বাংলা তথ্য ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে আমাদের এই প্রয়াস। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যর তথ্য দিতে চাইলে ইমেইল kushtia.contact@gmail.com অথবা ফোন করুনঃ- ০১৯৭৮ ৩৩ ৪২ ৩৩

Select your language

৭ই ডিসেম্বর আমলা সদরপুর মুক্ত দিবস
৭ই ডিসেম্বর আমলা সদরপুর মুক্ত দিবস

৭ই ডিসেম্বর। ৭১’র আজকের এই দিনে কুষ্টিয়ার মিরপুরের ঐতিহাসিক আমলা সদরপুর পাকহানাদার মুক্ত দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের অর্জন হিসাবে মুক্ত হয় এই জনপদ। ১৯৭১ সালের এ দিনে বহু ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে আমলা সদরপুর পাকহানাদার মুক্ত হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বৃহত্তর কুষ্টিয়ার মধ্যে যুদ্ধে নেতৃত্ব দান করেন এই এলাকার বীর সন্তানেরা। বিএলএফ প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা মারফত আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। নিজেদের জীবন বাজি রেখে তারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছিনিয়ে আনে বিজয়। এই দিনটির কথা মনে করে আজো গৌরবের সেই স্মৃতি বুকে নিয়ে চলছে। তারা চান নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে।

বীর মুক্তযোদ্ধা লুৎফর রহমান জানানঃ-

কুষ্টিয়া জেলার পাক বাহিনীর প্রধান এ্যাকশন ক্যাম্প গঠিত হয় আমলায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাক হানাদার বাহিনীরা এখানে এসে থাকতো। বর্তমানে যেটা আমলা সরকারী কলেজ সেখানে ছিলো পাক হানাদার বাহীনিদের ঘাটি। বীর মুক্তিযোদ্ধা মারফত আলীর নেতৃত্বে এই অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের বিভিন্ন প্রশিক্ষন নেয়। তিনি আরো জানান, ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর যশোরের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কারনে সেখানে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীরা তাদের অস্ত্র, গোলাবারুদ, ট্যাংক, রকেট লাঞ্চারসহ ভারী ভারী অস্ত্র নিয়ে সেখান থেকে ঝিনাইদহ দিয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আবুরী-মাগুড়া এলাকা দিয়ে আমলা হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে আসে।

১৯৭১ সালের ০৬ই ডিসেম্বর মারফত আলীর নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত হয় আমরা চারিদিক থেকে আমলা হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমন করবো। আমাদের এ আক্রমনের খবর টের পেয়ে যায় আমলা ক্যাম্পে অবস্থারনত হানাদার বাহিনীরা। আমরা সে সময় মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় ১৭টি ভাগে ভাগ হয়। কমান্ডার আ.স.ম মুসা (চাঁদ), নুরুজ্জামান খাঁন, আফতাব উদ্দিন খাঁন, গেরিলা কমান্ডার আব্দুর রশিদ ফুরকান, আশকর আলী, রাহাত আলী, আফসার আলী, সাদেক আলীসহ আমরা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে যায়। ৭ ডিসেম্বর আমরা একযোগে চারিদিক থেকে আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেই। তবে এই খবর পেয়ে হানাদার বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত আমলার সাগরখালী ব্রীজটি ভেঙ্গে দেয় এবং আমলা থেকে পালিয়ে কুষ্টিয়ায় চলে যায়। সেই সাথে আমলায় মুক্তিযোদ্ধাদের চুড়ান্ত বিজয় লাভ করে।

বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ এবং মুক্তিকামী সাধারন মানুষ উল্লাস করে। আমলায় উদীত হয় স্বাধীনতার সূর্য। গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ ফুরকান বলেন, মহান এই মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে স্বরণীয় ঘটনা হলো আমরা যে হাতদিয়ে পাকিস্থানীদের হত্যা করতাম আবার সেই হাত দিয়েই আমাদের সহযোগীদের সেবা করতাম। দেখেছি হাজারো মানুষকে মরতে। পেরেছি শক্রদের মারতে। দেখেছি মেয়েদের আহাজারি। তারা আমার আপন কেউ ছিলো না, তবে সেদিন মনে হয়েছিলো এরা সকলেই আমাদের আপনজন। এমন নির্মমভাবে মা-বোনদের হত্যা করা হয়েছিলো তা দেখে আমাদের যুদ্ধের অনুপ্রেরনা আরো বেড়ে গিয়েছিলো। আমাদের আত্মবিশ্বাস আর সাধারন মানুষের কষ্টের আহাজারি আমাদের দেশকে স্বাধীন করতে সাহায্য করেছিলো। সেদিনের সেই ভয়াবহ ঘটনার কথা আমার আজো কানে বাজে। মা-বোনদের আহাজারি, শিশুর কান্না আজো আমার মনে পড়ে।

আমি মনে করি এই স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে সেদিনের শক্র রাজাকার ও তাদের সহযোগিদের বিচার করে তাদের ফাঁসিতে ঝুলানো হোক। এতে সেদিনের শহীদদের আত্মার শান্তি পাবে। এদেশ একেবারে রাজাকার মুক্ত হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আশকর আলী ও রাহাত আলী আক্ষেপ করে বলেন, আমলা হানাদার মুক্ত হওয়ার ৪৭ বছর পার হয়ে গেলেও এই দিবসটি পালিত হয় না।

এই এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব গাঁথার কথা নতুন প্রজন্মকে জানানো কোন মাধ্যম নেই। কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস, মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর, খোকসা, কুমারখালী হানাদার মুক্ত দিবস পালন করি। অনুরুপ আমরা আমলা মুক্ত দিবস পালন করার দাবী জানায়। সেই সাথে আমলায় মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ফলকের দাবী জানায়। বীর মুক্তিযোদ্ধা মহাম্মদ আলী বলেন, আমলা সদরপুরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনের পাশাপাশি আমলার বদ্ধভূমি সংরক্ষনের দাবী জানায়। আমলা সদরপুর আঞ্চলিক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের উদ্যোগে আজ ৭ই ডিসেম্বর শুক্রবার ২০১৮ইং দিনব্যাপি বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। সকালে বিজয় র‌্যালি, শহীদ মারফত আলীর মাজারে পুস্পস্তবক অর্পন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

তথ্য কৃতজ্ঞতাঃ- কাঞ্চন কুমার, আন্দোলনের বাজার।

Add comment

কুষ্টিয়া সম্পর্কিত তথ্য

সর্বশেষ পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

তথ্য সম্পর্কে খবর

আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন এবং আপডেট থাকুন
We use cookies

We use cookies on our website. Some of them are essential for the operation of the site, while others help us to improve this site and the user experience (tracking cookies). You can decide for yourself whether you want to allow cookies or not. Please note that if you reject them, you may not be able to use all the functionalities of the site.