনুমতি দেয়। মাওলানা উৎসব প্রতি বছর ডিসেম্বরের দুই সপ্তাহব্যাপী পালিত হয়, এটি তুঙ্গী পায় ১৭ই ডিসেম্বর, মাওলানার উরসে(রুমির মৃত্যু বার্ষিকী), যেটিকে বলা হয় “শবে উরস” (شب عروس) (ফার্সি অর্থ “তরুণ রাত্রি”), যে রাতে রুমি সৃষ্টিকর্তা কাছে পৌছান। ১৯৭৪ সালে, ঘূর্ণয়মান দরবেশদের অনুমতি দেয়া হয় প্রথমবারের পশ্চিমে ভ্রমণ করার। ২০০৫ সালে ইউনেস্কো ঘোষণা করে তুরস্কের “মৌলভী সামা উৎসব” “মৌখিক এবং স্পর্শাতীত সেরা শিল্পকর্মের মানুষের ঐতিহ্য”।

এডওয়ার্ড জি. ব্রাউনির মতে তিনজন সবচেয়ে নিগূঢ় ফার্সি কবি হচ্ছেন রুমি, সানাই এবং আত্তার যারা ছিলেন সুন্নি মুসলমান এবং তাদের কবিতা প্রথম দুই খলিফা আবু বকর এবং উমর ইবনুল খাত্তাব এর প্রচুর প্রশংসা করা হয়। আন্নেমারি সিমেল এর মতে, শিয়া কবিদের প্রবণতার মধ্যে অগ্রবর্তী হচ্ছেন নিগূঢ় কবি রুমি এবং আত্তার তাদের নিজস্ব পদে, ১৫০১ সালে সাফাভি সম্রাজ্যের সময় দ্বাদশবাদি শিয়া প্রদেশের ধর্ম হিসাবে পরিচিতির লাভের পরেই শক্তিশালী হয়ে উঠেন।

“মাওলানা রুমি রিভিউ” (আইএসএসএন ২০৪২-৩৩৫৭) বার্ষিকভাবে প্রকাশিত হয় এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি এবং ইরানি চর্চা কেন্দ্র থেকে সাইপ্রাসের নিকোশিয়ার রুমি ইনস্টিটিউট এবং ক্যামব্রিজের আর্কেটাইপ বুকস এর সহযোগিতায়। প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে এবং এরপর থেকে প্রতি বছর এটি প্রকাশ করা হয়। সাময়িকীটির প্রধান সম্পাদক লিউনার্দ লিওশিন এর মতেঃ “গুরুত্ব এবং ফলাফল এ দান্তে, শেকসপিয়র এবং মিল্টন এর যদিও কয়েকজন মুসলিম কবি সহজ প্রতিদ্ধন্ধী, পশ্চিমে তারা সাহিত্য খ্যাতি উপভোগ করে কারণ আরবি এবং ফার্সি দার্শনিক, লেখক এবং কবিদের নগণ্য, তুচ্ছ এবং রুচিহীন হিসাবে দেখে ওয়েস্টার্ন ক্যাননের মহা আখ্যানের কাছে। মাওলানা রুমি রিভিউ এর লক্ষ হচ্ছে বিশ্ব সাহিত্যে এসব তাচ্ছিল্যপূর্ণতার অবসান ঘটানো, যেটি পশ্চিমা সাহিত্যের ভুল কল্পনার চেয়েও আরও গভীর।”
Add comment

ইতিহাস এর নতুন প্রবন্ধ

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন